সংখ্যার খেলা ‘সুদোকু’

তোমরা যারা গণিত ভালোবাসো তারা হয়তো সুদোকুর কথা শুনেছো। সুদোকু হচ্ছে সংখ্যার খেলা। সহজ করে বললে, এটি হলো গাণিতিক ধাঁধা। এখানে একটি বড় বর্গের ভিতরে অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বর্গ ঘর থাকে, তাতে থাকে অনেকগুলো দৃশ্যমান ও লুকানো সংখ্যা। দৃশ্যমান সংখ্যাগুলোর সাহায্য নিয়ে লুকানো সংখ্যাগুলো খুঁজে বের করাই সুদোকু খেলা। অনেকটাই গোয়েন্দা গোয়েন্দা খেলার মতো। পার্থক্য হচ্ছে চোরকে নয়, খুঁজে বের করতে হবে লুকিয়ে থাকা সংখ্যাগুলোকে।

কাওসার ফারহাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2015, 07:53 AM
Updated : 6 Oct 2016, 00:07 AM

সুদোকু শেখাটা অনেক সহজ। এতে কোনো নির্দিষ্ট ভাষায় সীমাবদ্ধতা নেই। সংখ্যা ও নিখাদ যুক্তি সুদোকু দিয়ে মিলাতে হয়। তাই সব দেশের ও ভাষার মানুষের কাছে এটি সমান জনপ্রিয়।

খেলাটি সমান সংখ্যক সারি ও কলাম নিয়ে গঠিত হয়। একটি সাধারণ ৯×৯ সুদোকুতে ৮১ টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বর্গ ঘর থাকে। এতে ৯টি করে সারি ও কলাম এবং ৯টি ননেট থাকে। ৯×৯ বর্গাকৃতি সুদোকুকে ৯টি ৩×৩ গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতিটি গ্রুপকে ননেট বলা হয়। সুদোকু সমাধানের নিয়ম হচ্ছে প্রতিটি সারি, কলাম ও ননেটে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোকে শুধুমাত্র একবার করে ব্যবহার করা যাবে। সারি ও কলাম বরাবর পর্যবেক্ষণ করে লুকানো সংখ্যাগুলোকে খুঁজে বের করাতেই সুদোকুর মজা।

উনিশ শতকে সংখ্যা দিয়ে হরেক রকমের পাজল তৈরির করার একটা প্রচেষ্টা চলছিলো। বলতে পারো সুদোকুর শুরু তখন থেকেই। জুলাই, ১৮৯৫-এ ‘লা ফ্রান্স’ নিউজ পেপারে একটি পাজল প্রকাশিত হয়। সেটি ছিলো আধুনিক সুদোকু ও জাদুবর্গের একটি কম্বিনেশন। পরবর্তীতে ফ্রান্সের সংবাদপত্র ও পত্রিকাগুলোতে এই পাজল প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়। এল’ইকো ডি প্যারিসে সাপ্তাহিক ভাবে তা প্রায় এক দশক প্রকাশিত হতে থাকে। কিন্তু বাঁধ সাধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এরপর এক দীর্ঘ বিরতি।

১৯৭৯ সালে বিখ্যাত ‘ডেল’ ম্যাগাজিনে একটি সুদোকু প্রকাশিত হয়। পাজলটির নাম ছিলো সংখ্যা বসাও (Number place)। এর উদ্ভাবক আমেরিকার এক অবসরপ্রাপ্ত স্থপতি হাওয়ার্ড গার্নস। বলা হয়, এটি থেকেই আধুনিক সুদোকুর শুরু।

১৯৮৪ সালে জাপানের ‘নাইকোলিস্ট’ পত্রিকা তাদের এপ্রিল সংখ্যায় বর্তমানে প্রচলিত সুদোকু প্রকাশ করে। জাপানীরা মজা করে পাজলটির নাম দেয় ‘অবিবাহিত ব্যক্তি’। কারণ, প্রতিটি কলাম ও সারিতে একটি পূর্ণসংখ্যা একাকী থাকে। সেই নামের সঙ্গে মিল রেখে জাপানি ভাষায় ‘suujiwadokushinnikagiru’ নামে সংখ্যার ধাঁধাঁটি ছাপা শুরু হয়। পরে প্রতিটি শব্দের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে SUDOKU নামকরণ করা হয়।

১৯৮৯ সালে গার্নেস মৃত্যুবরণ করেন। মানুষ হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু তার কাজ নয়। গার্নেসের মৃত্যুর অনেক পরে লন্ডনের বিখ্যাত দ্য টাইমস পত্রিকার জন্য ওয়েনি গোল্ড একটি সুদোকু প্রোগ্রাম লিখেন। দ্য টাইমস ২০০৪ সালের ১২ নভেম্বর তা প্রকাশ করে। দ্য টাইমস এর মতো বিখ্যাত পত্রিকায় সুদোকু পাজল প্রকাশিত হবার পর বিশ্বের অন্যান্য অংশেও এটি অনেক জনপ্রিয়তা পায়।

এরপর থেকেই সুদোকু ক্লাব, চ্যাট রুম, সুদোকু সমাধানের কৌশল নিয়ে বই, ভিডিও টিউটোরিয়াল, মোবাইল ফোন গেমস, কার্ড গেমস, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান… কী হয়নি! পৃথিবীব্যাপী কয়েক হাজার দৈনিক সংবাদপত্রে প্রতিদিন সুদোকু পাজল প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমানে শুধুমাত্র জাপানেই ছয় লক্ষ কপিরও বেশি সুদোকু ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় প্রতি মাসে।

সুদোকুর বিশ্বব্যাপী সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের দেশেও নিয়মিতভাবে সুদোকু প্রকাশিত হচ্ছে দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে, প্রকাশিত হয়েছে বই এবং সুদোকু ম্যাগাজিন। 

বিজ্ঞানীরা দাবী করেন, সুদোকুর শারীরিক সুফলও আছে। মস্তিষ্কের একটি অসামঞ্জস্যতা হচ্ছে আলঝেইমার। যার কারণে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী, নিয়মিত সুদোকু সমাধান চর্চা করলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের আলঝেইমার রোগের মতো অনেক সমস্যা কেটে যায়। মানসিক বিকাশে সুদোকু সমাধান করা খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তাহলে, আর দেরি কেন? আমাদের দেশেও শুরু হোক সুদোকুর অগ্রযাত্রা।