আওয়ামী লীগ-জাসদ ‘টানাটানি’ থামান: সুরঞ্জিত

স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে জাসদের ভূমিকা নিয়ে সরকারের শরিকদের মধ্যে  বাকযুদ্ধ ‘এখনই’ থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2015, 10:10 AM
Updated : 28 August 2015, 11:12 AM

শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “জাসদ নিয়ে এখন যে বিতর্ক চলছে তা অনভিপ্রেত, অপ্রাসঙ্গিক ও অরাজনৈতিক। জাসদের ইতিহাস আমরা জানি, আমাদের ইতিহাসও সবাই জানে। ইতিহাস জেনেই আমরা তাদের সঙ্গে জোট করেছি।”

আওয়ামী লীগ ও জাসদের এই ‘টানাটানিকে রাবারের মতো টেনে’ আরও বড় না করতে দলীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান এক সময়ের এই বাম নেতা।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু সরকারের চরম বিরোধিতাকারী জাসদ বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অংশীদার। দলটির সভাপতি ইনু বর্তমান সরকারে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।

জাসদ ও ইনুর তখনকার ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের পর দুই দলের নেতাদের মধ্যে এই বাকযুদ্ধের শুরু, যাতে যোগ দিয়েছেন বিএনপির নেতারাও। 

গত ২৩ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে শেখ সেলিমের বক্তব্য উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, “স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল।”

শেখ সেলিমের বক্তব্যের পরদিন বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপনও এক সংবাদ সম্মেলনে জাসদের ১৯৭২-৭৫ সময়ের ভূমিকার তদন্ত দাবি করেন।

এরপর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ আবার ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরির জন্য’ জাসদকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও বলেন, ইনুরা তখন ‘অরাজক পরিস্থিতি’ তৈরি করেছিলেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় জাসদ সভাপতি ইনু বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জাসদকে জড়ানোর যে অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র, এটার কোনো ভিত্তি নেই।…দীর্ঘ তদন্ত শেষে দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া শেষে বিচারকরা রায় ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সাক্ষীর জেরা থেকে অভিযোগপত্র কোনো জায়গায় জাসদ সম্পর্কে একটি শব্দও লেখা নেই।”

হঠাৎ করে জাসদকে নিয়ে কেন ‘ঘাঁটাঘাঁটি’ শুরু হয়েছে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা কেন ‘একই ভাষায়’ কথা বলতে শুরু করেছেন- সে প্রশ্নও ইনু করেন।  

এ প্রসঙ্গ টেনে শুক্রবার ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, জাসদের সঙ্গে তার দলের এখনকার ‘এই মেলবন্ধন’ জঙ্গিবাদবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য।

“জাসদ ও আওয়ামী লীগ নিয়া যেটা লাগছে, এটা দলের মধ্যে কয়জন মানুষ দ্বারা? আমি আসল কথা বলে দিই- এটা আওয়ামী লীগের অগাস্ট মাসের আবেগ। এটার জন্য মহাজোট ভাঙবে না। ইনু মিয়ারও কিছু হইব না। এটাকে অগাস্টের আবেগ ছাড়া আমি কিছুই দেখছি না।”

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের মধ্যেই ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সুরঞ্জিত। পরে একতা পার্টি ও গণতন্ত্রী পার্টি হয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে যোগ দেন আওয়ামী লীগে।

জাসদের সঙ্গে ‘টানাটানি’ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কে কোথায় কখন কী করল, তা নিয়ে ভাবলে চলবে! আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে।”

শেখ হাসিনাকে হত্যার নতুন ষড়যন্ত্রের শঙ্কা প্রকাশ করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ নেতারা সম্প্রতি যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তাও উড়িয়ে দেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত।

তিনি বলেন, “আশির দশকের হত্যা-ক্যুর রাজনীতি এখন আর চলে না। শেখ হাসিনা একজন অদম্য সাহসী মহিলা, এই সমস্ত কথা কইয়া লাভ নাই।

“তারপরেও আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এ ধরনের কথা বলে সিম্প্যাথি পেতে চায়। এতে মানুষ ভয়ও পায়। দেশ এখন স্থিতিশীল আছে। তাই এ ধরনের কথা না বলে সামনে এগোতে হবে।”

গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ১১ বছর পূর্তিতে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে গত বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেন, “ঐক্যবদ্ধ না থাকলে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতে পারে।”

অবশ্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মনে করছেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে বলেই আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বার কাউন্সিল নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।

গত বুধবার হওয়া বার কাউন্সিলের ওই নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিএনপি হারলেও বিভিন্ন নির্বাচনে বরাবরের মতো কারচুপির অভিযোগ না করে ফলাফল মেনে নেওয়ায় বিষয়টি রাজনীতির ইতিবাচক দিক।”

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার পরও বিদ্যুতের দাম গড়ে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানোর যে ঘোষণা বিইআরসি দিয়েছে, তা ‘পুনর্বিবেচনার’ আহ্বান জানান আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে বাড়াবেন, আর দাম কমলে কমাবেন না, এটা ন্যায়-নীতি বিরুদ্ধ। এটা হতে পারে না। এক দেশে দুই নীতি চলতে পারে না।”

তিনি বলেন, “দাম যদি বাড়ে তাহলে ভোক্তারা সরকারকে সহযোগিতা করবেন। আর সরকারকেও যখন-তখন দাম না বাড়িয়ে ভোক্তাদের সহযোগিতা করা উচিত। এটা মাথায় রেখে বিদ্যুতের দাম কিঞ্চিৎ হলেও কমানো উচিত।”

আলোচনা সভার সভাপতি ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “গ্যাসের দাম হয়তো বাড়তে পারে, কিন্তু বিদ্যুতের দাম তো বাড়ার কথা না। প্রত্যেক ইউনিটে ১৮ পয়দা বাড়লে ইন্ডাস্ট্রির ওপর আগ্রহ বাড়বে না, আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বাংলাদেশ।”

অন্যদের মধ্যে সাম্যবাদী দল নেতা হারুন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু একাডেমির মহাসচিব হুমায়ুন কবির মিজি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।