সাভারে ট্যানারি শ্রমিকদের আবাসনের দাবি সিপিবির

সাভারে বিসিকের চামড়া শিল্প নগরীতে শ্রমিকদের বাসস্থান, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2017, 05:19 PM
Updated : 25 April 2017, 05:19 PM

ট্যানারি শিল্পকে ঘিরে পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী সর্বোচ্চ আদালতকেও এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ৮ এপ্রিল হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ইউটিলিটি সার্ভিস বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। সাভারে বিসিকের চামড়া শিল্প নগরীতে ট্যানারিগুলোকে দ্রুত যেতে বাধ্য করতে এই পদক্ষেপ।

আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া হাজারীবাগের অর্ধশতাব্দীকালের ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির প্রতি সংহতি জানাতে মঙ্গলবার সেখানে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করে সিপিবি ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণ-পশ্চিম জোন।

সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পের মেশিনগুলো সাভারে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হল। মেশিন স্থানান্তরের পাশাপাশি এর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের স্থানান্তরের বিষয়টিতেও আদালতের বলা উচিত ছিল বলে আমি সবিনয় জানাতে চাই।

“কারখানার মেশিনের যত্ন নেওয়া হচ্ছে কিন্তু মেশিনের পেছনের মানুষগুলোর যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। অথচ আল্লাহ-তালাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব ঘোষণা করেছেন। মেশিনের যত্ন নেবেন, মানুষের যত্ন নেবেন না?”

সরকারের পাশাপাশি মালিকদেরও শ্রমিক স্বার্থ রক্ষায় সজাগ হওয়ার আহ্বান জানান সিপিবি সভাপতি।

তিনি বলেন, “শ্রমিক মালিকদের পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষায় যে চুক্তি হয়েছে মালিকদের সেই চুক্তির বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে মালিকরা মুনাফেক হয়ে যাবেন। ওয়াদা অনুযায়ী চুক্তির বাস্তবায়ন করুন। অন্যথায় ইনসাফ কায়েম হবে না।”

সমাবেশে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, “সরকার সাভারে দুইশ একর জমিতে ১৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দিয়েছে। অথচ এই খাতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করা ৩০ হাজার শ্রমিকের আবাসনের ব্যবস্থা করে নাই।

“আমরা এই বাসস্থান, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে বহু বছর ধরে বলে আসছি। কিন্তু বিসিকের অধীনে থাকা ওই শিল্প নগরীতে শ্রমিকদের জন্য কিছুই রাখা হয়নি।”

তিনি বলেন, “সরকার পরিবেশসম্মত আধুনিক শিল্পাঞ্চল স্থাপন করেছে। অথচ সেখানে শ্রমিকদের জন্য কিছুই রাখা হয়নি। যে শিল্পাঞ্চলে এর মূল চালিকা শক্তি শ্রমিকের জন্য কিছু নেই, সেটা কীভাবে আধুনিক শিল্পাঞ্চল হয়?”

সম্প্রতি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসল নষ্ট হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের দুষছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

তিনি বলেন, “ঠিকাদারদের দুর্নীতির কারণে হাওর এলাকায় দুর্যোগ নেমে এসেছে। তারা দুর্বল করে বাঁধ নির্মাণ করার কারণে তা ভেঙে গেছে। এত বড় প্রলয় ঘটে গেল অথচ সরকারের সচিবসহ সবাই নির্বিকার। জনপ্রতিনিধিরাও টাকা আর মুনাফার পেছনে ঘুরতেছে।”

সরকারের সমালোচনা করে সিপিবির ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি সাজিদুল হক রুবেল বলেন, “হাওরে ড্যাম বানানোর টাকা মেরে দেওয়া হয়েছে। এখন সেই ড্যাম ভেঙে ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। বস্তিগুলোতে একের পর এক আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফুটপাতের হকারদের বিকল্প পুনর্বাসন না করেই তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই নিস্পেষিত হচ্ছে গরিব ও শ্রমিক শ্রেণি।”

সিপিবি নেতা দীলিপ ব্যাপারীর সভাপতিত্বে সভায় শ্রমিক নেতা আহসান হাবীব লাবলুসহ ট্যানারি শ্রমিক নেতা ও স্থানীয় সিপিবি নেতারা বক্তব্য রাখেন।