আপিলে রায় পাল্টানোর আশায় সাদেক হোসেন খোকা

দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে বলে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে গুলশানের বাড়ি ও জমি এবং নারায়ণগঞ্জের জমি বাজেয়াপ্ত করার পর বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা আশা করছেন, আপিল করলেই এই রায় পাল্টে যাবে।

সুলাইমান নিলয় জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2016, 06:02 PM
Updated : 22 Sept 2016, 06:07 PM

তবে কখন বাংলাদেশে ফিরে তিনি আপিল করবেন, তা খোলসা করতে পারেননি দুই বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম‌্যান।

ঢাকার সাব্কে মেয়র খোকার গুলশানের বাড়ি ও জমি এবং নারায়ণগঞ্জের জমি বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার। এছাড়া গাজীপুর জেলায়ও তার জমি বাজেয়াপ্তের কার্যক্রম চলছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৭২ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের পাঁচ কাঠা জমি এবং তার উপর ছয়তলা ভবন বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

এই সম্পদের মূল্য ২ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা বলে আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার এই সম্পত্তিতে জেলা প্রশাসনের নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আদালতের রায়ে মেসার্স বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে থাকা জমির মধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ২৭ খণ্ড কৃষিজমি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ৩৪ খণ্ড কৃষিজমি রয়েছে। মোট ৬১টি দলিলে ১৩৩.৫৯৫২ একর জমি রয়েছে।

এসব জমির চার মালিকের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশের মালিক খোকার অংশ হিসেবে সাত কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দামের ১০০.১৯৪৬ একর জমি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এছাড়া বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে হাবিব ব্যাংকে জমা করা টাকা থেকে ২৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ টাকা নিয়ে মোট ১০ কোটি পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৫০ একর কৃষি জমি আদালতের আদেশে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে ও হেফাজতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল, কর্ণগোপ ও তেৎলাবো মৌজায় অবস্থিত ওই জমি দখলে নিয়ে লাল পতাকা ও সরকারি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

বাজেয়াপ্তের পর গুলশানের বাড়িতে ঝুলছে নোটিস

গাজীপুরে থাকা সম্পদও বাজেয়াপ্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কালিয়াকৈর উপজেলার কয়েকটি মৌজায় ওই জমি রয়েছে। এসব জমি বাজেয়াপ্ত করার কাজ চলমান রয়েছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর জেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, কালিয়াকৈর ছাড়াও শ্রীপুরসহ একাধিক উপজেলায় খোকার আরও জমি থাকার খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের তদন্ত করে ওই জমি চিহ্নিত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের এসব পদক্ষেপের বিষয়ে নিউ ইয়র্কে থাকা খোকা বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আপিল করলেই রায় পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

সেই পদক্ষেপ কীবাবে নেবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি তো চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছি। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আমি দেশে যেতে পারব না। তাই আপিল করা এবং অন্যান্য যে পথগুলো আছে- সেই সব সুযোগ নেওয়া আপাতত সম্ভব হচ্ছে না।”

এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে খোকা বলেন, “আমি হাই কোর্টের অনুমতি নিয়ে এসেছি। এ কথা আদালতে জানিয়েছি। বিচার চলাকালে আমার আইনজীবীরা আমার ক্যান্সারের চিকিৎসার কথাও আদালতে বলেছেন।

“কিন্তু এরপরও আমার অনুপস্থিতিতে আদালতে একতরফা রায় হয়েছে। এটা রাজনৈতিক হিংসার বহিঃপ্রকাশ।”

এসব সম্পত্তির বিষয়ে খোকা বলেন, “এরশাদের আমলে সায়েদাবাদ-কমলাপুর সড়ক করার সময় আমার একটা বাড়ি অধিগ্রহণ করেছিল সরকার। পরে ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে আবেদন করার পর রাজউক আমাকে এই জায়গা (গুলশানের সম্পত্তি) বরাদ্দ দেয়।

“১৯৯৮ সালে এনসিসি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এই বাড়ির কাজ শুরু করি। কাজ শেষ না হওয়ায় পরে আরও ২৫ লাখ টাকা ঋণ নেই। ২০০১ সালে আমরা সরকারে আসার আগেই এই সব হয়েছে।”

গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে যে জমির কথা বলা হয়েছে, সেই কোম্পানিতে নিজের শেয়ার ২০ ভাগের মতো বলে জানান তিনি।

“এখানে অন্যের সম্পত্তি আমার সম্পত্তি দেখিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এটা কি ঠিক হল?”

চিকিৎসা কোন পর্যায়ে আছে- জানতে চাইলে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমার ক্যান্সার অ্যাডভান্সড স্টেজে, একটি কিডনি ফেলে দিতে হয়। এখনও আমার তিন সপ্তাহ পরপর কেমো নিতে হয়।”

নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে সাদেক হোসেন খোকা (ফাইল ছবি)

খোকার আইনজীবী মহসিন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার মক্কেল দেশে ফিরেই আপিল করবেন।

“চিকিৎসার জন্য বিদেশ থাকায় মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি তিনি। এ কারণেই আদালত থেকে এই রায় এসেছে। অন্যত্থায় একই আদালত থেকেই ভিন্নতর রায় আসতে পারত।”

মামলাকারী দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মামলায় ৬০ দিনের মধ্যে খোকাকে আপিল করতে হত। নির্দিষ্ট সময়ে সেই সুযোগ নেননি খোকা।

“এখন তিনি চাইলে দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করে আপিল করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাকে বিলম্ব মার্জনার আবেদন করতে হবে। বিলম্ব মার্জনার আবেদন মঞ্জুর হলেই তার আপিল শুনানির জন্য আদালতে উঠবে।”

গত বছরের ২০ অক্টোবর সম্পত্তির তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় খোকাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয় আদালত।

রায়ে বলা হয়, আসামি খোকা অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি নয় কোটি ৬৫ লাখ তিন হাজার টাকার সম্পদের ওপর প্রযোজ্য কর ফাঁকি দিয়েছেন।

বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

ছয় বছর পর ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় খোকার বিচার শুরু হয়। তার মাস ছয়েক আগেই তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান।

[এই প্রতিবেদন তৈরি সহায়তা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আইন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক প্রকাশ বিশ্বাস, গাজীপুর প্রতিনিধি আবুল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মুজিবুল হক পলাশ]