ডিসেম্বর শেষে আন্দোলনের ডাক: খালেদা

৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ খালেদা জিয়া নতুন বছরের শুরুতেই সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেবেন জানিয়ে রাজপথে নামতে দলের সবাইকে তৈরি থাকতে বলেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2014, 01:05 PM
Updated : 18 Dec 2014, 03:16 PM

বর্তমানে বিএনপিতে থাকা নব্বইয়ের ছাত্রনেতাদের এক কনভেনশনে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “এ বিজয়ের মাস শেষে যে কোনো সময়ে আমি আন্দোলনের ডাক দেব, তোমরা প্রস্তুত হও।

“ছাত্র-জনতাকে আমি বলছি, এই জালেম সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সকলে রাস্তায় নামুন। ওদের বিতাড়িত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

বিএনপির বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট।

ওই নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সহিংস আন্দোলন চালিয়ে গেলেও তাতে সফল হয়নি। ব্যর্থতার কারণ হিসেবে খালেদা জিয়া নিজেও রাজধানী ঢাকায় জোরাল আন্দোলন না হওয়াকে চিহ্নিত করেছেন।

কনভেনশনে খালেদার আগে অন্যদের বক্তৃতা চলার মধ্যেই ‘ঢাকায় আন্দোলন চাই’, ‘ঢাকায় আন্দোলন চাই’ স্লোগান ওঠে।  

তখন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, “আমি কথা দিচ্ছি- গতবার ঢাকায় যা হয়েছে, এবার তা হবে না। এবার ঢাকায় আন্দোলনেই হবেই। নব্বইয়ের মতো এবার আমাদের রাস্তায় পাবেন।”

৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে দায়ী না করতেও আহ্বান জানান তিনি।

খালেদাও বলেন, “এবার ঢাকার রাজপথ খালি যাবে না। টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ ও পুলিশের গুলিকে উপেক্ষা করে ছাত্রসহ সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করে আসছে। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি পাঁচ বছর আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে আসছেন সরকারি দলের নেতারা।

খালেদা বলেন, “সরকারকে বলব, এখনও সময় আছে, গুম-খুন-হত্যা-গুলি করা বন্ধ করুন। জনগণের প্রতি আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন- জনগণ আপনাদের চায়।”

সাবেক ছাত্রনেতাদের এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নব্বইয়ের মতো ছাত্রদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “হাসিনা দেশটাকে গিলে ফেলেছে। সে তোমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হও। হাসিনা থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না।”

গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বের হতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে খালেদা বলেন, “বাসার সামনে বালির ট্রাক দিয়ে আমাকে আটকিয়ে রাখবেন না। রাস্তায় নামব, সাহস থাকলে মোকাবেলা করুন।”

আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে জানিয়ে তাতে গুলি না চালাতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

“কাদের ওপর গুলি করছেন? আপনারা কি ভিন দেশের ওপর গুলি করছেন। ভুলে যাবেন না, আপনারা এদেশের মানুষ। ... হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকবে না। এভাবে জনগণের ওপর গুলি যারা করছেন, তারা কেউ রক্ষা পাবেন না।”

সচিবালয়ে ‘আতঙ্ক’

জনপ্রশাসন দলীয়করণ চলছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন তার সঙ্গে কর্মকর্তাদের বৈঠকের অপপ্রচার চলছে বলেও দাবি করেন। 

“গোয়েন্দারা ভুল তথ্য দিয়েছে। আমরা সঙ্গে এরকম কারও সাক্ষাৎ কিংবা বৈঠক হয়নি। এইভাবে মিথ্যা বলে সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি খাচ্ছে তারা। তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, কখন তাদের চাকরি যায়।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিমকে দেখিয়ে খালেদা বলেন, “এই যে হালিম সাহেব এখানে বসা আছেন, তাদের সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ প্রায়ই হয়। এটা বলা হচ্ছে বৈঠক।”

বিডিআর ও সেনাবাহিনীর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানও ‘ধ্বংস’ করে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। 

“সেনাবাহিনীতেও আজ চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। বিএনপির গন্ধ পেলেই চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না।”

সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল দাবি করে তিনি বলেন, “যে তেলের ট্যাংকার ডুবির কথা বলা হচ্ছে, সেটি তেলের ট্যাংকার নয়। একটি বালুর জাহাজে করে তেল নেওয়া হচ্ছিল।

“জাহাজের মালিক আওয়ামী লীগের লোকজন বলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচারণ

নব্বইয়ের ছাত্রনেতাদের এই অনুষ্ঠানে গিয়ে সেই সময়ের স্মৃতির কথাও তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৯০ সালের ১ অক্টোবর এই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তৎকালীন ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

খালেদা বলেন, “২৫ বছর আগে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। তোমরা ছিলে তখন আমার শক্তি। আজ পুরনো মুখগুলো দেখে আমার ভালো লাগছে। আমাদের বয়স হয়ে গেছে। তারপরও বলছি, জনগণের জন্য প্রাণ দিতে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নব্বইয়ে ছাত্রদল সভাপতি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে ছিলেন ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, সাবেক এজিএস নাজিমউদ্দিন আলম, ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলন প্রমুখ।

দিনব্যাপী এই কনভেনশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাবেক ও বর্তমানের প্রায় চার হাজার নেতা অংশ নেন বলে আয়োজকরা জানান।

সকালে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলী হায়দার বাবুলের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কনভেনশন। অধিকাংশ বক্তা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীসহ ‘গুম’ হওয়ার বিভিন্ন ব্যক্তির সন্ধান দাবি করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

উপস্থিত ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল মান্নান, আহমেদ আজম খান, আবদুল হালিম, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মিজানুর রহমান মিনু, হারুনুর রশীদ, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মারুফ কামাল খান, ফজলুর রহমান।

সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে ছিলেন- সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, খন্দকার লুৎফুর রহমান, আসাদুর রহমান খান আসাদ, কামরুজ্জামান রতন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, হেলেন জেরিন খান, সাইফুল আলম নিরব, মীর সরফত আলী সপু, শফিউল বারী বাবু, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলীম, হাবিবুর রশীদ হাবিব।

ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দেড় শতাধিক নেতা এই সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।