স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায়) যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের নিজ বাড়িতে এই ইতিহাসবিদ মারা যান বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রাজা দাশগুপ্ত।
তিনি জানান, ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুর আগের টানা দেড় বছর অসুস্থ 'বাঙালনামা' খ্যাত লেখক তপন। রেখে গেছেন স্ত্রী, কন্যা ও নাতনিকে।
রাজা দাশগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গত সোমবার তার মস্তিষ্কে আরেকবার রক্তক্ষরণ হলে তপন রায়চৌধুরীর শারিরীক অবস্থার আরও অবনতি হয়। তখনই চিকিৎসকরা তার ব্যাপারে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং অনর্থক তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করার কথাও বলেছিলেন তারা।"
"বাবার অসুস্থতার খবরে তপন রায়চৌধুরীর কন্যা জাপানের টোকিও থেকে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন, যিনি নিঃশ্বাস ত্যাগের সময় তপন রায়চৌধুরীর পাশেই ছিলেন," বলেন দাশগুপ্ত।
১৯২৬ সালে বরিশালের কীর্তিপাশায় জন্ম ভারতীয় এই ইতিহাসবিদের, সেখানেই চুকিয়েছেন স্কুলের পাঠ। সাতচল্লিশের ভারত ভাগের পর সপরিবারে কলকাতা চলে আসেন। স্কটিশ চার্চ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে, পরে যান অক্সফোর্ডে।
জীবনের শুরু থেকেই শিক্ষকতাকে জীবিকা হিসেবে নিয়েছিলেন তপন রায়চৌধুরী। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই তার বহু গ্রন্থ এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও গবেষণামূলক নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে।
ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাস, ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস এবং বাংলার ইতিহাস নিয়ে তপন ছিলেন একজন প্রকৃত পণ্ডিত, যাকে ২০০৭ সালে পদ্মভূষণ পদকের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয় ভারত সরকার।
ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস নিয়ে কাজ করার সুবাদে আমেরিকান হিস্টোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশন মার্ক্সবাদী ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবেব সঙ্গে যৌথভাবে তপন রায়চৌধুরীকে ওয়াটুমাল পুরস্কারে ভূষিত করে।
তপন রায়চৌধুরীর প্রয়াণের সংবাদ দিয়ে আনন্দবাজার লিখেছে, "সন-তারিখ আর দলিল-দস্তাবেজের নীরস ইতিহাস নয়, পরিণত বয়সে ‘বাঙালনামা’ কিংবা ‘রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তের পরচর্চা’র মতো সরস আত্মজীবনী লিখে বাঙালি পাঠকের কাছে উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে আছেন তিনি।"
ক্ষয়িষ্ণু জমিদারবাড়ি, ছেলেবেলার স্মৃতি ও তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গল্পের জাদুকরী গাঁথুনি রচনা করে তপন রায়চৌধুরী তার লেখায় সময়টাকে ধরে রেখেছেন। তার স্মৃতিকথায় বারবার উঠে এসেছে বাংলার বিশেষত বরিশাল মানুষ ও সেখানকার তৎকালীন সমাজ জীবন।
'বাঙালনামা' বেরিয়েছিল ২০০৭ সালে, তার পর পাঁচ বছরের মধ্যে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন আওয়ার টাইম’। তবে ১৯৯৩ সালে ‘রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তের পরচর্চা’ বইটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তপন রায়চৌধুরীর রসবোধের ব্যাপারে পাঠক সমাজ ওয়াকিবহাল ছিলেন।
তপন রায়চৌধুরীর শেষকৃত্য দুয়েকদিনের মধ্যে অক্সফোর্ডেই হবে জানিয়ে রাজা দাশগুপ্ত বলেন, "আজ (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতের পর আমরা জানতে পারবো ঠিক কোথায় সেটি অনুষ্ঠিত হবে।"