পারিবারিক ছবি হচ্ছে একটি পরিবারের চলমান ইতিহাস। একটা সময় ছিল যখন মানুষ ঘরে শুধু প্রয়াত সদস্যের ছবি লাগানো হত। তবে কখনও পুরাতন না হওয়া এই গৃহসজ্জার পদ্ধতি আবার এসেছে নতুন রূপে।
সহজলভ্য ভালো মানের ক্যামেরার কল্যাণে সুন্দর ছবি মানে শুধু বিয়ের ছবি নয়, বরং পরিবারের সদস্যদের সব ধরনের স্মৃতির সুন্দর কিছু ছবি থাকে। পাশাপাশি পারিবারিক সম্পদের মতো সাদাকালো দিনের ছবি মিলিয়ে হতে পারে দারুণ এক ছবির দেওয়াল।
ছবি তোলা এবং ছবির সাজসজ্জা নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ওয়েডিং ডায়েরির প্রধান কর্মকর্তা পলা রহমান জানিয়েছেন কীভাবে ছবি দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন।
- একই দেয়ালে অনেকগুলো ছবি থাকলে ফ্রেমগুলোর একটার থেকে আরেকটার দূরত্ব সমান রাখতে হবে। তবে ফ্রেমের মাপ একই হবে এমন কোনো কথা নেই। কয়কটি মাপের ফ্রেম লাগাতে পারেন।
- এক দেয়ালে অনেকগুলো ফ্রেম টাঙানোর ব্যাপার থাকলে, একঘেয়েমি দূর করতে কম্পোজিশনে জ্যামিতিক ডিজাইন আনুন। কোনটার পর কোনটা সাজাবেন এমন একটা প্যাটার্ন আগেই তৈরি করে নিতে পারেন। প্যাটার্নটা কেমন হলে মানাবে তা নির্ধারণ করতে আগে বিভিন্ন সাইজের কাগজ কেটে পাশাপাশি লাগিয়েও দেখতে পারেন। কোনো একটা প্যাটার্ন পছন্দ হলে সেটার মতো করে ছবি বাছাই করে এরপর প্রিন্ট করতে দিন।
- লম্বা কিন্তু ছোট দেয়াল হলে প্যানারোমিক ছবি ভালো দেখাবে। সেক্ষেত্রে ছবির বাছাইটাও গুরুত্বপূর্ণ।
- ছবি বাছাইয়ে সতর্ক হতে হবে। ঘরের কোন দেয়ালে কি ধরনের ছবি থাকছে, সেটা আগেই নির্বাচন করে নিন। যে দেয়ালে পারিবারিক অর্জন যেমন গ্রাজুয়েশন সেরিমনি, কোনো পুরষ্কার গ্রহণ, বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত এরকম ছবি থাকবে, সেখানে সব কটি ছবিই একই রকম রাখুন। বংশ পরম্পরায় পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ মানুষের ছবি একসঙ্গে সেখানেই রাখতে পারেন।
- ইনফর্মাল কিছু আনন্দঘন এবং স্মৃতিময় মুহূর্তের ছবি রাখুন একসঙ্গে। সেখানে থাকতে পারে কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা সন্তানের প্রথম ছবি।
- ঘরের একটা গুরুত্বপূর্ণ দেয়াল বরাদ্দ রাখুন জীবনের স্মরণীয় সব অনুষ্ঠান, উৎসবকে কেন্দ্র করে।
- ছবির ফ্রেম শুধু যে দেয়ালেই থাকতে হবে এমন নয়। রাখতে পারেন, আসবাবের উপর সমতোল জায়গাতেও। তবে ছবি দেয়াল কিংবা আসবাব যেখানেই রাখুন না কেনো, রাখতে হবে দৃষ্টিসীমার মধ্যেই।
ধরুন আপনি ৩টি স্তরে ছবি রাখতে চান। তাহলে মধ্যের ছবিটা রাখুন একটি মাঝারি উচ্চতার মানুষের চোখের সমান্তরালে। এর উপরে এবং নিচে বাকি দুইটা ছবি রাখুন। যদি ৪টি স্তর করতে চান তবে মধ্যের দুইটি স্তরের মাঝামাঝি জায়গাটা হবে চোখের সমান্তরালে। এভাবে ছবি রাখলে সবার দৃষ্টি সীমায় ছবিগুলো থাকবে।
- দেয়ালের রংয়ের দিকে খেয়াল রেখে ছবির ফ্রেম বাছাই করতে হবে। দেওয়াল যদি সাদা অনুজ্জ্বল রংয়ের হয় তবে ফ্রেমের কারুকাজের দিকে মনযোগী হোন। যদি দেওয়ালে কোনো টেক্সচার, উজ্জ্বল রং বা নকশা করা ওয়ালপেপার লাগানো থাকে তবে, ফ্রেমগুলো হবে সাধারণ ডিজাইনের নকশা বিহীন এবং একটি রংয়ের।
- ফ্রেম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ঘরের আসবাবকেও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাচীন ধরণের আসবাবের সঙ্গে খুব সাদামাটা ফ্রেম মানাবে না। আবার দেশীয় ধাঁচে সাজানো ঘরে যদি পাশ্চাত্য ডিজাইনের ফ্রেম রাখেন সেটাও বেমানান। সুতরাং ফ্রেমের ডিজাইন বাছাইয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে আসবাব যদি বেতের বা একদম ডিজাইন ছাড়া কাঠের হয় তবে নানান ধরণের ফ্রেম দিয়েই তৈরি করতে পারেন একটি শিল্পকর্ম।
- ফরাসী শিল্পীরা এই ধরনের ফ্রেমের বৈচিত্র্য তৈরির মাধ্যমে শিল্পকর্ম ভাস্কর্য তৈরি করে থাকে যার কদর বিশ্বজুড়ে রয়েছে।
