পোশাকের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই আবহাওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ সর্ম্পক তো আছেই। কোন অঞ্চলের আবহাওয়া কেমন সেটা উপর নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ওই অঞ্চলের মানুষগুলোর পোশাক কোন ধরনের হবে।
Published : 14 Apr 2016, 08:41 AM
স্বাভাবিকভাবেই ভারত উপমহাদেশের মানুষগুলো এমন এক বস্ত্র বেছে নিয়েছিল যা তাদেরকে প্রাত্যহিক জীবনের নানা কর্মকাণ্ডে আরাম দেবে। সঙ্গে যোগ হয়েছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়আসয়।
যেমন আপাতদৃষ্টিতে একই নকশার পোশাক হলেও ধনিক শ্রেণির মানুষের পোশাকে থাকতো ভিন্নতা। এইটা অবশ্যই শ্রেণি বিভাজনের জন্যই। শাসক আর শোষিতের মধ্যে একটা বিভেদ তো চিরকালই ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
যাই হোক আসা যাক আমাদের বাংলার পোশাকের উৎসের খোঁজে।
আর্যদের সময় পুরো ভারতবর্ষের গাছের বাকল থেকে তৈরি করা কাপড় ব্যবহারের প্রচলন ছিল। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের বরাতে জানা যায়, বঙ্গদেশে এক সময় কাপড় তৈরি হত গাছের বাকল থেকে। সেকালের আর্য-অনার্য বা মিশ্র জনগোষ্ঠীর মানুষেরা গাছের বাকলকে পিটিয়ে কাপড়ের মতো পাতলা করে, তারপর তা শুকিয়ে গায়ে দেওয়ার যোগ্য করে তুলতো। সাঁচির বৌদ্ধস্তূপের স্তম্ভের মূর্তিগুলোর পরিধানে যে কাপড়ের আবরণ দেখা যায়, তা বাকল থেকে তৈরি হওয়া পোশাকই মনে হয়।
বাকল থেকে তৈরি কাপড়কে বলা হত ‘ক্ষৌম’। এরমধ্যে সেরা জাতের ক্ষৌমকে বলা হত ‘দুকুল’। ‘বঙ্গ’ (এখানে ‘বঙ্গ’ শব্দটি দিয়ে তখনকার পুরো বাংলাকে বোঝানো হয়নি) নামক জনপদের দুকুলের রং ছিল স্নিগ্ধ সাদা। ‘পুণ্ড্র’ নামক জনপদের দুকুলের রং ছিল শ্যামবর্ণের আর ‘সুবর্ণকুডো’র দুকুল ছিল উজ্জ্বল।
সরাসরি বাকল থেকে কাপড় তৈরির পরিবর্তে, বঙ্গদেশে এক সময় সুতিবস্ত্রের প্রচলন শুরু হয়েছিল। এক্ষেত্রে শণ, পাট, অতসি ইত্যাদি গাছের বাকল ব্যবহার করে সুতা তৈরি করা হত।
চাণক্যের অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ থেকে ৪০০ অব্দের দিকে বঙ্গ এবং মগধে রেশমের চাষ হত। এর অর্থ হচ্ছে চীনদেশ থেকে রেশম তৈরির কৌশল ভারতে এসেছিল কিম্বা ভারতবাসী নিজেরাই রেশম তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেছিল।
সে সময়ে রেশম ছিল অতি মূল্যবান সুতা। রাজাদের কাছে উৎকৃষ্ট পাটের কাপড় এবং রেশমের কাপড় ছিল রত্ন স্বরূপ। গাছের বাকল থেকে উৎপন্ন কাপড়ের পাশাপাশি ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে কার্পাস তুলা থেকে সুতা তৈরির কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছিল। চাণক্যের মতে-‘বঙ্গ’, ‘মথুরা’, ‘কলিঙ্গ’, ‘কাশি’, ‘বৎসদেশ’, ‘মহিষদেশ’-এ কার্পাস সুতার কাপড় তৈরি হত। এরপর ভিতরে বঙ্গদেশের কার্পাস সুতার কাপড় ছিল উৎকৃষ্ট।
ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, ‘আদিমকালে পূর্ব-দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরার প্রচলন ছিল না। এই অখণ্ড বস্ত্রটি পুরুষের পরিধানে থাকলে হত ‘ধুতি’, আর মেয়েদের পরিধানে থাকলে ‘শাড়ি’। নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরের ওপরের অংশ উন্মুক্তই থাকত।’ ধুতি কিংবা শাড়ির-বাঙালির পোশাকের মূল ধারনাটি কয়েক হাজার বছর বহাল তবিয়তে টিকে আছে।
কালিদাসের (আনুমানিক খ্রি.পূ ১ম/খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতক) রচনাতে শিকারের পোশাক, সন্ন্যাসীর পোশাক ও ভিক্ষুকের পোশাকের উল্লেখ রয়েছে। তাঁর উল্লিখিত বস্ত্রসমূহ থেকে উষ্ণ ও শীতল আবহাওয়ার উপযোগী পোশাকের ধারণা পাওয়া যায়। আলোচনার সুবিধার্থে পোশাকগুলোকে নারী এবং পুরুষ হিসেবে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে।
প্রথমেই আসা যাক ‘শাড়ি’ নামের মহিলাদের পোশাকের ব্যাপারে। আর্যরা ভারতবর্ষে আসার আগেই নাকি ‘শাটী’ শব্দটির অস্তিত্ব ছিল। সেই হিসেবে বলা যেতেই পারে, শাড়ির ইতিহাস বোধ হয় সাড়ে তিন হাজার বছর কিংবা তারও বেশি পুরানো।
ইলোরা অজন্তার মতো পাহাড়পুর-ময়নামতির পোড়ামাটির ফলক থেকে প্রমাণ যায়, হাজার বছর আগে এই পূর্ববঙ্গে শাড়ির প্রচলন ছিল। সম্ভবত সেই তখন থেকেই এখনও শাড়ির দৈর্ঘ্যের প্রায় একই রয়েছে। বারো হাতের শাড়ির চল এখনও আছে।
মেয়েরা নিম্নাঙ্গে পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুর মধ্যবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত ঝুলিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে পরিধান করতো। এর বর্ধিত অংশ কোমর পেঁচিয়ে বক্ষকে আবরিত করে কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে পরতো। ঘোমটার রেওয়াজ ছিল না। তবে কাজের সময়, শাড়ির বর্ধিত অংশ, যা আঁচল হিসেবে থাকতো তা কোমরে শক্ত করে পেঁচিয়ে বাধতো। এই রীতি এখনও প্রচলিত আছে। এ বর্ণনা বাংলার সাধারণ নারীদের জন্য।
অভিজাত মেয়েরা বাড়তি হিসেবে ভিতরে বক্ষবন্ধনী ব্যবহার করতো, তা একালের ব্রেসিয়ারের মতো নয়। সেকালের কাঁচুলি ছিল চওড়া, কারুকাজ করা নকশাযুক্ত।
সপ্তম শতকে হিউয়েন-সাঙের বর্ণনাতে যে পোশাকগুলির বিবরণ রয়েছে সেগুলো সেলাই করা নয়। দীর্ঘ গ্রীষ্মকালের গরম থেকে বাঁচার জন্য অধিকাংশ মানুষই সাদা কাপড় পরত। পুরুষরা একটা লম্বা কাপড় কটি বেষ্টন করে বাহুর নিচে দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে শরীর পেঁচিয়ে ডান দিকে ঝুলিয়ে দিত।
তবে বাংলার সাধারণ মানুষ সেসব থেকে ছিল যোজন যোজন দূরে। কেননা সনাতন হিন্দু ধর্মে সেলাই করা পোশাক পরা নিষিদ্ধ ছিল। ফলে পুরুষরা তিন টুকরা কাপড় ব্যবহার করতো।
