তোজেংমা' বুনোর পথের ঝরনা

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে যেতে হবে আলমগীর টিলা। বাকি পথ ঝিরি ঢাকা পাথুরে পথ। মাকড়সার জালে ঘেরা জঙ্গল ভেদ করে যেতে হবে দুই ঝরনার সঙ্গমস্থলে।

সামির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2016, 11:21 AM
Updated : 2 Sept 2016, 11:24 AM

ঝরনা থেকে বয়ে আসা ঝিরির পুরোটা পথ সবুজ আবরণে ঢাকা। কোথাও কোমর পানি, কোথাও বুক পানি ঢেকে রেখেছে নিচের পাথর। এর উপর দিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ দেখা যাবে জঙ্গলে ঢেকে পুরো ঝিরির পথ।

ঝরনার কাছে যাওয়ার আগে প্রায় লাগোয়া দুটো পাথুরে পাহাড়। এ যেন আরব্য উপন্যাস 'আলীবাবা'র জাদুকরী দরজার মতো পাথুরে পাহাড়ের দরজা পেরিয়ে অবশেষে ঝরনা দর্শন।

দুদিক থেকে আসা দুটি ঝরনার ধারা নেমেছে একই খুমে। এমন ঝরনা পাহাড়ে খুব একটা চোখে পড়ে না। পুরো ট্রেইল যেন ছবির মতো।

সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে বের হয়ে যাওয়া বয়ে যাওয়া ঝিরির পথে পথে বাসা বেঁধেছে হাজারও মাকড়সা।

মাকড়সার জাল ছিড়ে সামনে অগ্রসর হতে হয়। ঢেউ খেলানো পাহাড়ের মাঝখানে বয়ে যাওয়া ঝিরিই ঝরনার একমাত্র পথ। বয়ে যায় এসব ঝিরি যেন পাহাড়ের আশীবার্দ, ঝিরির শেষ প্রান্তে থাকে ঝরনার জলধারা।

তোজেংমা’র সবচেয়ে সুন্দর রূপ হল দুই ঝরনা একই খুমে এসে পড়েছে। এই পথে পথে যেতে দেখবেন পাহাড়ের ঢেউ।

রৌদ্রময় আকাশে নীল রংর ছড়াছড়ি। সূর্যের খরতাপ মাথার নিয়ে পাহাড়ি আদিবাসীরা বুনন করছে জুমের ক্ষেতে। এ শুধু সাধারন জুম চাষ নয়। সার বছরের স্বপ্ন বুনন হয় পাহাড়ে খাঁজে খাঁজে। দুর্গম পাহাড়ে আদিবাসীদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায় জুমচাষ।

জুম ক্ষেতের পাশ দিয়ে যেতে হবে ঝিরি পর্যন্ত। ঝিরিপথ মানেই তো ট্রেকিংয়ের কষ্ট অর্ধেক কমে যাওয়া। তোজেংমা ঝরনায় যেতে বাকি পথটুকু এই ঝিরি পথে হেঁটে যেতে হবে। বন্য পরিবেশে ঝিরির পানি কেটে কেটে সামনে অগ্রসর হতে হবে। বড়-ছোট পাথরে ভরা ঝিরির পথ। কোথাও কোথাও ঘন সবুজ আচ্ছাদন। বড় বড় লতা নেমেছে গাছের উপর থেকে। প্রধান ঝিরি থেকে আলাদা বাঁক নিয়ে তোজেংমা'র ট্রেইল ধরে পথ চলতে হয়। ঝিরি, পাথর, পানির স্রোত এসব পেরিয়ে তবে চোখে পড়বে দুই পাথরের বৃহৎ দরজা, মানে দাঁড়িয়ে আছে দুটো পাহাড়। মনে হবে ঝরনার স্রোত বোধহয় এই দুটো পাথুরে পাহাড়ের মধ্যভাগ জুড়ে জলের স্রোত বয়ে নিয়ে গেছে।

পাথুরে পাহাড় ছাড়িয়ে সামনে যেতেই দৃষ্টি আটকাবে ঝরনায়। পাহাড় বেয়ে নিরন্তর পানির স্রোত নামছে। বুনো পথে পাহাড়ি ঝরনা তোজেংমা।

প্রয়োজনীয় তথ্য: দিঘীনালা থেকে সরাসরি মোটরবাইকে যেতে হবে আলমগীর টিলা পর্যন্ত। বাকি পথ হাঁটতে হবে (ট্রেকিং)।

ঢাকা থেকে শুধুমাত্র শান্তি পরিবহনের বাস দিঘীনালা পর্যন্ত যায়। এছাড়া খাগড়াছড়িগামী যে কোনো বাসে খাগড়াছড়িতে এসে, খাগড়াছড়ি শহর থেকে সিএনজি বা পিকআপে দিঘীনালায় পৌঁছানো যায়।

পাহাড়ি পথ বলে অবশ্যই গাইড নিয়ে যেতে হবে। তোজেংমা ঝরনায় ভ্রমণের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন স্থানীয় ভ্রমণ সংস্থা- সিএইচটি ট্রাভলস ০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭, ০১৫৫৬-৭১০০৪৩।

ছবি: লেখক।