আলোকচিত্র দিবস

আজকে ১৯ অগাস্ট দিনটি অন্য সব দিনের মতো সাধারণ একটি দিন। কিন্তু যারা আলোকচিত্র তুলে বা আলোকচিত্র তুলতে ভালোবাসে তাদের জন্য আজকের দিনটা অন্য সব দিনের থেকে একটু আলাদা। আজকে আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র দিবস।

>>মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2015, 10:20 AM
Updated : 19 August 2015, 10:45 AM

মানুষের সময়কে ধরে রাখার চেষ্টা অনন্তকালের। যখন সুন্দর একটি সকাল হয় অথবা আকাশটা লাল-নীল করে সূর্যটা ডুবে যায় তখন কার না মনে হয় এই সময়টিকে ধরে রাখি! এই ধরে রাখার চেষ্টা শুধু যে প্রকৃতি থেকে আসে তা কিন্তু না। তোমার প্রতিদিনের কাজের মাঝেও অনেক কিছু ধরে রাখতে মনে চায়। এই যেমন ধরো তুমি যদি কোথাও বেড়াতে যাও যেই জায়গার সঙ্গে তুমি নিজের একটি স্মৃতি রাখতে চাইতেই পারো। অথবা ধরো তোমার স্কুলের জামা পড়ে প্রথম স্কুলে যাওয়ার আলোকচিত্র তোমার মা ধরে রাখতে চাইবেন যেন বড় হয়ে গেলও তুমি দেখতে পারো তোমাকে দেখতে কেমন লাগছিলো।

মানুষসহ প্রথম আলোকচিত্র। এই আলোকচিত্রের এক্সপোজার ছিল ১১ মিনিট। ধারণা করা হয় এখানে যে মানুষটিকে পা তুলে দাঁড়িয়ে আছেন, উনি মুচিকে দিয়ে জুতা পলিশ করাচ্ছিলেন। নাহলে একটি মানুষ এতক্ষণ কেনই বা শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকবেন?

এই সব অনুভূতি থেকেই মানুষের আলোকচিত্র তুলে রাখার ভাবনাটার শুরু হয়। প্রথম ক্যামেরা যাকে ‘ক্যামেরা অবসকিউরা’ (camera obscura) বলা হয় এর উৎপত্তি প্রায় খৃষ্টপূর্ব ৪শ শতকে। ক্যামেরা অবসকিউরা খুব সাধারণ একটি ক্যামেরা। এটি মূলত একটি বদ্ধ বাক্স, একটি ছিদ্র দিয়ে আলো প্রবেশ করিয়ে একটি উল্টো বিম্ব তৈরি করা হত। তবে এটি স্থায়ী কিছু ছিলো না। এ থেকে শুরু আলোকচিত্রটির একটি ধারণা পাওয়া যেত। সেই আলোকচিত্রটি পরে শিল্পীরা হাতে আঁকতেন। এঁকে ঠিক আলোকচত্র বলা যায় না। এঁকে ছবি বলা যেতে পারে।

আজকে তোমরা যে আলোকচিত্রগুলো দেখো সেগুলোর ইতিহাস অবশ্য অনেক পরের। এই ধরো, ১৯শ শতকের শুরুর দিকের। সেসময় মানুষ একটি তলের উপরে রাসায়নিক পদার্থ ব্যাবহার করে বিম্বের একটি স্থায়ী আলোকচিত্র তৈরি করা শিখে ফেলে। ১৯ এবং ২০ শতকের ক্যামেরার প্রযুক্তি অনেক সামনে এগিয়ে যায়। কোডেক নামে একটি কোম্পানি ব্রাউনি নামের একটি ক্যামেরা বাজারে ছাড়ে। এই ক্যামেরাটাই আলোকচিত্র তোলার এ যন্ত্রটিকে সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে আসে।

