হলুদের ডালাকুলা, কিংবা বিয়ের জন্য শেরওয়ানি নাগড়া— পাওয়া যাবে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড ও গাউছিয়াতে। আরও সস্তায় কিনতে হলে যেতে হবে চকবাজারে।
Published : 12 Nov 2015, 03:10 PM
বাজার ঘুরে দেখা যায় বিয়ের নানা অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। মিষ্টির ডালা, পান সুপারির ডালা, হলুদের ডালা, বর-কনের বসার আসন, ফুলের ঝুড়ি ইত্যাদি। এইগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। যেমন রয়েছে নকশার পার্থক্য তেমন রয়েছে দামের পার্থক্য। বাজার ঘুরে একটু যাচাই করে কেনাকাটা করলে সাধ্যের মধ্যে পছন্দসই জিনিস কেনা যাবে।
হলুদ বা বিয়ের অনুষ্ঠানে ‘মঞ্চ’ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই ঠিক করা ভালো যে কেমন বিয়ের করতে মঞ্চ চান? যদি ফুলের প্রাধান্য বেশি রাখতে চান তবে যে কোনো পাইকারি ফুলের দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
রাজধানীর শাহবাগের যে কোনো ফুলের দোকান থেকে চাইলে পছন্দসই ফুলের তোড়া বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। আর যদি মঞ্চে কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয় তুলে ধরার পরিকল্পনা থাকে তাহলে শোলার তৈরি সাজসজ্জার কথা ভাবা যেতে পারে। এতে মঞ্চে নানা রং ও সাজানোর অন্যান্য উপকরণ (নেটের ওড়না, জরি, গ্লিটার, রঙিন বাতি ও ফুল) ব্যবহার করা যাবে।
শোলায় নকশা করেন কাটাবনের এমন এক শিল্পী জানান, যে কোনো নকশা ও আকারে মঞ্চ সাজাতে শোলার কাজ করতে সর্বনিম্ন খরচ হয় ৩শ’ টাকা। তবে নকশা ও আকারের পার্থক্যে এই দামের পরিবর্তন হয়। যারা নিজের পছন্দে কাজ করাতে চান তারা আগে এসে অর্ডার দিয়ে যান। ছোট কাজ হলে দুতিন দিন সময় লাগে। আর বড় কাজে লাগে ৭ থেকে দশ দিন।
“সাধারণত ৩শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকার মধ্যে হলুদের মঞ্চের নকশা করা বোর্ড পাওয়া যায়। সিলিংসহ সম্পুর্ণ মঞ্চ নকশা করতে ৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ করতে হবে।”
হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় ডালা, ঝুড়ি, পাটি, রাখি ইত্যাদি পাওয়া যাবে কাটাবন, এলিফ্যান্ট রোড, গাউসিয়া ও নিউমার্কেটে। এখানে পাওয়া যাবে নানা রকম জরি, লেইস, পুঁথি দিয়ে সাজানো ডালা। এছাড়াও পাওয়া যাবে বর-কনে পুতুল সাজানো হলুদের সেট তবে খরচ হবে একটু বেশি।
এলিফ্যান্ট রোডের ‘জামাই বউ’ দোকানের এক বিক্রেতা জানান, তিনটি ডালার এক সেটের দাম ৫শ’ টাকা। নকশা করা ডালার দাম ৬৫০ থেকে ৮শ’ টাকা। বর-কনে সাজানো হলুদের তিন বাটির সেটের দাম ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকার ডালার চাহিদা একটু বেশি।
‘সানাই’ দোকানের বিক্রেতা শামীম জানান, হলুদের বাটির দাম ১০ থেকে ২০টাকা। প্লাস্টিকের বাটির দাম ১৫ টাকা।
কেউ চাইলে আলাদাভাবে হলুদের জিনিসপত্র না কিনে হলুদের সেট কিনতে পারেন। ট্রে, পাটি, হলুদের বাটি ইত্যাদির তৈরি সেটের দাম পড়বে ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। একটু সস্তায় কিনতে চাইলে গাউসিয়ার দোকানগুলোতে যাওয়া ভালো। তবে নকশার ভিন্নতা চাইলে চলে যেতে পারেন এলিফ্যান্ট রোডে বা কাটাবনে।
গাউসিয়া ও নিউমার্কেটে দেখা যায় মিষ্টি ও পানের জন্য ভিন্ন ধরণের ট্রে, চৌকোনা এসব ট্রে রঙিন কাগজে মোড়ানো। কোনোটা আবার ফুল, লতা-পাতা দিয়ে নকশা করা। এইসব ট্রে এর দাম ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা।
পাগড়ির দাম শুরু ৮শ’ টাকা থেকে। নানা রংয়ের ও নকশার এসব পাগড়িতে রয়েছে পাথর, পুঁতি, লেইস ও এমব্রয়ডারির কাজ। ৭শ’ থেকে ২ হাজার ২শ’ টাকায় পাওয়া যাবে এইসব পাগড়ি।
নাগড়া জুতার দাম ১৫০ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকার মধ্যে। হাল্কা নাগড়ার দাম ১৫০ ৩শ’ টাকা। কাতান, জরি, মখমল ইত্যাদির নাগড়ার দাম ৩৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে নানারকম পাথর ও পুঁতির কাজ করা জুতা। এসবের দাম একটু বেশি।
জরির ঝালর রাখির দাম পড়বে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পাথর ও লেইস বসানো রাখির দাম ৩৫০ থেকে ৪শ’ টাকা। ঝুমকা রাখি ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।
এছাড়াও আলতা, মেহেদি, গ্লিটার ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায় এইসব দোকানে। ৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায় এসব সামগ্রী।
হলুদের আসনের দাম ৮০ থেকে ২শ’ টাকা। পাটির দাম ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। পাটির উপাদানের ভিন্নতায় দামের পার্থক্য হয়।
হলুদ বা বিয়ের মঞ্চে ভিন্নতা আনতে মাটির প্রদীপ, মটকা বা মাটির গামলার ব্যবস্থা করতে পারেন। ঢাকা কলেজের সামনে, গাউসিয়া মার্কেটের মাঝখানের লেনে পাওয়া যায় মাটির তৈজসপত্র। এছাড়া দোয়েল চত্বরে পাওয়া যাবে মাটির জিনিসপত্র।
ছোট বাটির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা। মটকার দাম আকৃতি ও নকশা ভেদে ১৫০ ধেতে ৮শ’ টাকা। বাজেট বেশি থাকলে রং করা বা কাচ বসানো মাটির মটকা কেনা যেতে পারে।
গাউসিয়ার লগন, বধূ-বরণ, বর-কনে, হলুদ বরণ ইত্যাদি দোকানে কম খরচে কিনতে পাওয়া যাবে বিয়ের সামগ্রী। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোড ও কাটাবনে বিয়ে-শাদি, বধূবরণ, সানাই ইত্যাদি দোকানে পাওয়া যাবে একটু ভিন্ন স্বাদ ও নকশার সামগ্রী।
আরও কম দামে কিনতে চাইলে রাজধানীর চকবাজারে চলে যাওয়া যেতে পারে। এলিফ্যান্ট রোড ও গাউছিয়া এলাকার দোকান থেকে সেখানে এসব জিনিসের দাম প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কম।
ছবি: দিপ্ত।