হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র

সুন্দরবনের পরিবেশ সমুন্নত রেখে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন দেখার ব্যবস্থা আছে এখানে।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2015, 12:00 PM
Updated : 30 Jan 2015, 12:07 PM

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীন বনবিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। খুলনা থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং মংলা বন্দর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে এই কেন্দ্রে অবস্থান।

একদিনের ভ্রমণে যারা সুন্দরবন দেখতে চান তাদের জন্য আদর্শ জায়গা হাড়বাড়িয়া।

সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া টহল ফাঁড়ির পাশেই ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। এর সামনের খালটি কুমিরের অভয়ারণ্য। প্রায়ই লোনা পানির কুমির দেখা যায় এই খালের চরে। তবে কুমির দেখার ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে রোদ পোহাতে কুমিরগুলো খালের চরে শুয়ে থাকে।

হাড়বাড়িয়ায় সুন্দরনের বিরল মায়া হরিণেরও দেখা মেলে। এখানকার ছোট ছোট খালগুলোতে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙাসহ নানান জাতের পাখি। হাড়বাড়িয়ার খালে পৃথিবীর বিপন্ন মাস্ক ফিনফুট বা কালোমুখ প্যারা পাখিও দেখা যায়।

হাড়বাড়িয়ার খালে বড় বক। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

হাড়বাড়িয়া খালের পাড়ে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের সোনালি নামফলক। একটু সামনে এগুলেই বন কার্যালয়। এরপরে ছোট খালের উপরে ঝুলন্ত সেতু। সামনের দিকে জঙ্গলের গভীরতা ক্রমশ বেড়েছে। ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে সামান্য সামনে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের মাঝে গোলপাতার ছাউনি সমেত একটি বিশ্রামাগার।

ঘরটির চারপাশে বসার জন্য বেঞ্চ পাতা। পুকুরের পাড় থেকে কাঠের তৈরি সেতু গিয়ে ঠেকেছে ঘরটিতে। বন বিভাগের অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওয়ায় ১৯৯৭-৯৮ সালে বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্মরণে খনন করা হয় এই পুকুর।

পুকুরের দুই পাশ থেকে সামনে চলে গেছে ইট বিছানো পথ। অল্প দূরত্বের দুটি পথই শেষ হয়েছে কাঠের তৈরি হাঁটাপথে। যে কোনো একদিক দিয়ে হাঁটা শুরু করলে অন্যপ্রান্তে এসে শেষ হবে এই পথ। তবে হাতের ডান দিকের ইট বিছানো পথের শেষে রয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট একটি জঙ্গল পর্যবেক্ষণ বুরুজ। কাঠের তৈরি এই বুরুজের ওপর থেকে জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

তবে সম্প্রতি ভ্রমণে গিয়ে দেখা গেল এই টাওয়ারের ভগ্নদশা। উপরে ওঠাই বিপজ্জনক মনে হল। এখানকার পুরো ট্রেইলটি এক কিলোমিটারের বেশি।

হাড়বাড়িয়ার জায়গাটিতে বাঘের আনাগোনা বেশি। প্রায়ই বাঘের পায়ের তাজা ছাপ দেখা যায়। এছাড়া চিত্রা হরিণ ছাড়াও অন্যান্য বন্য প্রাণীও এখানে দেখা মিলবে।

কীভাবে যাবেন

হারবাড়িয়ার খালে লোনা পানির কুমির। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

মংলা বন্দর থেকে সকালে হাড়বাড়িয়া গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই আবার ফিরে আসা যায়। খুলনা কিংবা বাগেরহাট থেকে বাসে আসতে পারেন মংলা। মংলা থেকে ইঞ্জিন বোটে হাড়বাড়িয়া যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এখান থেকে পাঁচ থেকে ত্রিশজন চলাচলের উপযোগী বিভিন্ন রকম ইঞ্জিন নৌকা পাওয়া যায়। রকমভেদে সারাদিনের জন্য একটি নৌকার ভাড়া ১হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা। নৌকাগুলো ছাড়ে মংলা ফেরি ঘাট থেকে।

কোথায় থাকবেন

এ ভ্রমণে থাকতে হবে মংলায় এসে। মংলায় থাকার জন্য ভালো ব্যবস্থা হল বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল পশুর (০৪৬৬২-৭৫১০০)। এখানকার নন এসি ডবল ‍রুম ১ হাজার ২শ’ টাকা এবং এসি ডবল রুম ২ হাজার টাকা। ইকনোমি বেড ৬শ’ টাকা।

এছাড়াও মংলা শহরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ১শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকায় রুম পাওয়া যাবে।

প্রয়োজনীয় তথ্য

হারবাড়িয়ার জঙ্গলে বানর । ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

হারবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে পর্যটকের জন্য প্রবেশ মূল্য: দেশি পর্যটক জনপ্রতি ৭০ টাকা, বিদেশি পর্যটক ১ হাজার টাকা। সঙ্গে ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য।

হাড়বাড়িয়াও যেতে হবে পশুর নদী হয়ে। এটি বেশ বড় নদী। তাই ভালো দেখে ইঞ্জিন নৌকা নিন। আগেই জেনে নিন নৌকায় পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট আছে কীনা!

হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটি বাঘের অভয়ারণ্য। তাই কাঠের তৈরি হাঁটা পথের বাইরে জঙ্গলে ঢুকবেন না। জঙ্গলে প্রবেশের আগে বন কার্যালয় থেকে অস্ত্রধারী বনরক্ষী নিয়ে নিন। জঙ্গলে ধুমপান করবেন না।

যে কোনো রকম ময়লা, উচ্ছিষ্ট, চিপস, বিস্কুট, চকোলেট ইত্যাদির প্যাকেট সঙ্গে করে নিয়ে আসুন। এগুলো জঙ্গলে ফেলবেন না। 

হাড়বাড়িয়া ভ্রমণে যেতে ইঞ্জিন নৌকার ফোন নম্বর ০১৯১৫৮৮৬৮৩৫, ০১৭৩০৬২০৮৪২।

ভ্রমণ নিয়ে আরও প্রতিবেদন