ক্ষমতায় গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে যে পর্যায়ে নেওয়ার পরিকল্পনা খালেদা জিয়া হাজির করেছেন, তাতে অনেক সীমাবদ্ধতা খুঁজে পাচ্ছেন বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
Published : 14 May 2017, 09:26 PM
রোববার এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি ‘ভিশন ২০৩০’ এর চুলচেরা বিশ্লেষণের পাশাপাশি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে নারী সদস্য না থাকা নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
জাফরুল্লাহ বলেন, “আমি আশাহত হয়েছি, বিএনপির স্ট্যাডিং কমিটিতে উনি (খালেদা) ছাড়া কোনো মহিলা সদস্য নেই। এটা ভালো না। কাউকে যদি খুঁজে না পায়, সেলিমা রহমানকে (ভাইস চেয়ারম্যান) তো নেওয়া যেত।”
নিজে ‘পরিবারতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে হলেও নারী সদস্য হিসেবে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকেও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে মেনে নিতে আপত্তি নেই জাফরুল্লাহর।
“আমি পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে, তবে তারেকের ওয়াইফকে আনলেও হত। আমরা ধারণা বিএনপিতে অনেক মহিলা আছে, তাতে এটার শ্রীবৃদ্ধি হত। আমি বলতে চাই, দলে নারী নেত্রীর সংখ্যা এমন হলে বিএনপির ভবিষ্যৎ নাই। যদি নারীদের বেশি করে না আনতে পারেন, তাহলে আগামী ইলেকশনে বিএনপির জেতার কোনো সম্ভাবনা নাই।”
বিএনপির ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে খালেদা জিয়াই একমাত্র নারী সদস্য। ভাইস চেয়ারম্যান ২৯ জনের মধ্যে সেলিমা রহমান একমাত্র নারী।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘সেন্টার ফর ন্যাশনাল অ্যান্ড রিজিওনাল রিসার্চ স্টাডিজ-সিএনআরআরএস’ এর উদ্যোগে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ শীর্ষক এই গোলটেবিল হয়।
গত ১০ মে খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ তুলে ধরেন। ক্ষমতায় গেলে তারা কী কী করবেন, তা সবিস্তারে জানান তিনি।
রোববারই একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “আমি আপনাদের অনুরোধ করব, আমাদের ভিশনটা সবাই পড়ুন। দেখবেন যে, এমন কোনো ক্ষেত্র নাই, যে ক্ষেত্রে আমরা আমাদের বক্তব্য উত্থাপন করি নাই।”
তবে জাফরুল্লাহ বলেন, “বিএনপির পরিষ্কারভাবে বলেছে, তারা রামপালে ভারতীয় কয়লা দিয়ে দেশকে কালো করতে চায় না। অথচ ভিশনে রামপাল শব্দটা পর্যন্ত নাই। এত বড় ভুল কীভাবে করলেন, জানি না।”
স্বাস্থ্য বিষয়ক ‘ভিশনে’ ধূমপান বন্ধের কোনো বক্তব্য না দেখেও হতাশ তিনি।
শ্রমিকদের রেশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ‘ভিশনে’ থাকা উচিৎ ছিল বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ।
“কৃষক শ্রমিক, গার্মেন্টস কর্মী, নারী শ্রমিক, শিল্পের প্রাণ এই শ্রমিকদের কথা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। আমরা কেন বলতে পারলাম না একজন শ্রমিকের বেতন হবে ১২ হাজার, ১৪ হাজার অথবা ১৫ হাজার টাকা। দরিদ্র মানুষকে রেশন দেওয়া হবে। যারা সুখে থাকেন সেই সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রেশন পান, আমার শ্রমিকরা একইভাবে রেশন পাবেন- এই কথা থাকলে আমি খুশি হতাম।”
র্যাবের বিষয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, “উনি (খালেদা জিয়া) অতীতে বিভিন্ন বক্তৃতায় বলেছেন, র্যাবকে বিলুপ্ত করা হবে। ৪১ পৃষ্ঠার ‘ভিশন-২০৩০’ বইতে কোথাও র্যাব বিলুপ্তির কথা নাই।”
“একইভাবে কোথাও লেখা হয় নাই ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, ভারতীয় অত্যাচার, ‘র’ নির্ধারিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ‘র’ বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেন, তা বলা হয়নি। তবে সাহস করে বলেছেন, বিদেশে আমাদের কোনো প্রভু নেই, বন্ধু আছে।”
শাহবাগের গণজাগরণ আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক জাফরুল্লাহ বলেন, “আমাদের নবীনদের গণজাগরণ মঞ্চ আর কিছু করুক আর নাই করুক, তারা একটা জিনিস বুঝিয়েছে। শাহরিয়ার কবির-মুনতাসীর মামুন তারা মুক্তিযুদ্ধে যাননি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ভালো বিক্রি করেছেন ভারতীয় সহায়তায়।
“আজকে মুক্তিযুদ্ধে তারা বড় চুরিটা করেছে ভারতকে দিয়ে। ভারত এটা সম্পূর্ণভাবে চুরি করেছে। আমরা এতটাই মোহমুন্ধ হয়েছি যে, ১৬৬১ জন ভারতীয় সৈনিক মারা গেছে, তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা উপটৌকন দিয়েছি।”
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কত মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েছেন, তার কোনো তালিকা এতদিনেও না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।