বিএনপি জোটে ভাঙন ধরিয়ে আসছে এনডিএফ

নির্বাচন বর্জনের পর ডান-বাম সবাইকে নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি খালেদা জিয়া নিলেও এখন নিজের জোটেই দেখা দিয়েছে ভাঙন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2014, 02:10 PM
Updated : 23 Sept 2014, 04:05 PM

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সাবেক নেতা শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার আত্মপ্রকাশ ঘটছে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- এনডিএফের।

২০ দলীয় জোটের কয়েকটিসহ মোট ১১টি দল নিয়ে এনডিএফ হচ্ছে বলে নতুন জোটের নেতারা জানিয়েছেন।  

যেখানে জোটের পরিসর বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, সেখানে এই মিত্রদের হারানো নিয়ে ‘শঙ্কিত নন’ বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ‘নামসর্বস্ব’ দলগুলো চলে গেলে ‘জঞ্জালমুক্ত’ হবে জোট।   

আওয়ামী লীগের গত আমলে নির্দলীয় সরকারের দাবির আন্দোলনে গতি আনতে চারদলীয় জোটের পরিসর বাড়িয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি।

৫ জানুয়ারির ভোটের পর কাজী জাফর আহমদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির যোগদানের মধ্য দিয়ে তা ১৯ দল হয়। এরপর সরকারের শরিক সাম্যবাদী দলের একাংশ যোগ দিলে তা হয় ২০ দল।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের একটি বৈঠক (ফাইল ছবি)

এরপর নতুন কোনো দল যোগ না দিয়ে ২০ দলীয় জোট থেকে দলের সংখ্যা কমতে থাকে। প্রথমে বের হয় শেখ আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী।

প্রধানমন্ত্রীর ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর গত অগাস্টে জোট থেকে বহিষ্কার করা হয় শেখ শওকত হোসেন নীলু নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টিকে (এনপিপি)। 

সেই নীলুই এখন নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং কয়েকটি দলের নেতারা মঙ্গলবার এক বৈঠক করে নতুন জোটের রূপরেখা এবং কর্মসূচিও ঠিক করেছেন।

নতুন জোট এনডিএফের চেয়ারম্যান হতে যাওয়া নীলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেব।”

যে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট থেকে ১৮ দলীয় জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করে এনডিএফের ঘোষণা আসছে।

“আমরা ২০ দল থেকে বের হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি না, আলাদা ফ্রন্ট করার ঘোষণা আসছে, যার নাম হবে ন্যাশলালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এনডিএফ।”

এনপিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল হাই মণ্ডল জানান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নেতৃত্বে এনডিএফ-এর অন্যতম দলগুলো হচ্ছে- ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (আনোয়ারুল হক), মুসলিম লীগ (জোবাইদা কাদের-আতিক), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি (আলমগীর মজুমদার), ভাসানী মঞ্চ (মমতাজ চৌধুরী), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (আবদুর রশিদ প্রধান), লেবার পার্টি (সেকান্দর আলী), ইনসাফ পার্টি (শহীদ চৌধুরী)।

এর মধ্যে মুসলিম লীগ, এনডিপি, ইসলামিক পার্টি, লেবার পার্টি ২০ দলীয় জোটে রয়েছে। তবে দেখা গেছে, কেউ জোট থেকে বেরিয়ে গেলে আরেক নেতার নেতৃত্বে অন্য একটি অংশ ২০ দলে থেকে যাচ্ছে, যা এনপিপির ক্ষেত্রেও হয়েছে।

শেখ শওকত হোসেন নীলু

এনডিএফে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জাগো দল (আবদুল মালেক চৌধুরী)সহ কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে আব্দুল হাই বলেন, “এ ফ্রন্টে অন্তত ১১টি দল থাকছে, এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।”

“অনেকেই ২০ দলে ছিল। আমরা এনপিপি সাংবাদ সম্মেলন করে বেরিয়ে এসেছি। এবার ফ্রন্ট করে বের হয়ে আসছে অনেকে,” বলেন তিনি।

এনডিএফ গঠনের কারণ ব্যাখ্যা করে আব্দুল হাই বলেন, বিদ্যমান ‘রাজনৈতিক শূন্যতায়’ জাতি তৃতীয় শক্তি হিসেবে দুই জোটের (১৪ দলীয় জোট ও ২০ দলীয় জোট) বাইরে তৃতীয় ফ্রন্ট আশা করছে।

“সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলবে এ ফ্রন্ট। জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুরের রাজনীতি করব না। প্রতিবাদ জানানো হবে শান্তিপূর্ণভাবে।”

‘জঞ্জাল চলে যাওয়াই ভাল’

সরকারের বিরুদ্ধে জোট ভাঙার অভিযোগ তুলে আসা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলছেন, নতুন জোট গঠন নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ নেই।

মাহবুবুর রহমান

আদর্শিক রাজনীতি থেকে ‘বিচ্যুত’ এই দলগুলোকে ‘জঞ্জাল’ অভিধা দিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এগুলোর চলে যাওয়াই ভাল।

“এ ব্যাপারে বিএনপির কোনো উদ্বিগ্নতা নেই। আমাদের কোনো কৌতূহলও নেই। এরা সুবিধাবাদী কিছু লোক, ব্যক্তিগত ইম্পর্টেন্স দিয়ে এখানে আসত।”

এই দলগুলোর চলে যাওয়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে দুর্বল করবে না বলেও মনে করেন সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর রাজনীতিতে আসা মাহবুব।

“দুর্বলতার প্রশ্নই উঠে না। বরং এসব যারা সুবিধাবাদী লোক, যাদের কোনো আদর্শ নেই, নীতি নেই, গণতান্ত্রিক শক্তিকে বিশ্বাস করে না, তাদের চলে যাওয়াই ভাল। কিছু জঞ্জাল থেকে দল মুক্ত হবে।”