কোরবানির পশু

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি-- ‘ঈদুল আজহা’। এই ঈদুল আজহা নামটি আরবি নাম। বাংলা করলে দাঁড়ায় ত্যাগের উৎসব। আমরা বাংলা ভাষাভাষীরা অবশ্য ঈদটিকে বেশি চিনি ‘কোরবানির ঈদ’ হিসেবেই।

>> মেহেদী বাবুবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2013, 01:05 PM
Updated : 15 Oct 2013, 02:10 PM

কোরবানি শব্দটা এসেছে ফার্সি শব্দ ‘কুরবানি’ থেকে; অর্থ একই। ঈদ-এ-কুরবান অর্থও ত্যাগের উৎসব। আমাদের এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছিল আর্য বা ফার্সিরা। তাই আমাদের এখানে ঈদের নামটাও এসেছে ফার্সি ভাষা থেকেই-- কোরবানির ঈদ।

কোরবানির ঈদে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্যের প্রমাণ হিসেবে তাদের প্রিয় পশু আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে কোরবানি করে। আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ মুসলমানরা পালন করে এই ঈদ।

এই ঈদ আসার আগে তাই সবাই ব্যস্ত হয়ে ওঠে কে কোন পশু কোরবানি করবে, তাই নিয়েই। বসে কোরবানির পশুর হাট। সেই হাটগুলো ভরে ওঠে কোরবানির নানা পশু-- গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বাতে।

চাইলেই অবশ্য যে কোনো পশু কোরবানি দেওয়া যায় না। কোরবানির পশু হওয়ার প্রথম শর্ত হল-- গবাদি পশু হতে হবে। মানে, পোষ মানে এমন পশু। আর দ্বিতীয় শর্ত হল-- খুর থাকতে হবে। শুধু খুর থাকলেই হবে না, সেই খুর দুভাগে বিভক্তও হতে হবে; যাকে বাংলায় বলে ‘অশ্বখুরাকৃতি’, কিংবা ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের মতো খুর। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা-- সবগুলো প্রাণীরই খুর কিন্তু এ রকম।

তবে বাচ্চা পশু কোরবানি দেওয়া নিষেধ। আবার পশুর যদি কোনো রোগ থাকে, সে পশুও কোরবানি দেওয়া যায় না।

গরু

সাধারণত দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে প্রতি বছর প্রচুর গরু এই ঈদে কোরবানি দেওয়া হয়। তবে সবচেয়ে বেশি কোরবানি দেওয়া হয় সম্ভবত বাংলাদেশেই। আর একটি গরু একা যেমন কোরবানি দেওয়া যায়, আবার সাত ভাগ করে সাতজন মিলেও দেওয়া যায়। বাংলাদেশের কোরবানির হাটগুলোতে প্রতি বছর লাখ লাখ গরু আসে। হাটগুলোতে গেলে তাই গরুই চোখে পড়ে বেশি। এসব গরুর দাম ১৫-২০ হাজার থেকে শুরু করে ৩০-৪০ লাখ টাকাও হয়। তবে কোরবানি দিতে হলে গরুর বয়স কমপক্ষে ২ বছর হতে হয়।

ছাগল

কোরবানির পশু হিসেবে ছাগলেরও চাহিদা ভালো। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোরবানির ঈদে ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়। তবে গরুর মতো ছাগল ভাগে কোরবানি দেওয়া যায় না। একটি ছাগল একজনই কোরবানি দিতে পারে। আমাদের দেশে গরুর পরে সবচেয়ে বেশি কোরবানি দেওয়া হয় ছাগল। তাই হাটগুলোতে ছাগলও প্রচুর দেখা যায়। ১ বছর বয়সী যে কোনো ছাগলই কোরবানি দেওয়া যায়। আর এসব ছাগলের দাম ৩-৪ হাজার টাকা থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকাও হয়।

মহিষ

কোরবানির পশু হিসেবে আমাদের দেশে মহিষেরও প্রচলন আছে। সাধারণত গ্রামেই মহিষ কোরবানি দেওয়া হয়। এই মহিষ আসলে গরুরই এক রকমের জাত। তবে মাংস গরুর মাংসের মতো মজাদার না। তাই গরুর চেয়ে মহিষের দামও কম, কাটতিও কম। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও কোরবানির ঈদে মহিষ কোরবানি দেওয়া হয়।

ভেড়া

প্রায় সব দেশেই প্রতি বছর কম-বেশি ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়। তবে গরু, ছাগল বা উটের তুলনায় ভেড়া কোরবানি দেওয়ার পরিমাণ অনেক কম। আকারে-আকৃতিতে ভেড়া-ছাগল একই রকমের, সমান-সমান। তবে ভেড়ার বিশেষত্ব এদের ঘন কোঁকড়ানো পশম। এই পশম অনেক কাজেও লাগে।

বাংলাদেশে কোরবানির পশু হিসেবে ভেড়ারও অল্পবিস্তর চল আছে। মূলত গ্রামাঞ্চলেই ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়।

উট

উটের শুধু পা-ই যে লম্বা, তা না। ওদের গলাও পায়ের মতো অনেক লম্বা হয়। পিঠে বড়সড় একটা কুঁজও থাকে। তবে এরা বেশি বিখ্যাত পানি জমিয়ে রাখার ক্ষমতার জন্য। মরুভূমির জাহাজ নামে পরিচিত এই প্রাণীদের গলায় থলির মতো একটা অংশ আছে; সেখানে ওরা পানি জমিয়ে রাখতে পারে। আর সেই জমানো পানি দিয়েই বেশ কয়েক দিন দিব্যি চালিয়ে নিতে পারে। এ কারণেই, মরুভ‚মিতে চলাচলের জন্য উট-ই সেখানকার মানুষের বড় সহায়। তাই মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোতে গৃহপালিত পশু হিসেবে উট ভীষণ জনপ্রিয়।

খাবার হিসেবেও উটের মাংস বেশ উপাদেয়। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং আরব দেশগুলোতে কোরবানির ঈদে উট-ই বেশি কোরবানি দেওয়া হয়। শুধু সেখানেই না, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও কোরবানির পশু হিসেবে উট বেশ জনপ্রিয়।

বাংলাদেশেও আজকাল কোরবানির ঈদে উট কোরবানি দেওয়া শুরু হয়েছে। সাধারণত ভারতের রাজস্থান থেকে এসব উট আমদানি করা হয়। তবে কোরবানির অন্যান্য পশুর তুলনায় উটের দাম একটু বেশি-ই; একেকটা উটের দাম ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

দুম্বা

মধ্যপ্রাচ্য তো বটেই, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও প্রচুর দুম্বা কোরবানি দেওয়া হয়। তবে আমাদের দেশে কোরবানির পশু হিসেবে দুম্বার চল নেই বললেই চলে। দুম্বা আকার-আকৃতিতে অনেকটা গরুর মতোই। অবশ্য এদের গায়ে লম্বা লম্বা পশমও থাকে। আর মাংসও খেতে বেশ সুস্বাদু।