বাংলার হোসেনশাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শাহর (রাজত্বকাল ১৪৯৪-১৫১৯) সমসাময়িক কবি বিজয়গুপ্তের রচিত ‘পদ্মপুরাণ’য়ে পাওয়া যায়, সিংহলরাজ চাঁদ সওদাগরের কাছে পট্টবস্ত্র পেয়ে বাঙালিভাবে বস্ত্র পরছেন। পরার ধরন হল ‘একখানি কাচিয়া পিন্ধে, আর একখানি মাথায় বান্ধে, আর একখানি দিল সর্বগায়।’
এ থেকে বুঝায় তখনও বঙ্গদেশের অভিজাত পুরুষেরাও তিন টুকরা কাপড় ব্যবহার করতেন। এর ভিতরে মাথায় বাঁধা কাপড়টি ছিল পাগড়ি। স্থানীয় লোকেরা এর নাম দিয়েছিল ‘পাগ’। গায়ের কাপড় ছিল চাদর আর পরনে ছিল ধুতিজাতীয় কৌপিন।
কালক্রমে পরনের কৌপিন লম্বা করে পরার রীতি চালু হয়। সেইসঙ্গে কোচার ঝুলও বৃদ্ধি পায়। এই চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি হয় ধুতি।
সেকালের মানুষ ধুতি পরতো কাছা দিয়ে। কাছা ছিল ঢিলাঢাল। তবে কর্মজীবী পুরুষ তা পরতো ‘মালকোচা’ দিয়ে। মল্লবীরেরা প্রতিযোগিতার সময় পরনের কাপড় আঁটোসাঁটো করে কাছা দিত। এই থেকে ‘মালকোচা’ শব্দটি এসেছে।
অন্যদিকে গোড়ার দিকে আরবের লোকেরা ধুতি পরতো লম্বা করে কোচা ছাড়া। পরার ধরন ছিল সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতো। পারস্যে এই ধরনের পোশাকের নাম ছিল ‘তাহবন্দ’। বাংলাতে এই শব্দ হয়েছিল ‘তহবন’, ‘তবন’।
‘লুঙ্গি’ নামক নিম্নাঙ্গের পোশাকটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত কিন্তু নামটা এসেছে ‘বর্মি’ শব্দ থেকে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঙালি মুসলমানদের সূত্রে আগত এই শব্দটি ‘তবন’ শব্দটিকে প্রায় অপসারিত করেছে। সঙ্গে একটু ছোট করে পুরুষদের পোশাকের অন্যতম সঙ্গী হয়ে ওঠা গামছার কথা না বললেই না।
সেকালের গামছাকে বলা হত ‘শাঙালি’। আর ‘গা-মোছা’ শব্দ কালক্রমে ‘গামছা’ শব্দে পরিণত হয়েছে। নামকরণেই এর ব্যবহার নিহিত আছে। মাঠে কাজ করার সময় গাম মোছা থেকে গোসলের পর গা মোছার একমাত্র অনুসঙ্গ ছিল এই গামছা। ধুতির সঙ্গে এটার একটা সহাবস্থা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল সেই তখন থেকেই। কর্মজীবী বিশেষ করে চাষীদের কাছে এর জনপ্রিয়তা ছিল অনস্বীকার্য।
মোগলদের মধ্যে সম্রাট আকবরই ভারতবর্ষের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। তাঁর দেখানো পথ ধরেই হাঁটলেন অন্যান্য মোগলরাও। শুরু হল ভারতীয় নারীদের নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে মোগল সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির এক মেলবন্ধন। সে ধারাবাহিকতায় শাড়িতেও মোগলাই আভিজাত্যের সংযোজন।
তবে সেসময়ে অভিজাতদের মধ্যে শাড়ি ব্যাপকভাবে চল না হলেও শাড়িতে আভিজাত্যের উপস্থিতি থাকত পূর্ণমাত্রায়। নানা রকম দামী পাথর ছাড়াও সোনা-রূপার সুতা দিয়ে শাড়িতে নকশার কাজ করা হত। মোগলদের আগ্রহের জন্য মসলিনের শাড়ির উপস্থিতিও থাকত জেনানা মহলে।
মোগলদের জন্য মসলিন কাপড় সংগ্রহের জন্য সরকারি লোক নিয়োগ দেওয়া হত। আর সম্ভবত মোগল আমলে শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ বা বক্ষ ঢাকার রীতি চালু হয়। তবে তা উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
