‘হতাশ’ বিএনপি কর্মসূচি দেয়নি

সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় বহাল থাকায় আগের মতোই ‘বিস্মিত’ হয়েছে তার দল বিএনপি; তবে কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 11:49 AM
Updated : 29 July 2015, 06:28 PM

বুধবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “আমরা আপিল বিভাগের রায়ে হতাশ, বিস্মিত ও বেদনাহত হয়েছি। বিএনপি মনে করে, জনাব সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।

“তার আইনজীবীদের মতো আমরাও মনে করি, তিনি ন্যায়বিচার লাভ করেননি। অন্যায্যভাবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর সর্বোচ্চ সাজার রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার সকাল ৯টায় এই রায় ঘোষণার পর রিপন প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিকাল ৫টায়।  

তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি উচ্চ আদালতে এই রায়ের রিভিউ হবে। আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।”

এই রায়ের প্রতিবাদে বিএনপি কোনো কর্মসূচি দেবে কিনা জানতে চাইলে রিপন বলেন, “যেহেতু আপিলের রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে, আমরা এখনো প্রত্যাশা করছি, তিনি ন্যায় পাবেন। সুতরাং এই মুহূর্তে কর্মসূচির প্রশ্ন আসছে না।”

জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পর বরাবরই ‘নিশ্চুপ’ ছিল বিএনপি। আর ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায়ের এক দিন পর তার দলের প্রতিক্রিয়া জানা গিয়েছিল।

২ অক্টোবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সালাউদ্দিন কাদেরের রায়ে তারা ‘বিস্মিত’ ।

সারাদেশে বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, “এই ট্রাইব্যুনাল গঠন ও তার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা বির্তক সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি মনে করে, মানবতাবিরোধী বিচারের নামে সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”

বাবা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর মতোই সাকা চৌধুরীর রাজনীতির শুরু মুসলিম লীগ থেকে। পরে জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে তিনি বিএনপিতে আসেন। চট্টগ্রাম থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য হন তিনি।

সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সাকা চৌধুরী। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

রিপন বলেন, “আমাদের দল মনে করে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিচারে আইনি স্বচ্ছতার অভাব ও নানা ক্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে অনেক দণ্ডাদেশ পযার্লোচনায় পরে দেখা গেছে- ভিকটিমদের প্রতি কাযর্কর করা অনেক রায় ক্রটিপূর্ণ ছিল।”

ভবিষ্যতে সাকা চৌধুরীর রায় যেন ‘তেমনভাবে’ চিহ্নিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেন বিএনপির মুখপাত্র।

বিএনপি বরাবরই বিচার বিভাগের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার প্রতি ‘শ্রদ্ধাশীল’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেজন্য প্রত্যাশা করব, এই রায়ের রিভিউয়ে তিনি (সাকা চৌধুরী) ন্যায়বিচার থেকে যেন বঞ্চিত না হন।”

চট্টগ্রামের সাবেক সাংসদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজের নিবার্চনী এলাকায় কতটা ‘জনপ্রিয়’ তা বোঝাতে গিয়ে রিপন বলেন, “তিনি ছয়বার জাতীয় সংসদে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন।”

সাকা চৌধুরী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ‘উচ্চকণ্ঠ’ ছিলেন বলে দাবি করেন রিপন, যদিও আদালতের রায়ে সালাউদ্দিন যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। 

মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর ছেলে সাকা যে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হিন্দু ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক নিধন এবং নির্যাতন শিবির চালিয়েছিলেন, এ মামলার বিচারে তা উঠে আসে।

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে রিপন বলেন, তার দল সবসময় ‘এ বিচারের পক্ষে’।

“আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম- এই বিচারের প্রক্রিয়া হতে হবে সকল রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপমুক্ত পরিবেশে, স্বচ্ছ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে। কোনোভাবে কোনো ব্যক্তি যাতে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসার শিকার না হন; অভিযুক্তর প্রতি যেন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়।”

সাকা চৌধুরীর বিচার প্রক্রিয়াকে ‘প্রভাবিত করতে’ শুরু থেকেই ‘রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত’ ছিল বলে অভিযোগ করেন রিপন।

যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় বিএনপিতে সাকা চৌধুরীর সদস্য পদ খারিজ করা হবে কিনা জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, “এখন এ প্রশ্ন আসছে না। এখনো বিষয়টি শেষ হয়নি। সুতরাং আমরা উচ্চ আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। আমরা মনে করি, উচ্চ আদালত সকল রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপমুক্ত হয়ে সুবিবেচনাপ্রসূত রায় দেবেন।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম ও আসাদুল করীম শাহিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।