বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম এ লতিফের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে বন্দর নগরীর ছাত্র ও যুবলীগের একদল নেতা-কর্মী।
Published : 03 Feb 2016, 05:52 PM
বুধবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ‘জাগ্রত যুব ও ছাত্র জনতার’ ব্যানারে এই বিক্ষোভ সমাবেশে লতিফের ছবিতে জুতা ও থুথু নিক্ষেপও করা হয়।
আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠন দুটির নেতা-কর্মীরা দলের এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে তার গ্রেপ্তারও দাবি করেছেন।
সম্প্রতি প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের সময় চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য লতিফের নামে যে বিলবোর্ড বন্দর নগরীতে স্থাপন করা হয়েছিল, তাতে বঙ্গবন্ধুর বিকৃত ছবি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে সমালোচনা ওঠার পর মঙ্গলবার ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী লতিফবিরোধী বিক্ষোভ করে।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বুধবার বড় আকারে শহীদ মিনারে কর্মসূচি নিয়ে নামেন ছাত্র ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, “জামায়াত যখন সারাদেশে নাশকতা করছিল, তখন লতিফের গাড়িতে করে নাশকতাকারীদের যাতায়াত করতে দেখা গেছে।”
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও লতিফ ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময়ে ছাত্রলীগের স্লোগান দিতে নিষেধ করেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।
“শুধু তাই নয় তার (এম এ লতিফ) আসনে ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে তিনি কোনো যোগাযোগ রাখেন না। জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সাথেই তার উঠাবসা।”
লতিফের সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি লতিফ ২০০৮ সালে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চট্টগ্রাম বন্দর আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ার এক বছর পর চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে থাকা মাওলানা শামসুদ্দিন এবং জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির আফসার উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠে সমালোচনায় পড়েছিলেন লতিফ।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিনবিরোধী শিবিরে থাকা লতিফ বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।
সাম্প্রতিক অভিযোগের বিষয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিলবোর্ড বসানোর দায়িত্বটি যাদের দেওয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই করে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে অবিলম্বে লতিফকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রনি মির্জা।
তিনি সমাবেশে বলেন, “কালো টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বনে গিয়ে সে ঠিকই তার আসল রূপ দেখিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি করে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনকের ছবি বিকৃত করার অপরাধে অবিলম্বে তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।”
সাবেক ছাত্রনেতা ও চট্টগ্রাম মহানগর খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে শহীদ মিনারের প্রতিবাদ সমাবেশে কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুরও বক্তব্য রাখেন।
মনসুর বলেন, “আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি প্রেতাত্মা হল এমপি লতিফ। অর্থ-বিত্তের কল্যাণে রাতারাতি আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছে লতিফ। বঙ্গবন্ধুকে কাবুলিওয়ালার ড্রেস পরিয়ে সে তার পাকিস্তানি প্রেতাত্মার পরিচয় দিয়েছে।”
সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে লতিফের কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশ শেষে লতিফের গ্রেপ্তারের দাবিতে একটি মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।