রোহিঙ্গা প্রশ্নে সরকার ‘সুবিধাবাদী’ ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 07 Sep 2017, 08:19 PM
পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনাও করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, “মিয়ানমারকে বাধ্য করা উচিৎ তাদের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা এবং এই মানুষগুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
“সেখানে আমাদের সরকার খুব সুবিধাবাদী ভূমিকা পালন করছে। নির্যাতিত অসহায় মানুষগুলোকে তারা ঠিকমতো আসতে তো দিচ্ছেই না, বিজিবি সদস্যরা তাদের ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা গত ২৫ অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশ পানে ছুটছে।
কয়েক দশক ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশের বর্তমান সরকার নতুন করে শরণার্থী নিতে অনীহ হলেও এরই মধ্যে মিয়ানমারের দেড় লক্ষাধিক মুসলিম নাগরিক ঢুকে পড়েছে।
ফখরুল বলেন, “আমরা সরকারকে বলতে চাই, এখানে সুবিধাবাদী কোনো অবস্থান না নিয়ে মানুষের পক্ষে, মানবতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করুন।”
কূটনীতিক চাপ দিয়ে এই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে সরকারকে পরামর্শ দেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফখরুল।
দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুর এখনই সমাধান চাই। তারা হিন্দু না মুসলমান- ওই কথা আমরা জিজ্ঞাসা করতে চাই না। তারা মানুষ, তাদের মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সমস্ত অধিকার রয়েছে।
“তাদের বাচ্চাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, পায়ে পিষে মারা হচ্ছে, তাদের ঘরের পর ঘর, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আচরণের সঙ্গে একাত্তরে পাকিস্তানের নৃশংসতার তুলনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিৎ, মানুষের বিবেক জাগ্রত হওয়া উচিৎ।”
রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্রবার বিএনপি সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে। ঢাকায় কর্মসূচি পালন হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে।
তাদের এই কর্মসূচি নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “তারা সভা-সমাবেশ ডাক দিলে নিজেরাই নিজেদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, দায়টা চাপায় আওয়ামী লীগের উপর, সরকারের উপর। রোহিঙ্গাদের মানবিক দিক দেখতে গিয়ে নিজেরাই সংঘর্ষে লিপ্ত হয় কি না, সেটা নিয়ে আমি একটু চিন্তিত।”
এর প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “তার (ওবায়দুল কাদের) এই কথাটা কিন্তু অশনি সংকেত। এই ধরনের কথা বলার অর্থ হচ্ছে, তাদের মাথার মধ্যে কিছু আছে। তারা অন্য কিছু পরিকল্পনা দেখছে।”
হানাহানরি জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে তিনি বলেন, “আজকের খবরের কাগজ খুলে দেখুন, নোয়াখালীতে মহিলা আওয়ামী লীগের এমপির বাড়িতে গোলাগুলি হয়েছে নিজেদের মধ্যে।
“প্রতিদিন দেখবেন তারা নিজেরা মারামারি করছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে তারা নিজেরা মারামারি করে, গোলাগুলি করে কতজন মানুষ নিহত করেছেন, তার হিসাব আমি বলতে পারব না।”
“শুধু তাই নয়, দেখবেন ধর্ষণের নেতৃত্বে তারা, হত্যার নেতৃত্বে তারা, খুনের নেতৃত্বে তারা, চোরাচালানির নেতৃত্বে তারা, দুর্নীতির নেতৃত্বে তারা। এই যে পানামা স্ক্যান্ডাল পত্রিকায় বেরুল, তার মধ্যে ৯০ ভাগ হচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন,” বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন ফখরুল।
জিয়াউর রহমান আমলের পর খালেদা জিয়ার সরকারেও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী সাইফুর ২০০৯ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
সাইফুর রহমানের বড় ছেলে নাসের রহমানের সভাপতিত্বে এবং কাইয়ুম চৌধুরীর পরিচালনায় স্মরণ সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউস, কেন্দ্রীয় নেতা আবেদ রাজা, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক বক্তব্য রাখেন।