অসময়ে কক্সবাজার! এ আবার কেমন কথা। এ অসময়ের অর্থ হল এখন ভ্রমণের মৌসুম নয়, তাই অসময়। মেঘ- বৃষ্টি আর রোদের লুকোচুরি খেলার মধ্যে কক্সবাজার বেড়ানোর উপযুক্ত সময় এখনই।
Published : 02 Sep 2014, 02:11 PM
নীলাকাশে সাদা মেঘের ভেলা, দরিয়ায় বড় বড় ঢেউ আর প্রায় পর্যটকশূণ্য সৈকত কেবল এ সময়টাতেই দেখা যায় কক্সবাজারে।
তাই নির্জনে বেড়াতে যাদের পছন্দ, নিরবতার মাঝে প্রকৃতির রূপ খুঁজতে ভালোবাসেন যারা, একটু সময় বের করে বেড়িয়ে পড়ুন দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে।
ভ্রমণের মৌসুম নয় বলে এ সময়টাতে কক্সবাজার ভ্রমণে বাড়তি কিছু সুবিধা আছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন ভ্রমণ খরচ অনেকটাই কম। সেপ্টেম্বরের শেষ অবধি এখানকার সব হোটেলেই আছে শতকরা ৪০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত মূল্য ছাড়। এছাড়া পর্যটকের সমাগম কম বলে কক্সবাজারের আশপাশের জায়গায় যেতে বিভিন্ন পরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়াও গুণতে হবে না।
কক্সবাজার ভ্রমণে আকর্ষণীয় জায়গা হল সমুদ্র সৈকত। বালুকাবেলায় বসে উপভোগ করতে পারেন নীল সমুদ্রের সৌন্দর্য। ত্রিশ টাকা ঘন্টায় ব্যবহার করতে পারবেন সৈকতের আরাম চেয়ারগুলো। সমুদ্র স্নানও করতে পারেন। তবে এ সময়ে খুব সাবধানতার সঙ্গে সমুদ্রে নামুন। সৈকতে লাল পতাকা নির্দেশিত সময়ে অবশ্যই সমুদ্র স্নানে নামবেন না। অন্যান্য সময়ে নামলেও বেশ সাবধানতার সঙ্গে খুব কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা করে স্নান শেষ করে ফেলুন। সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের সময় সমুদ্র ‘মিস’ করবেন না।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের প্রধান তিনটি জায়গা হল লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট এবং কলাতলী পয়েন্ট। পশ্চিম দিক থেকে যথাক্রমে পূর্ব দিকে এ তিনটি সৈকতের অবস্থান। এগুলো ছাড়া কোথাও সমুদ্র স্নানে নামা নিরাপদ নয়। তবে একটু পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকের সৈকত নির্জনতায় ঘেরা। এ জায়গাগুলোতে হেঁটে বেড়াতে ভালো লাগবে সবার।
সৈকত বেড়ানোর ফাঁকে যেতে পারেন পারেন হিমছড়ি কিংবা ইনানী। হিমছড়িতে আছে পাহাড় আর সমুদ্রের মিতালি। আরও আছে ছোট ছোট পাহাড়ি ঝরনা, স্থানীয় নাম ছড়া। বর্ষায় এ ছড়াগুলো কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
কক্সবাজার সৈকত থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে ইনানীর সমুদ্র সৈকত একটু ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। অনেকটা মিল আছে সেন্টমার্টিনের প্রবালপূর্ণ সৈকতের সঙ্গে। হিমছড়ি থেকে আরও প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ সৈকত।
দলের আকার অনুযায়ী জায়গা দুটি ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটো রিকশা কিংবা খোলা জিপ। ৬শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকায় অর্ধেক দিনের জন্য ভাড়ায় পাওয়া যাবে এ বাহনগুলো।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারেন সড়ক ও আকাশপথে। ঢাকা কক্সবাজার যায় সোহাগ পরিবহন, টি আর ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া ১ হাজার ৭শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা।
এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া সাড়ে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান নিয়মিত চলাচল করে কক্সবাজারের পথে।
কোথায় থাকবেন
কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু হোটেল আছে। ধরণ অনুযায়ী এসব হোটেলের প্রতি দিনের রুম ভাড়া ১ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।
কক্সবাজারের সর্বাধুনিক হোটেলগুলো হল কলাতলী সড়কে ওশেন প্যারাডাইস (০৩৪১৫২৩৭০, ৫২৩৭৯) ও লং বিচ (০৩৪১৫১৮৪৩-৬), সৈকত সড়কে কক্স টুডে (০৩৪১৫২৪১০-২২) ও সি-গাল (০৩৪১৬২৪৮০-৯১)।
এছাড়া কক্সবাজার সৈকতের কাছাকাছি অন্যান্য ভালো মানের হোটেল হল: কলাতলী সৈকতে হোটেল সি ক্রাউন (০৩৪১৬৪৭৯৫), সুগন্ধা সৈকতে হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইস(০১৫৫৬৩৪৭৭১১), লাবনী সৈকতে হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল (০৩৪১৬২৮৮১-৫), হোটেল মিশুক (০৩৪১৬৪৩২০) ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় তথ্য
সমুদ্র স্নানে নামার আগে জোয়ার ভাটার তথ্য জেনে নিন। সৈকতে টাঙানো সবুজ পতাকা জোয়ারের নির্দেশ করে। এসময়ে সমুদ্রে নামা নিরাপদ। ভাটার সময় লাল পতাকা থাকে। এ সময়ে সমুদ্র স্নানে নামা যাবে না।
একই সঙ্গে একটু উপর নিচ করে দুটি লাল পতাকা উড়ানো জায়গা বরাবর চোরাবালি কিংবা চোরা খাল নির্দেশ করে।
সাঁতার জানা থাকলেও সমুদ্রে নামার সময় লাইফ জ্যাকেট কিংবা টিউব নিয়ে নিন। সমুদ্রে নামতে ট্রাউজার কিংবা হালকা পোশাক পরুন। লুঙ্গি ও শাড়িজাতীয় কাপড় পরে সৈকতে নামবেন না।
কোনও রকম ময়লা আবর্জনা সৈকতে ফেলবেন না।