প্রবাসীদের ‘উদ্বুদ্ধ’ করার চেষ্টায় খালেদা

বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি আনতে না পেরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এ কাজে ‘উদ্বুদ্ধ’ করতে চাইছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যিনি ‘চিকিৎসার জন্য’ বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে অবস্থান করছেন।  

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2015, 03:41 AM
Updated : 4 Oct 2015, 09:09 AM

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক জানিয়েছেন, দেশে ‘গণবিরোধী সরকারের স্বরূপ’ আন্তর্জাতিক মহলের সামনে ‘উম্মোচন করতে’ প্রবাসে সবাইকে একযোগে কাজ করতে বলেছেন বিএনপিনেত্রী।

কমিটি নিয়ে ‘তদ্বির’ করতে মালেকসহ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন নেতা শনিবার লন্ডনে তারেক রহমানের বাসায় খালেদার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেখানেই দলীয় প্রধানের এ ‘নির্দেশ’ আসে। 

মালেক টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশে যেহেতু নানা রকমের ভয়-ভীতি রয়েছে, প্রবাসে তেমন আশঙ্কা নেই। তাই প্রবাসে সকলকে একযোগে কাজ করে বাংলাদেশের গণবিরোধী সরকারের স্বরূপ আন্তর্জাতিক মহলে উম্মোচিত করতে হবে- এ আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।”

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, দক্ষিণ ফ্লোরিডা বিএনপির নেতা ইলিয়াস খান, বস্টন বিএনপির নেতা সাইফুল আলম, শিকাগো বিএনপির নেতা মোজাম্মেল হোসেন নান্টু ও কানাডা বিএনপির সভাপতি ফয়সাল চৌধুরীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে বহুবছর আগে। বর্তমানে চার খণ্ডে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম চালালেও মাঠের কর্মীরা হতাশ। এ হতাশার কথা জানাতেই লন্ডনে দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন বলে জানালেন প্রবাসের বিএনপি নেতারা। 

গিয়াস আহমেদ বলেন, “কমিটি গঠন প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি খালেদা জিয়া। শুধু বলেছেন, ‘এখন সময় খারাপ। এখন সময় হচ্ছে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত জোরদার করার।”

বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এই বৈঠকের সময় উপস্থিত ছিলেন, যিনি কয়েকটি মামলায় হুলিয়া মাথায় নিয়ে গত সাত বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। 

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর লন্ডনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানেও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতাকর্মীদের একই ধরনের কথা বলেছিলেন খালেদা।

বাংলাদেশে এখন সরকারবিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে ‘দেওয়া হচ্ছে না’ এবং পুলিশের মাধ্যমে সরকারকে ‘টিকিয়ে রাখা’ হয়েছে মন্তব্য করে খালেদা সেদিন বলেছিলেন, প্রবাসী নেতাকর্মীদের ‘এ সমস্যা’ নেই। তারা তাদের অবস্থানে থেকে বিএনপির আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে পারেন।   

বিএনপি ও শরিকদের বর্জন ও আন্দোলনের মধ্যেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ; আর বিএনপি বহু বছর পর সংসদের বাইরে ছিটকে পড়ে।

ভোট বর্জনের ওই আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য সে সময় ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাদের বিষয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। পরে সাদেক হোসেন খোকার পুরনো কমিটি ভেঙে দিয়ে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে নতুন কমিটিও করা হয়। 

ভোটের পর ধীরে ধীরে রাজনৈতিক উত্তাপ কমে এলেও নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি আবারও আন্দোলনে গতি আনার চেষ্টা করে এবং তাদের তিন মাসের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে নাশকতা-সহিংসতায় মৃত্যু হয় দেড় শতাধিক মানুষের।     

গত এপ্রিলে ওই হরতাল-অবরোধ উঠে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বড় কোনো কর্মসূচিতে বিএনপি বা তাদের শরিকদের দেখা যায়নি। 

চিকিৎসার জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে গিয়ে এখন তারেকের বাড়িতেই থাকছেন খালেদা। সেখানে পরিবারের সঙ্গেই এবার কোরবানির ঈদ কাটিয়েছেন তিনি।