পাঁচটি গ্র্যামি, চারটি গোল্ডেন গ্লোব এবং একটি অস্কার- রবিন উইলিয়ামসের প্রাপ্তির অঙ্কটা কেবল পুরস্কারের সংখ্যায় মেলানো যাবে না। রূপালী পর্দায় অসামান্য কিছু চরিত্র এবং দুর্দান্ত কিছু মুহূর্তের জনক তিনি। ফিল্ম রেটিং সাইট রটেন টমেটোসের দেওয়া এই অভিনেতার সেরা দশটি সিনেমার তালিকাটি দেখে নেওয়া যাক।
Published : 12 Aug 2014, 04:58 PM
২০০২ সালে নির্মিত ‘ওয়ান আওয়ার ফটো’ এমন একটি সিনেমা, যেখানে নিজের স্বস্তির জায়গা কমেডি থেকে বেরিয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত এক ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেন রবিন উইলিয়ামস। একাকী ফটো টেকনিশিয়ান প্যারিশের গল্প উঠে আসে সিনেমাটিতে। ক্রেতাদের প্রতি তার গোপন ও মরিয়া আকর্ষণ তাকে ঠেলে দেয় অন্ধকার এক পথে। চরিত্রের প্রয়োজনে নিজের প্রতিষ্ঠিত ইমেজকে একজন অভিনেতা কতটা ভাঙ্গতে পারেন তার প্রমাণ এই সিনেমাটি। বক্স অফিসে সাফল্য না পেলেও ‘ওয়ান আওয়ার ফটো’ সমালোচকদের মন কাড়তে সমর্থ হয় সিনেমাটি।
‘টুয়েলভ মাঙ্কিস’ খ্যাত পরিচালক টেরি গিলিয়াম রবিন উইলিয়ামসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ১৯৯১ সালে। জন্ম নেয় ‘দ্য ফিশার কিং’। এক রেডিও জকির সঙ্গে এক গৃহহীন ব্যক্তির অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্বের গল্প বলে সিনেমাটি। গিলিয়ামের বিশেষ ভিস্যুয়াল ইফেক্টসের সঙ্গে গল্পের নাটকীয়তার মিশেলে এক ঘরহারা মানুষের ভূমিকায় রবিন উইলিয়ামস ছিলেন অনবদ্য। সিনেমাটি উইলিয়ামসকে এনে দেয় তার তৃতীয় অস্কার মনোনয়ন।
সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত আশির দশকে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘ডেড পয়েটস সোসাইটি’ সম্ভবত অনুপ্রাণিত করেছে পুরো একটি প্রজন্মকে। ওয়েলটন অ্যাকাডেমির ইংরেজি শিক্ষক জন কিটিং-এর চরিত্রে রবিন উইলিয়ামসের প্রাণখোলা অভিনয় এবং সংলাপের গভীরতা মুগ্ধতা ছড়ায় আজও। তবে, বিতর্কও হয়েছে বেশ। নিজের সঙ্গে যুঝতে থাকা একজন শিক্ষকের চরিত্রটি গ্রহণ করেননি অনেক সমালোচকই। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সমালোচক ভিনসেন্ট ক্যানবি বলেছিলেন, “বয়ঃসন্ধিকালীন দর্শকদের খুশি করতে এভাবে একজন শিক্ষককে উপস্থাপন করা লজ্জাজনক”। প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করা এই সিনেমাটি নিঃসন্দেহেই উইলিয়ামসের সেরা কাজগুলোর একটি।
ব্রিটিশ স্নায়ুবিদ অলিভার স্যাকসের বাস্তব অভিজ্ঞতা অবলম্বনে নির্মিত ‘অ্যাওয়েকেনিংস’ সিনেমাটির জন্য জীবনের চতুর্থ গোল্ডেন গ্লোব মনোনয়ন পেয়েছিলেন উইলিয়ামস। সিনেমাটিতে স্নায়ুবিদের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা রবার্ট ডি নিরো। তিনটি অস্কার মনোনয়ন পাওয়া সিনেমাটি বেশ ভালোই ব্যবসা করেছিল বক্স অফিসে।
যৌন উত্তেজনায় শ্বাস আটকে মারা যাওয়া ১৫ বছর বয়সী এক ছেলের বাবা, ছেলের মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে সাজান, নিজেই লিখে ফেলেন একটি চিরকুট। এমনই এক বাবার চরিত্রে উইলিয়ামস অভিনয় করেছেন ‘ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট ড্যাড’ সিনেমায়। ডার্ক কমেডি ধাঁচের এই সিনেমায় নিজেকে বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। সমালোচকদের কাছে দারুণ প্রশংসিত হয় সিনেমাটি। নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড-এর সমালোচক রবি কলিন লেখেন, “পোস্টার থেকে সাবধান...এই রবিন উইলিয়ামস কিন্তু ‘ওল্ড ডগস’ কিংবা ‘লাইসেন্স টু ওয়েড’-এর রবিন উইলিয়ামস নন।”