- কোন ঘরে কি ধরনের ছবি থাকবে সেটা সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন করুন। শোবার ঘরে একান্তই প্রিয় মানুষটির ছবি রাখুন। ইদানীং অনেকেই বিয়ের আগে-পরে প্রিওয়েডিং বা পোস্ট ফটোগ্রাফি করে থাকেন। সেই ছবিগুলো রাখতে পারেন শোবার ঘরে।
এই ছবিগুলো পরবর্তী সময়ে পরিবারের একটা সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকে। যা থাকতে পারে স্টাডি রুমে।
প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে তোলা উচ্ছল মুহূর্তের ছবিগুলো রাখুন হলওয়ে বা প্যাসেজে। ফ্যামিলি রুমের দেয়ালটা পারিবারিক ছবির জন্য খুব সঠিক। ড্রয়িংরুমে খুব পারিবারিক ছবি না রেখে, বিশেষ অর্জনের ছবিগুলো রাখুন।
- ছবির দেয়ালের একঘেয়েমি দূর করতে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের ছবিই না রেখে, মধ্যে মধ্যে রাখতে পারেন কিছু পেইন্টিং, শো পিস, কোনো সনদপত্র, বড় ঘড়ি, অন্য কোনো ধরণের শিল্পকর্ম। তবে সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হল কি-না তাও নিশ্চিত করতে হবে।
দেওয়ালের ছবির রক্ষণাবেক্ষণ
- নোনা ধরে এমন দেয়ালে ছবি না লাগানোই ভালো। যদি ছবি নিতান্তই লাগাতে হয় তবে নতুন করে রং করে তারপর লাগানো উচিত।
- ছবি লাগানোর পর সেই দেয়ালের দিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্পট লাইটের ব্যবহার করলে ভালো হয়। ইচ্ছে মতো লাইট লাগিয়ে ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট না করে, প্রফেশনাল ডিজাইনারের সাহায্য নিলে ভালো হয়।
- ছবির ফ্রেম মাঝেমধ্যে দেয়াল থেকে নামিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, যেন কোনো ভাবেই ফাঙ্গাস না পড়ে। দেয়ালে লাগানো ছবিগুলোর ব্যাকআপ কপি রাখা ভালো। অনেকসময় ফ্রেম বা লেমিনেশন করার সময় ছবির উপরিভাগ নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাকআপ না থাকলে ছবিটি হারিয়ে যাবে।
ছবির মাপ ও প্রিন্ট করার খরচ: ঘরে টানানোর ছবি ৬ ইঞ্চি X ৯ ইঞ্চি মাপের থেকে শুরু হয়। ছবিগুলো মনের মতো আকার দিতে পারেন। বাংলাদেশে ছবি প্রিন্টিং লম্বায় ইচ্ছা মতো বড় করা গেলেও প্রস্থে ৩০ ইঞ্চি এর বেশি হয় না। তাই মাপগুলো এর মধ্যেই রাখতে হয়।
দাম ইঞ্চি হিসাবে— ৬X৯, ২৫ টাকা। ৮X১২, ৮০টাকা, ১২X১৮, ১৫০ টাকা। ২০X৩০, ৭শ’ টাকা। ১৮X৩৬ ১ হাজার টাকা।
চাইলে এই অনুপাতগুলোর বাইরেও ছবি প্রিন্ট করাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে প্রফেশনাল কোনো এডিটরকে দিয়ে ছবিটি সম্পাদনা করে নিতে হবে। ছবি প্রিন্টিংয়ে আকার অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৬ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
দেয়ালে বাঁধাই করার জন্য বাছাই করা ছবি সাধারণত ম্যাট কাগজে প্রিন্ট করলে ভালো হয়। এতে আলোর প্রতিবিম্ব পড়ে ছবির ‘ভিজুয়াল ইফেক্ট’ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে প্রিন্টের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ল্যাবে এই ম্যাট কিংবা চকচকে কাগজের দাম আসলে একই।
সুন্দর দেখাতে এবং ভালোমতো আটকে রাখার জন্য এখন ফ্রেমের ভিতরে ছবির সাইডে করা হয় মাউন্টিং।
মাউন্ট বোর্ডের এই দ্বিতীয় স্তরের ফ্রেমের কারণে ছবির মূল বিষয়বস্তু আক্ষরিক অর্থেই বেশ ফোকাস হয়। খুব জমকালো ফ্রেমের কারুকাজের ভিড়ে মূল ছবিটি আর তখন হারিয়ে যায় না। ছবির ফ্রেমের ভিতরের অংশটি থেকে মাউন্টিংয়ের অংশ বাদ দিয়ে এরপর বাকি মাপ অনুযায়ী ছবি প্রিন্ট করতে হবে।
ছবির ফ্রেম কাঠ, কার্ড বোর্ড, আয়রন, স্টিল, টেরাকোটা অথবা হ্যান্ডমেইড অনেক ধরনের উপকরণেই হতে পারে। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্তও ফ্রেম হয়।
পল্টন, সায়েন্সল্যাব কিংবা নিউমার্কেট ছাড়াও ছবি বাঁধাইয়ের দোকান পাওয়া যাবে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই। ফ্যান্সি ফ্রেমগুলো পাওয়া যাবে বিভিন্ন গিফট শপ, হ্যান্ডমেইড ফ্রেম পাবেন আড়ং, যাত্রা, আইডিয়াস কিংবা সোর্স এ।
ছবি কৃতজ্ঞতায়: সজীব রকিবুল ইসলাম।