নাগরিক জীবনের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি ও অবসাদ কাটাতে একটু স্বস্তির জন্য মানুষ পার্কে আসে। কিন্তু রাজধানীর গুটিকতক পার্কের মধ্যে অন্যতম ও পুরান ঢাকায় একমাত্র বাহাদুর শাহ পার্কে নগরবাসীর বিচরণের কোনো সুযোগ নেই।
Published : 27 Jun 2015, 06:49 AM
পার্কটি দখলে রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্মাণসামগ্রী, গাড়ি ও বর্জ্য। যেন ‘রক্ষকই ভক্ষকের’ ভূমিকায়।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সংস্কারকাজে ব্যবহৃত ইট, বালি ও সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী রাখা। ভেতরেই তৈরি হচ্ছে সিমেন্টের খুঁটি; পার্কিং করে রাখা হয়েছে সিটি করপোরেশনের ট্রাক।
পুরান ঢাকার সাতটি রাস্তার সংযোগস্থলে অবস্থিত ডিম্বাকৃতির পার্কসংলগ্ন ফুটপাতে বসেছে ফল বিক্রেতা, মুদি দোকানি, মুচি ও রিকশা মেরামতকারীরা।
এছাড়া লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা পার্কটির পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে দুটো প্রধান ফটক থাকলেও পশ্চিম পাশের ফটকটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ এ ফটকের সামনে গড়ে ওঠেছে অবৈধ দোকান, যেগুলো আবার সন্ধ্যার পরপরই ঠাঁই নেয় পার্কের ভেতরে।
এছাড়া পাশেই রয়েছে বড় বড় তিনটি কনটেইনার, যেগুলার বর্জ্যের দুর্গন্ধ ভোগান্তিতে ফেলছে পথচারী ও ভ্রমণকারীদের।
এবিষয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রাতঃভ্রমণকারী সংঘের সদস্য আবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শহরে ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি পেতে মানুষ পার্কে আসে। কিন্তু পার্কের ভেতর এভাবে নির্মাণকাজ করা- এক ধরণের ভোগান্তি।”
লক্ষ্মীবাজারের অবস্থিত পার্কটি দেখভালের জন্য রয়েছেন সিটি করপোরেশনের দুজন নিরাপত্তাকর্মী, পানির পাম্পের জন্য একজন ওয়াটারম্যান এবং দুজন সুইপার।
নিরাপত্তাকর্মী জয়নাল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অফিসের (সিটি করপোরেশন) বিভিন্ন কাজের মালামাল ভেতরে রাখা হয় মাঝে মাঝে।”
পার্কের ভেতরে গাড়ির রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সরকারি কবি নজরুল কলেজের ছাত্রদের গাড়ি (অস্থায়ী দোকান)। তারা রাখতে চাইলে আমরা তো আর বাধা দিতে পারি না।
“আমাদের বেতন কম, এ টাকা দিয়ে চলা যায় না। তাই আমাদেরও দুটি ভ্যান (অস্থায়ী দোকান) আছে।”
পুরান ঢাকার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকায় ময়লার কন্টেইনার রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুভদ্র দেবনাথ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি পুরান ঢাকার প্রধান সড়ক, যেখানে প্রতি ঘণ্টায় হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। এমন জায়গায় এভাবে ময়লার কনটেইনার রাখা হচ্ছে।
“এখানে রাস্তায় যানজট, ফুটপাতে দোকান। ফলে বাধ্য হয়েই দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি বুঝা উচিত।”
পার্কঘেঁষে কনটেইনার ছাড়াও যত্রতত্র ময়লা রাখা হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের একশভাগ দোষ আছে। কিন্তু মানুষ তো ঠিক জায়গায় ময়লা ফেলে না।
“কাল জায়গাটি আমি ফিজিক্যালি ভিজিট করে দেখে আসবো। পরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাহাদুর শাহ পার্কের জায়গাটিতে আঠারো শতকের শেষদিকে আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল, যা আন্টাঘর নামে পরিচতি ছিল। আর ক্লাবসংলগ্ন ময়দানটি আন্টাঘর ময়দান নামে পরিচিত ছিল।
১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর স্থানীয়দের ভয় দেখাতে এই ময়দানের বিভিন্ন গাছের ডালে সিপাহিদের লাশ ঝুলিয়ে রাখা হত।
১৮৫৮ সালে রানী ভিক্টোরিয়া অবিভক্ত ভারতের শাসনভার গ্রহণ করলে আন্টাঘর ময়দানেই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়, সেজন্য পরে স্থানটির নাম হয় ভিক্টোরিয়া পার্ক।
পরে সিপাহী বিদ্রোহের শতবর্ষে ১৯৫৭ সালে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের নামে বাহাদুর শাহ পার্ক নামকরণ করা হয়।