নস্টালজিয়া অ্যান্ড দ্য ফ্লোয়িং লাইফ

ঢাকার উত্তরার গ্যালারি কায়াতে, ‘নস্টালজিয়া অ্যান্ড দ্য ফ্লোয়িং লাইফ’ শিরোনামে শুরু হয়েছে শিল্পী শাহানূর মামুনের একক চিত্র প্রদর্শনী।

শরীফ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2015, 06:31 AM
Updated : 11 Oct 2015, 04:20 PM

জলরংয়ে আঁকা ৪৬টি চিত্রকর্ম নিয়ে নিজের তৃতীয় প্রদর্শনী করছেন, বাংলাদেশের নবীন এই শিল্পী।

শাহানুর মূলত ছবি আঁকেন তার চারপাশের। প্রকৃতি থেকে উপাদান তুলে এনে ক্যানভাসে হাজির করাটাই শাহানূরের কাজের ধরন।

এমনিতেই অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় জলরং আমাদের দেশে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে বেশি। তারপরও শুদ্ধ-শাশ্বত জলরংয়ের কাজ দেখতে পাওয়া যায় না খুব একটা।

আর এ জায়গাতেই ব্যতিক্রম শিল্পী শাহানূর।

বিভিন্ন পুরানো বইপত্র কিংবা দলিলে খুঁজে পাওয়া গ্রাম-বাংলাকেই নতুন রূপে হাজির করেছেন তিনি। কোনো ধরনের পুনরাবৃত্তি নেই তার কাজে, বরং বলা চলে নতুন একটি ভাষা (ফর্ম) দাড় করাতে চাইছেন শাহানূর।

আলো আঁধারিতে বিশেষ আগ্রহ আছে শিল্পীর। বিশেষ করে করে আলোর ব্যবহারেও ভিন্নতা আছে তার। এমনিতেই আলো ছায়ার নানান রকম ব্যবহার দেখতে পাওয়া যাবে শাহানূরের ক্যানভাসে; একই সঙ্গে চোখ মেলে দেখতে হবে রংয়ের ব্যবহার। সময়ের সঙ্গে মৌসুমের সঙ্গে কীভাবে ভোল পাল্টেছে শাহানূরের রং তুলি।

প্রদর্শনী ঘুরতে এসে মুগ্ধতার কথাই জানিয়েছেন ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো বেশ ক’জন।

ফৌজিয়া শবনাম তাদেরই একজন। পেশাগত দিক থেকে নিজেও চিত্রশিল্পী। কথা প্রসঙ্গে বলেন, “শাহানূরের কাজে এক ধরনের প্রাণবন্ত সৌন্দর্য ধরা পড়েছে আমার।”

তার কথায় “মনে হচ্ছে কাজগুলো যেন শাহানূরের সিগনেচার স্টাইল। অদ্ভুত সুন্দর ছবিগুলো। ও গাঢ় রং ব্যবহার করেছে তারপরও রংয়ের মাঝে স্বচ্ছতা আছে।”

শাহানূরের জলরংয়ে দেখতে পাওয়া যায় শহরের দিনরাত্রি, রিক্সা, সরু গলি, দালানের মাঝে তারের জঞ্জাল, বৃষ্টিস্নাত রাত কিংবা রিক্সার ভাঁজে আলো ছায়ার খেলা।

শহরে দিনানিপাত করা মানুষের কাছে ছবিগুলো যেন নিজের চোখে দেখা একেকটা স্মৃতি।

নিজের কাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাই শাহানূর বলেন, “আমি শহরের ছবি আঁকতে চেষ্টা করেছি। ছবি আঁকবার জন্য আমি অনেক জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছি। যেমন পুরান ঢাকা, সদরঘাট, রায়েরবাজার, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রের পাড়, বান্দরবানের লামা, খুলনা, সুন্দরবন, খাগড়াছড়ি এমন অনেক জায়গাতেই গেছি। সেখানে প্রতিদিনকার প্রবাহিত জীবনের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক আঁকতে চেয়েছি।”

“মূলত ২০১৪ আর ২০১৫ এই দুবছর ধরেই প্রদর্শনীর জন্য ছবিগুলো এঁকেছি আমি।” বললেন এই শিল্পী।

তবে গ্রাম-বাংলা উপেক্ষিত থাকেনি শিল্পী শাহানূরের কাছে। গ্রামের চিরায়ত সৌন্দর্য ধরতে গিয়ে নৌকার কাছে ছুটে গেছেন বারবারই। হয়ত নদীর কোলে কাটানো শৈশব বেশ মোটা দাগ কেটেছে তার স্মৃতির ডায়েরিতে।

পাহাড়ের কোলে বর্ষার পাশাপাশি, শহরের রাস্তায় বেমানান নিঃসঙ্গ শেরপার মতো ছাতা মাথায় হেঁটে যাওয়া মানুষটিও এড়িয়ে যায়নি শিল্পীর চোখ। তবে সব কিছুর পরও বিশেষভাবে চোখে পড়বে, রংয়ের ব্যবহারে শিল্পীর পরিমিতি বোধ।

শাহানূরের ভাষায়, “এই রংটা একেবারেই আমার নিজস্ব। এমনিতেই আমাদের দেশে আগে থেকেই জলরং বেশ জনপ্রিয়। তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। সাধারণত ইউরোপিয়ান ধাঁচের রং ব্যবহার করে কিংবা সেই ধাঁচের কাজ দেখেই অভ্যস্ত আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ। তবে আমার রংয়ের টোনটা খুঁজে পেতে কষ্ট করতে হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার রংটা হয়ত একটু ভারী, আবার একই সঙ্গে বর্ষায় অনেক রঙিন আর শীতে একটু বিচিত্র। তবে আমার মনে হয়, চোখ আর মন দিয়ে দেখা একেকটা মুহূর্ত ধরে রাখতে যা যা করা দরকার তাই করবার চেষ্ঠা করে গেছি আমি।”   

স্কুল পালিয়ে বাড়ির পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ময়মনসিংহে বড় হয়েছেন শিল্পী শাহানূর মামুন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সিরামিক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিলেও জলরংয়ের মুগ্ধতা কাটেনি শিল্পীর। সেজন্যই তৃতীয় একক প্রদর্শনী করতে এসেও এখনও জলরংয়ের প্রতি ভালোবাসাই জিইয়ে রেখেছেন তিনি।

প্রথম দুবারের মতো এবারও জলরংই তার মাধ্যম। তবে একক প্রদর্শনীর পাশাপাশি প্রায় চল্লিশটির মতো দলীয় আয়োজনেও প্রদর্শিত হয়েছে শিল্পীর কাজ।    

৯ অক্টোবর শুক্রবার শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী শেষ হবে ২০ অক্টোবর। আর প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন শাহানূর মামুনের জলরংয়ের এই প্রদর্শনীতে।

গ্যালারি কায়ার ঠিকানা: বাসা ২০, রাস্তা ১৬, সেক্টর ৪, উত্তরা, ঢাকা ১২৩০।

ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ।