ভারত থেকে বাংলাদেশে যে ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী প্রবেশ করেছে, সারি তাদেরই একটি। বর্ষাকালের পুরো সময় পাহাড়ি ঢলের কারণে এ নদীর পানি বেশ ঘোলা থাকে। বর্ষা শেষে আবারো স্বচ্ছ হতে শুরু করে।
একেবারে টলটলে নীল পানির সারিনদী দেখতে হলে ভ্রমণে যেতে হবে নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মাইনথ্রু পাহাড় থেকে সারিনদীর উৎপত্তি হয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ছাতকের কাছে সুরমার সঙ্গে মিলন ঘটেছে তার।
শীতের শুরু থেকে এ নদীর পানি নীলাভ হতে শুরু করে। একেবারে তলার বালুকণাও খালি চোখে দেখা যায়। এমন স্বচ্ছ স্ফটিক পানির নদী বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই।
সারিনদী ভ্রমণের সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গা সিলেট-জাফলং সড়কের জৈন্তিয়া উপজেলার সারিঘাট। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে নদীতে বেড়ানো সহজ।
ঘাট থেকে এ নদীর পূর্ব দিকে চললে ঘন্টা খানেক সময়ে পৌঁছান যায় লালাখাল। এখানে সারিনদী থেকে দীর্ঘ সিঁড়ি উঠে গেছে টিলার ওপরে। এ টিলার উপরেই লালাখাল টি এস্টেট। পাশেই ছোট্ট একটি বাজার। লালাখালের চারপাশটা ছবির মতো সুন্দর। ব্যক্তিমালিকাধীন লালাখালের এ চা-বাগানে পর্যটকরা সহজেই অনুমতি পান ঘুরে দেখার।
পুরো সারিনদী জুড়েই প্রায় সারা বছর বালু উত্তোলন চললেও শীত মৌসুমে পানি কমে যাওয়া বালু শ্রমিকদের ভিড় দেখা যায়। সকাল-সন্ধ্যা অনবরত বালু বোঝাই নৌকার চলাচল দেখা যায় এ নদী জুড়ে। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে বালু আর নুড়ি পাথর ভেসে আসে এ নদীর স্রোতের সঙ্গে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে সরাসরি সিলেট যাওয়া যায়।
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার ১শ’ টাকা।
এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস এনা পরিবহনের পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।
সিলেট থেকে জৈন্তাপুর কিংবা জাফলংগামী বাসে চড়ে সারিঘাট নামা যায়। ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সারিঘাটে বিভিন্ন রকম নৌকা ও স্পিড বোট পাওয়া যাবে ভ্রমণের জন্য। আকার ভেদে প্রতিটি নৌকার ভাড়া ঘণ্টা প্রতি ভাড়া পড়বে ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
কোথায় থাকবেন
সারিনদীতে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে পারেন সিলেট শহরের কোনো হোটেলে। এ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। তবে সারিনদীর কাছে প্রকৃতির কোলে সময় কাটাতে চাইলে থাকতে হবে লালাখালের পাশে মনোরম দুটি রিসোর্ট ‘নাজিমগড় ওয়াইল্ডারনেস রিসোর্ট’ কিংবা ‘নাজিমগড় ন্যাচার পার্ক’য়ে।
খরচটা একটু বেশি হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশে আভিজাত্যের স্বাদ মিলবে এই জায়গাতে।
তবে ন্যাচার পার্কের খরচটা তুলনামূলক কম। লালাখালের তীর ঘেঁষা এ তাবু রিসোর্টে থাকতে ভালো লাগবে সবার। ন্যাচার পার্কে দুই জনের তাবু ৪ হাজার টাকা। তিনজনের ৫ হাজার টাকা। যোগাযোগ ০১৭৩০৭১২৬০০, ০১৮৪১০০১২০১।