বিশ্বকাপের জ্যোতিষী

কার হাতে উঠছে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ট্রফি-- বহু চর্চিত এই প্রশ্নটির উত্তর জানা নেই কারও। কিন্তু এ জন্য কি বসে থাকবে মানুষ? তন্ত্র-মন্ত্র কিংবা গ্রহ-নক্ষত্রের সাহায্য নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার ধুম লেগেছে সারাবিশ্বে।

>> রবিউল কমলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2014, 10:23 AM
Updated : 25 June 2014, 10:23 AM
২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ফুটবল বিশ্বকাপে ভবিষ্যদ্বাণী করে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল জার্মান অক্টোপাস পল। গ্রুপ পর্যায়ে জার্মানির জয় থেকে শুরু করে স্পেনের বিশ্বকাপ জয় পর্যন্ত আগে থেকেই ঠিক ঠিক বলে দিয়েছিল সে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সে এবার আর ভবিষ্যদ্বাণী করার সুযোগ পাবে না। কিন্তু পল নেই তো কী হয়েছে? এবার তার জায়গা  নিতে তৈরি জীবজগতের আরও অনেক সদস্য। এই তালিকায় আছে ব্রাজিলের সালভাদরের কচ্ছপ তামার, চীনের পান্ডা ও জার্মান হাতি নেলি।
ব্রাজিলের বাহিয়া রাজ্যে বসবাস তামার নামক কচ্ছপের। যার প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ নিয়ে। যা মিলে গেলে ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ ড্র হবে। তামার যে জলের ট্যাঙ্কে থাকে, সেখানে ব্রাজুকা (বিশ্বকাপের বল) রেখে ক্রোয়েশিয়া আর ব্রাজিলের পতাকা রাখা হয়েছিল। তামার ব্রাজিলের পতাকার দিকে বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত তা স্পর্শ করেননি। অর্থাৎ, ম্যাচটি নিস্ফলা থাকছে। যদিও তামারের কথার সঙ্গে প্রথম ম্যাচের ফলাফলের কোনো মিল দেখা যায়নি। কারণ, ফলাফল হয়েছে তামারের দেওয়া ফলাফলের সম্পূর্ণ উল্টো।

ব্রাজিলের নজর যখন তামারের জলের ট্যাঙ্কে, চীন তখন মেতেছে এক দল পান্ডা-শিশু নিয়ে। বিশ্বকাপে কার বিপক্ষে কে জিতবে? শিরোপা কোন দেশ ঘরে তুলব? এসব নিয়ে এবার আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করবে পাণ্ডা! ব্রাজিল বিশ্বকাপের জ্যোতিষী হিসেবে এবার দেখা যাবে চীনের এই পান্ডাকেও। অক্টোপাস পলের মতো এই পান্ডাই নাকি বলে দেবে বিশ্বকাপের কোন ম্যাচে কে জিতবে।

চীনের এক সংস্থার দাবি এই পান্ডা নাকি বিশ্বকাপের প্রত্যেকটি ম্যাচের নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করবে। পান্ডার অবশ্য এখনও কোনো নাম দেওয়া হয়নি। ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হলে  হয়ত পল পান্ডা নামে ডাকা হবে।

২০১০ দক্ষিণ চীনের শ্যাকাউন প্রদেশের চ্যাংড্যু রিসার্চ সেন্টারের দাবি, তাদের একটি শিশু পান্ডা খেলার ছলে যে কোনো কিছুর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে নির্ভুলভাবে। তারা জানায়, ইতোমধ্যে কিছু কিছু খেলার ক্ষেত্রে নাকি বিষয়টি পরীক্ষা করেও দেখা হয়েছে। ফলাফলও মিলে গেছে সব ক্ষেত্রেই। সিচুয়ান এলাকার এক পার্কের বাসিন্দা এই খুদে পান্ডাদের বয়স এক থেকে দুই বছরের মধ্যে। তাদের উপর দায়িত্ব থাকবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণী করার। ম্যাচের আগে পান্ডা-শিশুদের সামনে তিন ঝুড়ি করে খাবার রাখা থাকবে। দুটো ঝুড়ি দুই সংশ্লিষ্ট দেশের, তিন নম্বরটা ড্র। পান্ডা শিশুরা যে ঝুড়ি থেকে খাবার তুলবে, সেই হিসেবে ম্যাচের ফল ঘোষণা করা হবে।

পান্ডা বা কচ্ছপের ভবিষ্যদ্বাণী দেখে হাসছেন জার্মানরা! হ্যাঁ, তাদের দাবি পান্ডা- কচ্ছপেরা তো আনকোরা জ্যেতিষী। এই বিভাগে ‘এক্সপার্ট’ যদি কেউ থেকেই থাকে তাহলে সে অবশ্যই নেলি। জার্মানির সেরেঙ্গেটি পার্কের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা এই হস্তিনী প্রায় এক দশক ধরে ফুটবল ম্যাচের ফল সঠিকভাবে বলে আসছে। পার্কের ম্যানেজার ফাব্রিজিও সেপের দাবি, ২০০৬ থেকে বিভিন্ন বড় টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৩৩টা ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে নেলি। যার মধ্যে মিলে গিয়েছে তিরিশটা ম্যাচের ফল।

সেপের কথায়, “২০০৬ মেয়েদের বিশ্বকাপ, ২০১০ বিশ্বকাপ, ২০১২ ইউরো— সব টুর্নামেন্টেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে নেলি। ওর সাফল্যের হার যা, তাতে নেলিকেই এক নম্বর পশু-ভবিষ্যৎদ্রষ্টা বলতে হবে।”

ব্রাজিল বিশ্বকাপে তার নিজের দেশ জার্মানির তিনটে গ্রুপ ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে নেলি। তার মতে, পর্তুগালের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ ড্র করবে জোয়াকিম লোর টিম।

বাকি দুটো ম্যাচ তারা জিতবে। নেলির ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে একেবারে একমত জার্মানির সাবেক জাতীয় গোলকিপার সেপ মাইয়ের। তিনি বলেছেন, “আমারও এটাই মনে হয়। পর্তুগালের সঙ্গে ০-০ ড্র হবে। গ্রুপের বাকি দুটো ম্যাচ আমরা জিতব।”

ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ রেচেল রাইলি আবার নানা রকম গবেষণা করে বের করেছেন, এবার বিশ্বকাপ জিতবে চিলি। টিভি শো ‘কাউন্টডাউন’-এর অন্যতম সঞ্চালক রেচেল।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে ইউরো কাপ দিয়ে ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে পল।

২০১০ সালের বিশ্বকাপে তার আটটি ভবিষ্যদ্বাণী হুবহু মিলে গিয়েছিল, যা তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। কিন্তু ওই বছরই প্রাকৃতিক নিয়মে মাত্র আড়াই বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করে সে।