জাগলিং করার দিন

সার্কাসে বা মেলায় একটা লোককে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে অনেকগুলো বল বা বোতল নিয়ে বাতাসে ছুড়ে মেরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেলছে। এই খেলাটার নাম জাগলিং। যিনি এই কসরত দেখান তার নাম জাগলার। কসরত দেখানোর সময় তার দুই হাতে কম করে হলেও তিনটা বল, বোতল বা অন্য কিছু থাকে। জাগলার দুইটি বস্তু দুই হাতে রাখেন বাকিগুলো বাতাসে ঘুরতে থাকে। খুব দ্রুত তিনি হাতের বস্তুকে বাতাসে ছুড়ে দেন এবং বাতাসে মুক্তভাবে পরতে থাকা বস্তুটিকে লুফে নেন।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2017, 09:09 AM
Updated : 17 June 2017, 09:09 AM

জাগলিং কসরতটি দেখতে অনেক মজার আর সহজ মনে হলেও এটা বেশ কঠোর শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ফল। এখানে ক্ষিপ্র গতিতে বাতাসে থাকা বস্তুগুলোকে ধরতে হয় এবং হাতে থাকা বস্তুকে বাতাসে ছুঁড়তে হয়। কোনো কোনো জাগলার এটা এতই দ্রুত করোতে পারেন যে আলাদা করে বস্তুকে দেখা যায় না বরং বস্তুগুলো নড়াচড়া করার পথের বলয়টাই শুধু দেখা যায়। কোনো কোনো জাগলার তো আগুনের মশাল বা ছুরির মতো ভয়ংকর বস্তু দিয়েও এই খেলা দেখিয়ে থাকেন।

জাগলিং এর কসরত দেখিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করার প্রচলন অনেক প্রাচীন, ১৫শ শতকে মিশরে জাগলিং করা হতো এমন নিদর্শন রয়েছে। অনেকের ধারণা এর গোড়াপত্তন মিশরেই আবার অনেকেই বলেন অন্য কোথাও, মিশরের সমৃদ্ধ সভ্যতা এবং লিখিত রূপে ইতিহাস থাকার কারণে এটি মিশরে এসে স্বীকৃতি পায়।   

প্রাচীন মিশর যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ছিল, বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ একটি জনপদ হচ্ছে উত্তর আমেরিকা। এত ধরণের বিনোদনের মাধ্যম থাকার পরেও এখানে প্রাচীন বিনোদনের শাখাগুলো খুব সফলতার সঙ্গে চর্চা করা হয়। যারা এগুলোর চর্চা করেন তাদের বেশ কদরও রয়েছে সেখানে।

আমেরিকাতে এখনও খুব সফলতার সঙ্গে এসব জাগলিং-এর অনুষ্ঠান হয়। দলে দলে লোক সেইসব অনুষ্ঠান দেখতে যায়। আবার মেলা যেটাকে ওরা ওদের ভাষায় ওরা কার্নিভাল বলে সে ধরণের অনুষ্ঠানেও জাগলারদের দেখা যায়।

১৯৭৫ সালের ১৭ জুন তারিখে সারা পৃথিবীর জাগলাররা মিলে একটি সংগঠন তৈরি করেন। নাম দেন, 'ইন্টারন্যাশনাল জাগলার্স এসোসিয়েশন' বা জাগলারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন। এ সংগঠনের কাজ হচ্ছে সারা পৃথিবীর মানুষকে এই দারুণ কসরতটি সম্পর্কে জানানো এবং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জাগলারদের সহায়তা করা নিজেদের মধ্যা ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলা। সে লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে তারা ১৭ জুন তারিখটাকে “বিশ্ব জাগলিং দিবস” ঘোষণা করেন, যেন সারা বিশ্বময় তারা জাগলিং এর বিষয়টা ছড়িয়ে দিতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই দিনটি আমরা কেন উৎযাপন করব? প্রাচীন এই কসরতকে সম্মান করার বিষয় তো রয়েছেই, তার সঙ্গে এটা কীভাবে শিখা যায় বা এটি শিখতে একজন জাগলারকে কতটা অধ্যবসায় করোতে হয় সেটা সম্পর্কেও জানার জন্যেও এমরা দিনটা উৎযাপন করতে পারি। জাগলিং সম্পর্কে ইন্টারনেট থেকে আরও তথ্য জানতে পারি, দুই একটা হালকা জিনিস নিয়ে নিজেরাও জাগলিং করার চেষ্টা করে দেখতে পারি। জাগলিং শিখে ফেললে বিষয়টা খুব মন্দ হয় না। এমনিতে জীবনের নানান সমস্যাকে এভাবেই আমাদের ভারসাম্য রাখা শিখতে হয়। পার্থক্য হচ্ছে সেটা সবাই দেখতে পারে না। 

ছবি-উইকিপিডিয়া