কুমির! সে আবার তিতির মামা! ভাবো তো একবার। মা’রতো চক্ষু ছানাবড়া! তিতিকে কাছে নিয়ে বললো, কী! তুই কুমিরের সাথে খেলতে গিয়েছিলি? কুমির তোর কিসের মামা? তিতি বললো, জানো মা, কুমির মামা আমাকে সাঁতারও শিখিয়েছে।
মা তো এবার রেগে টং। সাঁতার শিখিয়েছে মানে? দেখি তো- বলেই তিতিকে কাছে ডেকে দেখে, তার শরীর পুরো ভেজা। তখন মা ঠোঁট দিয়ে বিলি কেটে কেটে তিতির গায়ের পালক শুকিয়ে দিতে লাগলো। তিতি বললো, জানো মা কুমির মামা না...
- আবার কুমির মামা? শোন তিতি, কুমির কখনো মুরগীর মামা হতে পারেনা। ও তোকে কখন কপ করে গিলে খেয়ে নিবে, তার নেই ঠিক। আর কোনদিন ঐ পুকুর পাড়ে যাবিনা।
মা’র কথা শুনে তিতি খুব কষ্ট পেল। বললো, কেন মা? কেন আমি মামার কাছে যাবোনা? তিতিকে কাছে নিয়ে মা ভালো করে বোঝায়, সে যেন আর পুকুর পাড়ে না যায়। আর যদিওবা যায়, তবে যেন ঐ কুমিরের সাথে আর না মেশে। মা বললে কী আর না করা যায়! তিতিও পারলো না, মা’র কথায় মাথা নেড়ে সায় দিল। মা মনে মনে একটু শান্তি পেলো। তখন সে তিতিকে নিয়ে পাশের মাঠে গেল, ধান খেতে।
মাঠে যেতে যেতেও মা তিতিকে সেই কুমিরের সাথে মিশতে না করলো। মাঠে গিয়ে ওরা মনের সুখে ধান খেতে লাগলো। ধান খেতে খেতে ওদের গলার থলি ভরে একদম ফুলে উঠলো। তিতির খুব পানির তেষ্টা পেলো। সে বার বার মা’র কছে পানি খেতে চাচ্ছে, কিন্তু মা পানি কোথায় পাবে? পানির তেষ্টায় তিতি খুব কষ্ট পাচ্ছে। মায়েরও খুব পানির তেষ্টা পেয়েছে। ওদের বাড়ি তো সেই মাঠ পেরিয়ে। এখন কী করবে দু’জন? মা তো চিন্তায় অস্থির হয়ে গেল।
এমন সময় একটা হাঁস তার বাচ্চাদের নিয়ে ঐ পথ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিল। তাদের দেখে তিতির মা জিজ্ঞেস করলো, হাঁস ভাই, হাঁস ভাই, তুমি কি আমাদের বলতে পারো, পানি পাই কোথায়? হাঁস বললো- হ্যাঁ ভাই, পারবো না কেন। সেখান থেকেই তো আমরা এলাম। মাঠের পরেই আছে বিশাল একটা পুকুর। সেখানেই তুমি পানি পাবে। তিতির মা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। যাক বাবা, পানির খোঁজ তো পাওয়া গেলো। হাঁসকে ধন্যবাদ দিয়ে তিতি ও তার মা ছুটলো পুকুরের খোঁজে।
যেতে যেতে যেতে... একসময় তারা পুকুরের দেখা পেলো। এখন নিশ্চয়ই আয়েশ করে পানি খাওয়া যাবে। তারা পুকুরের কাছে গেলো।
গিয়ে যেই পানিতে মুখ দিতে যাবে, অমনি একটা বিশালদেহী কুমির হুঁশ করে ভেসে উঠলো। বলে কিনা- পানি খেতে এসে আমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলি! তিতির মা বললো- আমাদের খুব তেষ্টা পেয়েছে তো... আমাকে না দাও, আমার বাচ্চাটাকে একটু পানি খেতে দাও। তিতি তক্ষুণি বলে উঠল- না মা, আমরা দুজনই পানি খাবো। না খেলে একজনও খাবোনা। বলেই কুমিরটাকে বললো- মামা, আমরা একটু পানি খেয়েই চলে যাবো। ওমা! কুমিরটা বলে কিনা, কে তোর মামা! আমি কারো মামা না। যা ভাগ এখান থেকে। এবার তিতির মা বললো- তুই সকালে এখানে খেলতে এসেছিলি? এই তোর মামা! তিতি বললো- না মা, এটাতো আমার সেই মামাটা না। বলেই সে ‘মামা মামা’ বলে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো। কুমিরটা তো রেগেই টং। তবুুও তিতি ‘মামা মামা’ বলে ডেকেই চলেছে।
যখন তিতির মা নিশ্চিত হয়ে গেল, এক্ষুণি বুঝি কুমিরটা গপ করে তিতিকে খেয়ে ফেলবে, এমন সময় একটা সুন্দর কুমির এসে হাজির হলো ওদের সামনে। তিতিকে দেখে তো সে মহা অবাক। ছুটে এসে বললো- কি হয়েছে মামা? তিতি বললো- দেখো না মামা, এই দুষ্টু মামাটা আমাদের একটুও পানি খেতে দিচ্ছেনা। তখন সুন্দর কুমিরটা চোখ গরম করে তাকিয়ে দু'টো রামধমক দিতেই, অন্য কুমিরটা সুড়সুড় করে সরে গেলো। তিতি ও তার মা মন ভরে পানি খেলো।
তখন সুন্দর কুমিরটা তিতিকে বললো- উনি তোমার মা, তাইনা তিতি? তিতির মা তো মহা অবাক। বললো- তুমি আমাকে চেনো? কুমিরটা বললো- তিতির মুখে তোমার কথা শুনেছি। তিতির মা বললো- তোমার কথাও আমি শুনেছি ভায়া। তারপর তিতির মা ও তিতি কুমিরকে ধন্যবাদ দিয়ে মনের আনন্দে বাড়ি ফিরে গেলো।
সেদিন থেকে প্রতিদিন তিতি ঐ পুকুরে খেলতে আসে। মাঝে মাঝে ওর মাও আসে। আর সেই পাঁজি কুমিরটা ওদের দেখে রাগে দাঁত কিড়মিড় করে। তবে সুন্দর কুমিরটা চোখ পাকিয়ে তাকালেই, লেজ গুটিয়ে সুড়সুড় করে রাস্তা মাপে। কথাটা ঠিক রাস্তা মাপে হবে না; বলা যায় পুকুর মাপে, তাই না?