‘গুমের’ তদন্তে জাতিসংঘকে চান খালেদা

দেশে সংঘটিত গুমের ঘটনা সরকারের নির্দেশে হয়েছে অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক তদন্তে জাতিসংঘকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2015, 04:52 PM
Updated : 30 August 2015, 04:55 PM

রোববার বিকালে ‘বিশ্ব গুম দিবস’ উপলক্ষে গুলশান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাস ও গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা জানি, সরকারের নির্দেশ-আদেশ ছাড়া এসব কাজ র‌্যাব-পুলিশ করতে পারে না। আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবসে গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের স্বজনরা অনেকে সরকারের কাছে দাবি করেছেন, তদন্ত করে তাদের খুঁজে বের করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।”

নিখোঁজদের স্বজনরা সরকারের কাছে দাবি জানালেও এরকম উদ্যোগ নেওয়া হবে না বলেই মনে করেন খালেদা।

তিনি বলেন, “এদের কাছ থেকে কোনো সুষ্ঠু তদন্ত হবে না। তাই আমি দাবি করছি জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক তদন্ত করতে হবে। দেশে যারা নিরপেক্ষ আছেন তাদের নিয়ে ওই তদন্ত করতে হবে।”

২০০৯-২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ হওয়া ২৬ জন নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জানাতে বিএনপি ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘অনন্ত অপেক্ষা’ নামে ১৩ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের সময় ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় অনেককে।

পরে বিএনপি চেয়ারপারসন অনুষ্ঠানে আসা গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের খোঁজ-খবর নেন।

অনুষ্ঠানে নিখোঁজ ও গুম হয়ে যাওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড়ো বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী, ছোট বোন সানজিদা ইসলাম, হুমায়ুন কবীর পারভেজের স্ত্রী শানাজ আখতার, যুবদলের ইকবাল মাহমুদের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক দলের এএম আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী  মর্মস্পর্শী বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া ছাত্রদলের নিজামুদ্দিন মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন, মাহবুব হাসান সুজনের স্ত্রী তানজিনা আখতার, খালিদ হাসানের স্ত্রী সৈয়দা শাম্মী সুলতানা, মাহফুজুর রহমান সোহেলে বাবা শামসুর রহমান, মাজেদুল ইসলাম রাসেলের বোন লাবনী আখতার, সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নী প্রমুখও বক্তব্য দেন।

জবাবে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার অধিকার নেই। কারো কথা বলার অধিকারও নেই। কেউ কোনো অনুষ্ঠানও করতে পারবে না।

“যারা জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে আছে, যারা মিথ্যা কথা বলতে পারে, তাদেরই অধিকার কেবল আছে।”

নিখোঁজদের স্বজনদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, “আমি শুধু সান্ত্বনা দিতে পারি, আশ্বাস দিতে পারি। এর বেশি কিছু আমাদেরও করার নেই। কখন গুম-খুন হয়ে যাবো না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”
এ সময় বছরের প্রথম দিকের তিন মাসের আন্দোলনে নাশকতার জন্য ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করে তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা নাকি পেট্রোল বোমা মেরেছে। আসলে আন্দোলনকে ভিন্নপথে নিতে ও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সরকার চেয়েছে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে সাংবাদিক শফিক রেহমান ও ধানের শীষের সম্পাদক সাখাওয়াত সায়ান্থও অংশ নেন।