এবার ‘আম’ নিয়ে কাড়াকাড়ি

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির দুই পক্ষের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ‘আম’ প্রতীকের দাবি নিষ্পত্তিতে শুনানি করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2016, 11:26 AM
Updated : 8 April 2016, 12:28 PM

নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে আম প্রতীক নিয়ে এনপিপির প্রার্থীরা অংশ নিলেও পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চরম রূপ নেয়।

শেখ শওকত হোসেন নিলু ও ফরিদুজ্জামান ফরহাদের পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার ও নতুন কমিটি ঘোষণার প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘আম’ প্রতীকের দাবি নিয়ে চিঠি দেয় দুই পক্ষ।

প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিবকে বহিষ্কারের জের ধরে বিভক্তি দেখা দেয় এনপিপিতে, যে দলের জন্ম হয়েছিল ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে।

প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব পরে চেয়ারম্যানকেই বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। দাবি ও আপত্তি নিয়ে দুই পক্ষই ইসির শরণ নেওয়ায় শুনানির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কমিশনের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বছরখানেক ধরে এনপিপির কমিটি নিয়ে বিরোধ চলছে। তাদের চিঠিপত্রগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কমিশন দুই কমিটির বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত দেবে। দুই পক্ষকে শিগগিরই ডাকা হবে।”

২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর ‘আম’ প্রতীকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয় ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি। সে সময় নথিতে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ শওকত হোসেন নিলু ও মহাসচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নাম দেওয়া হয়।

২০১৪ সালের ১৬ অগাস্ট চেয়ারম্যান নিলু বহিষ্কার করেন মহাসচিব ফরহাদকে; ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেন আব্দুল হাই মণ্ডলকে।

পরে ১৮ জুলাই চেয়ারম্যান নিলুর সভাপতিত্বে এনপিপি প্রেসিডিয়াম সভা করে। ওই বছর ২২ অক্টোবর জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে নিলু-হাই কমিটি অনুমোদন পায়। পরে সেই কমিটির তালিকা ইসিতে পাঠানো হয়।

এদিকে প্রথম মহাসচিব ফরহাদ গত বছর ১৪ অক্টোবর নিজেকে চেয়ারম্যান ও মো. মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে মহাসচিব করে নতুন কমিটির ঘোষণা দেন। শওকত হোসেন নিলুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে এই অংশের পক্ষ থেকে ইসিকে জানানো হয়।

নিলুর এনপিপি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে আলদা মোর্চা করলেও ফরহাদের এনপিপি এখনো খালেদা জিয়ার সঙ্গেই রয়েছে।

২০১৪ সালের ১৯ জুলাই এনপিপির এ অংশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কার্যকরী  কমিটির সভার কার্যবিবরণী যুক্ত করে ইসির কাছে দলীয় প্রতীক ‘আম’ দাবি করেন ফরহাদ।

বর্তমানে ইসিতে ৪০টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালুর পর একই নামে কয়েকটি দল নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করলেও শর্তপূরণ সাপেক্ষে ভিন্ন ভিন্ন নামে নিবন্ধন দেওয়া হয়।

জাতীয় পার্টি নামে চারটি দল আবেদন করায় জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি নামে আলাদা নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।

মুসলিম লীগ, খেলাফত মজলিস, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপ ও জাসদের দুটি অংশও আলাদা নামে নিবন্ধন পেয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নাম ও প্রতীক নিয়ে বিভক্তি দেখা দিলে কিংবা একাধিক দাবিদার থাকলে সে বিষয়ে শুনানির পর ইসি সিদ্ধান্ত দেবে- কোনটি মূল দল।

নিবন্ধিত দলের মধ্যে দুই পক্ষের ঝামেলা হলে এক পক্ষ মূল দল থাকবে; অন্য পক্ষকে নতুন করে নিবন্ধনের জন্য শর্ত পূরণ করে আবেদন করতে হবে। তদন্ত ও শুনানি কিংবা আদালতের নির্দেশনার মাধ্যমে এ জটিলতার নিষ্পত্তি হবে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির নিবন্ধন ও কাঁঠাল প্রতীক নিয়ে দুই পক্ষের দাবির মুখে তদন্ত করে দুই কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ইসি। পরে দুই পক্ষ একীভূত হয়ে নতুন কমিটি করতে বাধ্য হয়।

জাসদের মশাল প্রতীক নিয়েও চলছে জটিলতা। কমিশন ইতোমধ্যে দুই পক্ষের শুনানি করেছে।

জাসদের প্রসঙ্গ টেনে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, “জাসদের দুই পক্ষের শুনানি করে সিদ্ধান্ত দিতে হবে আমাদের। তেমনি এনপিপির দুই পক্ষের শুনানি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।”