আশির দশকের শুরুতে সোভিয়েত-মার্কিন স্নায়ু যুদ্ধকে উপজীব্য করে নির্মিত ‘মস্কো অন দ্য হাডসন’ সিনেমার গল্প এগোয় এক সোভিয়েত সার্কাসশিল্পীকে কেন্দ্র করে, যিনি নিউ ইয়র্কে পারফর্ম করতে এসে থেকে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শুরু করে তৎকালীন মার্কিন এবং সোভিয়েত রাজনীতি নিয়ে সিনেমা কম হয়নি।‘রকি’ সিরিজেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। কিন্তু এই সিনেমায় যতটা মানবিকভাবে রাজনীতির আগ্রাসী দিকগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। আর তা সম্ভব হয়েছে কেন্দ্রীয় চরিত্রে উইলিয়ামসের অভিনয় নৈপুণ্যের কারণেই।
উইলিয়ামসের চলচ্চিত্রজীবনের প্রথম বড় সাফল্য এসেছিল এই সিনেমাটির মাধ্যমেই। সেরা অভিনেতার মনোনয়ন মিলেছিল অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোব - দুই আসরেই। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে রেডিও জকি এড্রিয়ান ক্রনোর টিকে থাকার চেষ্টা, বন্ধুত্ব খুঁজে পাওয়া এবং উর্ধ্বতনদের ভণ্ডামির সঙ্গে লড়ার এক অনবদ্য গল্প বলে সিনেমাটি। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটিতে কৌতুকের পাশাপাশি জীবনের যন্ত্রণাময় বাস্তবতাকেও ফুটিয়ে তুলেছেন উইলিয়ামস।
সিনেমা পর্দায় উইলিয়ামসের হাসিমাখা মুখটাই দর্শকদের মনে ভেসে ওঠে সবার আগে। তবে ২০০২ সালে ক্রিস্টোফার নোলান তার ‘ইনসমনিয়া’ সিনেমাটিতে একেবারেই ভোল পাল্টে দেন এই অভিনেতার। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অপরাধভিষয়ক লেখক ওয়াল্টার ফিন্শ খুন করে বসে এক তরুণীকে। ধর্ষকামী এই লেখকের সঙ্গে গোয়েন্দা উইল ডরমারের মনস্তাত্বিক লড়াইয়ে দর্শককে পুরো সিনেমায় টান টান উত্তেজনার স্বাদ দেয়। গোয়েন্দা চরিত্রে আল পাচিনোর অভিনয় আর নোলানের নিখুঁত পরিচালনা সিনেমাটিকে করে তুলেছে হলিউডের অন্যতম থ্রিলার ড্রামার।
১৯৯২ সালে নির্মিত হয় ডিজনির অ্যানিমেটেড সিনেমা ‘আলাদিন’। সেখানে জিনি চরিত্রে উইলিয়ামসের কণ্ঠ্য চরিত্রটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। চটুল সংলাপ এবং উচ্ছ্বাসময় অভিব্যক্তির মাধ্যমে উইলিয়ামস জিনি চরিত্রটিকে পরিপূর্ণ করে তুলেছিলেন। সমালোচক রজার এবার্ট লেখেন, “রবিন উইলিয়ামস এবং অ্যানিমেশন একে অন্যের জন্য জন্ম নিয়েছে। এবং ‘আলাদিন’ এ এসে দেখা হয়েছে এদের।”
‘ডেড পয়েটস সোসাইটি’, ‘ফিশার কিং’, ‘গুড মর্নিং, ভিয়েতনাম’- একের পর এক অসাধারণ সিনেমা, তারপরও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছিল অস্কার। ‘গুড উইল হান্টিং’- অবশেষে মিললো স্বীকৃতি। গণিতে আশ্চর্য রকমের পারদর্শী উইলের থেরাপিস্ট হিসেবে অনুপ্রেরণা জোগানোর গল্প নিয়ে তৈরি ‘গুড উইল হান্টিং’ সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন এসময়ের জনপ্রিয় তারকা ম্যাট ডেমন এবং বেন অ্যাফ্লেকের সঙ্গে। সিনেমায় উইলকে যন্ত্রণাময় অতীতকে পেছনে ফেলে আসতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উইলিয়ামস পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেতার অস্কারের যোগ্য প্রাপকই ছিলেন।