ইদানীং আলোকচিত্র তোলা বিষয়টি খুবই সহজ এবং সাধারণ হয়ে গিয়েছে। প্রায় সবারই হাতে হাতে একটি ক্যামেরা মোবাইল রয়েছে। তবে এই ক্যামেরা মোবাইলের ইতিহাস মাত্র ১৫ বছরের। ২০০০ সালে সবাই মোবাইল বলতে বুঝতো কথা বলার যন্ত্র, সেখানে যে আলোকচিত্রও তোলা যাবে এটা ছিলো কল্পনারও বাইরে। আমাদের এখনকার ক্যামেরা বেশিরভাগই ডিজিটাল ক্যামেরা। এই ডিজিটাল ক্যামেরাও হাতে হাতে এসেছে ২০ বছর আগে। এর আগে যে এনালগ ক্যামেরাগুলো ছিলো সেগুলোতে ৩৫ মিলিমিটার একটি ফিল্মের রিল থাকতো। সেখানে ৩৬টি মোটে আলোকচিত্র তোলা যেত। সেই আলোকচিত্র আবার ডার্ক রুমে নিয়ে নেগেটিভ বের করা লাগত সেই নেগেটিভ থেকে আবার বিরাট কারসাজি করে প্রিন্ট বের করা হতো। তোমরা যারা মেমরি কার্ড আর ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে কাজ করো তারা বুঝতেই পারছো এনালগ ক্যামেরায় কত যন্ত্রণাটাই না হতো।

প্রথম মানুষ বিহীন আলোকচিত্র

এ তো গেলো ক্যামেরার বিবর্তনের গল্প এবার বলি আজকের দিনটি কীভাবে আলোকচিত্র দিবস হলো তার কথা। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ফটোগ্রাফার কোরসেন আরা এই দিনটিকে ফটো ডে বা ফটোগ্রাফি ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। তার উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে আলোকচিত্র তুলতে এবং আলোকচিত্র অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে উৎসাহী করা। আলোকচিত্র মানুষের ভাব আদান-প্রদানে অনেক শক্তিশালী একটি মাধ্যম। তুমি আলোকচিত্রর মাধ্যমে ঘরে বসেই পুরো পৃথিবীকে দেখে ফেলতে পারো। পৃথিবীকে তোমার অনুভূতিও ব্যক্ত করতে পারো একটিমাত্র আলোকচিত্রর মাধ্যমে।

এ বিশেষ দিনটি তুমি কীভাবে পালন করতে পারো?

হতে পারে তুমি আলোকচিত্র তোলার বিষয়ে একজন মোটামুটি দক্ষ মানুষ। এটিও হতে পারে যে তুমি আলোকচিত্র তোলার বিষয়ে কিছুই জানো না। কিন্তু আলোকচিত্র তুলতে পারো বা না পারো আলোকচিত্র তোলার বিষয়ে তোমার আগ্রহের অভাব নাই। তাহলে আজকের দিনটি তোমার জন্যই--

১। আজকের দিনে তুমি আলোকচিত্র তোলার এই প্রযুক্তি সম্পর্কে তোমার জ্ঞান আরও বাড়াতে পারো।

২। অনেকদিন ধরে যদি ফটোগ্রাফি শিখার প্ল্যান করতে থাকো তাহলে আজকেই শিখা শুরু করে দিতে পারো।

৩। একটি ফটো এক্সিবিশনে গেলেও বেশ ভালো হয়। ভালো আলোকচিত্র তোলার পূর্বশর্তই হচ্ছে অনেক অনেক আলোকচিত্র দেখা

৪। আর যদি তোলার বিষয়ে তোমার বেশ দক্ষতা থেকে থাকে তাহলে আজকের দিনে অন্যদের আলোকচিত্র তোলার বিষয়ে একটি ক্লাসই নিয়ে নাও।

তাহলে আর বসে থাকা কেন, বের হয়ে যাও আলোকচিত্র দিবস উৎযাপন করতে।