শ্রী শ্রী মহারাসলীলা— মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়। বর্ণিল পোশাকে সাজা মণিপুরী নারী ও শিশুদের নাচ-গান উপভোগ করতে হলে যেতে হবে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ কিংবা আদমপুরে।
Published : 08 Nov 2013, 07:51 AM
এবারের রাসলীলা উৎসবের শুরু ১৬ নভেম্বর।
সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কমলগঞ্জের মাধবপুর ও আদমপুরে পালিত হয় সবচেয়ে বড় রাসলীলা উৎসব। যেটা মাধবপুরের মহারাসলীলা সেবা সংঘের বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরীরা পালন করেন। আর আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁও সানাঠাকুর মণ্ডপে এ অনুষ্ঠানের আয়োজক মৈ-তৈ সম্প্রদায়ের রাস উৎসব উদযাপন কমিটি।
প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো মাধবপুর ও আদমপুরের রাসলীলা অনুষ্ঠান। মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রায় সবাই জানেন এর ইতিহাস।
এরপরেই মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র কয়েকজন কুমারী মেয়ে দিয়ে স্বপ্নের মতো রাসলীলা করালেন। এখানে তার মেয়ে কুমারী বিশ্বাবতীকে শ্রীরাধা এবং মন্দিরের শ্রীগোবিন্দকে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় অবতীর্ণ করান।
মহারাসলীলা উপলক্ষে কমলগঞ্জের ২টি জায়গাতেই বসে বড় ধরনের গ্রামীণ মেলা। মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ মিলিত হন এই আনন্দে।
সারারাতের রাসনৃত্যে মনিপুরী তরুণীরা অংশ নেন। দিনের বেলায় রাখালনৃত্যে অংশ নেন মনিপুরী শিশুরা। এলাকার মণ্ডপগুলো সাদা কাগজের উপর চোখ ধাঁধানো নকশায় সাজানো হয়। এরই মাঝে মণিপুরী তরুণী আর শিশু নৃত্যশিল্পীরা রং-বেরংয়ের পোশাকে সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় ভক্ত আর দর্শনার্থীদের রাতভর মুগ্ধ করে রাখেন।
যেভাবে যাবেন
প্রথমে যেতে হবে শ্রীমঙ্গল। সেখান থেকে বাস কিংবা অটোরিকশায় কমলগঞ্জ কিংবা আদমপুর পৌঁছান। কমলগঞ্জের মণ্ডপগুলো শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ থানার সামনে ভানুগাছা-পত্রখোলা সড়কে এসে শেষ হয়েছে। এ পথে প্রায় ৪ কিলোমিটার সামনে গেলেই রাসলীলার মণ্ডপগুলোর দেখা মিলবে।
ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া ৩৫০-৪০০ টাকা।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১১৫-৭৬৫ টাকা।
যেখানে থাকবেন
কমলগঞ্জে থাকার তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। কাছাকাছি থাকতে হলে যেতে হবে শ্রীমঙ্গল। এখানে ভালো মানের জায়গা ভানুগাছা রোডে টি-রিসোর্ট (০৮৬২৬-৭১২০৭)। শহরের ঢুকতেই রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট (০১৯৩৮-৩০৫৭০৬-৭)। রাধানগরে নিসর্গ লিচিবাড়ি ইকো কটেজ (০১৭১৬৯৩৯৫৪০) ও নিসর্গ নীরব ইকো কটেজ (০১৭১৫০৪১২০৭)।
শ্রীমঙ্গলের আনাচে-কানাচে অনেক খাবার দোকান। ‘কুটুমবাড়ি’ ও ‘শ্বশুরবাড়ি’র খাওয়া মোটামুটি ভালো। পাশাপাশি নূর ফুডস এবং শাহ রেস্তোরাঁর খাবারও খারাপ না।
ছবি : সৈয়দ জাকির হোসেন