বিএনপি সার্চ কমিটিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে রাখার প্রস্তাব করেছে বলে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যাকে ‘সর্বেব মিথ্যা’ বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 22 Jan 2017, 08:49 PM
বিএনপি যদি এই প্রস্তাব করেও থাকে তা কীভাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছে এলো সে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তাহলে কি রাষ্ট্রপতি সাহেবের সঙ্গে ওবায়দুল কাদের ও আওয়ামী লীগের একটা গোপন যোগসাজশ আছে?
“তাহলে কি রাষ্ট্রপতি সাহেব তাদের সাথে আলোচনা করে এখন সার্চ কমিটি করবেন?”
এ রকম হলে সার্চ কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “এই ধরনের সার্চ কমিটি এদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগের বশংবদ কোনো নির্বাচন কমিশন বা সার্চ কমিটি যদি দেওয়া হয়, জনগণ কখনোই তা মেনে নেবে না।”
রোববার সকালে এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে সার্চ কমিটিতে রাখতে নাম প্রস্তাব করেছেন।
“সেই হাসান সাহেব কি বিএনপির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন না? তাহলে কোনটা পক্ষ, কোনটা নিরপেক্ষ?”
বিকালে ডিআরইউয়ে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের এক আলোচনা সভায় কাদেরের ওই বক্তব্যে র প্রতিক্রিয়া জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যে কথা বলেছেন, যে রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনাকালে আমরা সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান সাহেবের কথা বলে এসেছি, সার্চ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে। এটা সর্বেব মিথ্যা।”
ওবায়দুল কাদেরকে ওই বক্তব্যে প্রত্যাণহারের দাবি জানান তিনি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়েই গত ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে এ সংলাপ শুরু হয়। সার্চ কমিটি গঠন ও ইসি নিয়োগের বিষয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দেয় দলটি। পরে আওয়ামী লীগসহ অন্যা ন্যন দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন রাষ্ট্রপতি।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভায় ফখরুল তরুণদের অন্যািন্যে বইয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “আজকে নতুন প্রজন্মকে কয়েকটা বই পড়ার অনুরোধ করব। ড. এম এ আজিজ সাহেবের লেখা স্পেইন ১৯৭১, এতে অনেক অজানা কথা পাবেন। আজকে আওয়ামী লীগের নেতারা এতো এতো কথা বলে, কত যে মিথ্যাচার, কত যে অসার সেই বইটা পড়লে জানতে পারবেন।
“মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন-একে খন্দকার, উইং কমান্ডার মিজান ও মাঈদুল হাসান সাহেবের লেখা বই, মূলধারা একাত্তর এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ। এসব বই পড়ুন, তাহলে বোঝা যাবে যে, আসল ব্যাপারটা কী? এছাড়া ভারতের একজন গবেষক রাঘবন এর লেখা ‘লিবারেশন ওয়ার অব বাংলাদেশ’। এটা তথ্যপূর্ণ একটা বই, যে বইতে সত্য অনেকটা বেরিয়ে এসেছে।”
জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে র সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আজকে জিয়াউর রহমানকে বলা হয় তিনি নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। উনি খলনায়ক, উনি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সাথে জড়িত-এসব মিথ্যা কথা বলে তাকে একটা খলনায়কে পরিণত করার চেষ্টা। মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদের দর্শনকে নিশ্চিহ্ন করা। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাঠ্যিপুস্তক থেকে শুরু করে টেলিভিশনের প্রোগ্রাম, পত্রিকা– সব জায়গায় একটা সুপরিকল্পিত ক্যাম্পেইন চলছে।”
তবে এটা সম্ভব হবে না মন্তব্যম করে ফখরুল বলেন, “কারণ এদেশের শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে, জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করে।”
বর্তমানে ‘বাংলাদেশি জাতীয়বাদ’ নিয়ে লেখা কোনো বই ছাপতে দেয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বাধার সৃষ্টি করা হয়, ভয় দেখানো হয়, হুমকি দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমি একুশের বইমেলায় তাদের বই রাখতে দেন না। এটা অ্যা লার্মিং।
“আজকে একুশের বইমেলায় আওয়ামী লীগের চিন্তার বাইরে, মতের বাইরে যদি কোনো কিছু হয়ে থাকে, তা হয়ে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশবিরোধী’, সেটাকে কিছুতেই প্রকাশ করা যাবে না। পাকিস্তানিদের সাথে এদের পার্থক্যটা কোথায়? তারাও তখন কথা বলতে দিত না, এরাও এখন কথা বলতে দেয় না।”
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংবাদিক এরশাদ মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুদ, কবি আবদুল হাই শিকদার, প্রকাশক মোহাম্মদ জহির দীপ্তি, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, ছাত্র দলের সভাপতি রাজীব আহসান বক্তব্য দেন।