বঙ্গবন্ধুর ছবি কার্ডে ছাপানো নিয়ে ‘অতি উৎসাহী হয়ে’ ইউএনওর বিরুদ্ধে মামলা করা বরিশালের সেই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
Published : 21 Jul 2017, 07:49 PM
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিস দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “অহেতুক, অতি উৎসাহী হয়ে ইউএনওর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।”
সাজুর করা মামলায় বরগুনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমানের কয়েক ঘণ্টা হাজতবাস ও হেনস্তা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্ত এল।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকাণ্ড সম্পাদন করায়’ অ্যাডভোকেট ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত দলের কার্যনির্বাহী সংসদে গৃহীত হয়।
আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কারাদেশ ও কারণ দর্শাও নোটিস শিগগিরই বরিশালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ১৫ দিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।”
তারিক সালমান বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপিয়েছিলেন’ অভিযোগ করে গত ৭ জুন মামলা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়েদ উল্লাহ সাজু।
ওই মামলায় সমন জারির প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত দিন বুধবার আদালতে হাজির হন তারিক সালমান। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. আলী হোসাইন। একই বিচারক দুই ঘণ্টা পর ইউএনও তারিকের জামিন মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে তারিক সালমানের ভাষ্য, “স্বাধীনতা দিবসে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এক শিশুর আঁকা জাতির জনকের ছবি ব্যবহার করে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ছাপা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি শিশুদের ভালবাসা সৃষ্টি এবং ছবি আঁকার প্রতি তাদের আগ্রহী করে তোলা।”
সরকারি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেখানে বলা হয়, “নজিরবিহীন ও মানহানিকর আদেশ প্রদান, আইনবহির্ভূত পুলিশি কার্যক্রম এবং তথাকথিত নামধারী স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কঠোর আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।”
তারিক সালমানকে গ্রেপ্তারের ওই ঘটনায় ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত বিস্মিত হয়েছেন’ বলে তার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলাকে জানান।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বললেন, ক্লাস ফাইভের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এই অফিসার সুন্দর একটি কাজ করেছেন। এবং সেখানে যে ছবিটি আঁকা হয়েছে, সেটি আমার সামনেই আছে, আপনারা দেখতে পারেন। এবং এই ছবিটিতে বিকৃত করার মতো কিছু করা হয়নি। এটি রীতিমত পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। এই অফিসারটি রীতিমত পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। আর সেখানে উল্টো আমরা তার সঙ্গে এই করেছি, এই বলে প্রধানমন্ত্রী তিরস্কার করলেন। বললেন, এটি রীতিমত নিন্দনীয়।”