চৌদ্দ শতকের কবি চণ্ডীদাস লিখেছেন- ‘নীল শাড়ি মোহনকারী/উছলিতে দেখি পাশ’।
প্রথম মা হওয়া নারীকে উপহার হিসেবে দেওয়া হত লাল শাড়ি। শাড়ি পরার ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের বিভাজন ছিল। ধনী মহিলাদের শাড়ি ছিল মলমলের মিহি কাপড়ের। আর গরিবের শাড়ি ছিল সাধারণ সুতি কাপড়ের; তাও আবার ছেঁড়া। প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার করা সুইয়ে তালি দেওয়া শাড়ি পরতে হত তাদের।
পনেরো শতকে উপমহাদেশের পোশাক ও সংস্কৃতিতে মুসলিম প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পরা শুরু করে। ধারাবাহিকতা দেখা যায় উপমহাদেশের নানা প্রান্তে। বাদ পড়েনি বাংলাও। প্রাক-মোগল মুসলিম অভিযানকারীরা, যেমন সুলতান ও খানেরা আঁটসাঁট পাতলুন, কোমরের দিকে সরু ও নিচের দিকে ক্রমশ চওড়া ঘাগড়া-সদৃশ আঁটো আস্তিনের একটি লম্বা কোট পরত। এটাকে আলখাল্লাও বলা যেতে পারে। সমাজের উপরিতলার লোকেরাই মূলত এ ধরনের ফ্যাশন অনুসরণ করতেন। বাংলার আপামর জনসাধারণকে এর মধ্যে টেনে আনাটা যুক্তিসঙ্গত হবে না।
মাথাকে বেষ্টন করে পাগড়ি বাঁধা হত এবং পাগড়ির কাপড় ছিল পাঁচ হাত লম্বা। পুরুষদের এই পোশাকের সঙ্গে নারীদের পোশাককে তেমনভাবে আলাদা করা যেত না। সূক্ষ্ম পার্থক্য হয়ত ছিল। অভিজাত নারীদের মাথায়ও স্থা পেতো পাগড়ি। তবে তা অনেকটা হালকা এবং ছোট। সেই সময়েও বাংলা গণমানুষদের প্রধাণতম পোশাক হিসেবে ধুতি আর শাড়ি রয়ে গিয়েছিল সমহিমায়।
উনিশ শতকের প্রথমার্ধে আলম মুসাওয়ার নামে এক শিল্পী ঢাকার ঈদ ও মহরমের মিছিলের মোট ৩৯টি ছবি এঁকেছিলেন।
মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য হাতির পিঠে সওয়ার হয়ে নায়েব-নাযিমরা থাকতেন একেবারে সামনের দিকে। দর্শক হিসেবে থাকতেন অভিজাত শ্রেণির লোকজন। এ দেশীয়রাতো থাকতেনই সেই সঙ্গে থাকতেন ঢাকায় অবস্থানকারী ইউরোপিয়ানরা। ছবিগুলোতে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের পোশাক লক্ষ্য করার মতো। অভিজাতদের নিম্নাঙ্গে পায়জামা থাকলেও। পালকিবাহকের পরনে কিন্তু ছিল সেই ধুতিই।
উনিশ শতকের আশির দশকের শেষ দিকে এখানে সেলাই মেশিনের ব্যবহার শুরু হলেও যারা মোগল ঐতিহ্য বহন করতেন তাঁরা হাতে করা সেলাইয়ের কাপড়ই পরতেন।
ভারতবর্ষে শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে জোর চেষ্টা চালায়নি ইংরেজরা। তবে নিজের নিয়ন্ত্রাধীন যে বিষয়গুলো ছিল সেগুলোতে পরিবর্তন আনা জোর চেষ্টা চালিয়েছে তারা। নিজেদের সেনাবাহিনীতে থাকা এদেশি সেপাইদের পোশাক নির্ধারণ করে দিয়েছিল সাহেবরা। শরীরের উপর অংশটিতে ইংরেজদের মতো কোট পরতে দেখি আর নিম্নাঙ্গে যথারীতি থাকতো ধুতি। কি হিন্দু কি মুসলমান-সব ধর্মের সেপাইদের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য ছিল।
ঢাকার বনেদির পরিবারগুলোর সেসময়কার তোলা ছবিতে তাঁদেরকে সেভাবে ইংরেজি পোশাক পরতে দেখা যায় না। যেমন ঢাকার নবাব পরিবারের অন্যতম সদস্য এবং নবাব আহসানুল্লাহর ছোট ছেলে নবাবজাদা আতিকুল্লাহকে সেই ১৯১০ সালেও দেখি স্যুট কিংবা শার্ট না পরতে। তবে তাঁর নিচের দিকে ভাজ করে পরা প্যান্ট আমাদের দৃষ্টি আকর্র্ষণ করে।
তবে একেবারেই যে ছিল না তা কিন্তু নয়। পূর্ববঙ্গে অনেক জমিদারদেরকে কোট ও প্যান্ট পরা অবস্থায় ছবি তুলতে দেখা যায়। এমন কি তারা শিকারের সময়েও ইংরেজদের ন্যায় পোশাক পরিধান করতো।
উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের শুরুতে নারী ও পুরুষ উভয়ের পোশাক শৈলীতে পরিবর্তন ঘটেছে।
ভারতবর্ষে ইংরেজদের প্রশাসন ব্যবস্থা বৃদ্ধি পাওয়া এখানে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের কদর বেড়ে যায়। এই ধরণের শিক্ষিত মানুষগুলো গ্রাম থেকে শহরে উঠে আসতে থাকে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে একটি মধ্যবিত্ত সমাজ। এরা চাকুরিটাকে ব্যাপকভাবে আকড়ে ধরে। আর অফিস-আদালতের পোশাক হিসেবে সাহেবদের পোশাককে বেছে নেয়। অনেক সাহেবদের পোশাক পরে ‘দেশি সাহেব’ হওয়ার চেষ্টায় থাকেন।
মুসলমানদের পায়জামা এবং হিন্দুদের ধুতি প্রায়শ পশ্চিমা রীতির কলার ও আস্তিন বিশিষ্ট শার্টের সঙ্গে পরা হত। কোর্তা বা পাঞ্জাবি অর্থাৎ ঢিলে পোশাক, এর উপরে কটি এবং বাম কাঁধে চাদর বা শাল ছিল আনুষ্ঠানিক পোশাক।
তবে সময় যতই গড়িয়েছে মানুষ ততই অফিস-আদালত এবং জাতীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে পাশ্চাত্য পোশাক বেশি করে পরেছে।
তথ্যসূত্র
* পোশাক- পারভীন আহমেদ এবং জিনাত মাহরুখ বানু, বাংলাপিডিয়া।
* অভিভাষণ। অষ্টম বঙ্গীয় সাহিত্য-সম্মেলনে সভাপতির ভাষণ। তৃতীয় ও চতুর্থ গৌরব। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা সমগ্র। চতুর্থ খণ্ড। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, ডিসেম্বর ১৯৮৯।
* বঙ্গবাসীর অঙ্গবাস। পূর্ণেন্দু পত্রী। প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস লিমিটেড। বইমেলা জানুয়ারি ১৯৯৪।
* শাটি থেকে শাড়ি, রিদওয়ান আক্রাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, প্রকাশ কাল: ২০১৫-০৭-১৭ ২২:৩৭:০৬।
লেখক পরিচিতি
রিদওয়ান আক্রাম, তরুণ ঢাকা গবেষক। নিয়োজিত আছেন সাংবাদিকতায়।
প্রকাশিত বই: ঢাকার ঐতিহাসিক নিদর্শন (২০০৬), বাঙালায়ন, ঢাকা। ঢাকার কোচোয়ানরা কোথায় (২০০৭) রিদম প্রকাশন, ঢাকা। ৩। ড’য়লির ঢাকা (২০০৯) আকাশ প্রকাশন, ঢাকা। ঘটনা সত্য (২০১২) ইছামতি, ঢাকা। ঢাকাই খাবার (যৌথ), (২০১৩), বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা। ঢাকা কোষ (যৌথ), (২০১৩), বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা। পুনশ্চ ঢাকা (২০১৬), বিপিএল, ঢাকা।