‘মাতৃভাষার বিকল্প নেই’

তরুণ প্রজন্মের চোখে একুশে ফেব্রুয়ারি কি তাদের চেতনার অংশ, নাকি কেবল বছরের একটি বিশেষ সরকারি ছুটির দিন? এমন প্রশ্নই পাঁচজন নতুন প্রজন্মের তারকার কাছে রেখেছিলো গ্লিটজ।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2017, 12:59 PM
Updated : 21 Feb 2017, 03:46 PM

বছরের একটি দিনের বদলে পুরো বছর জুড়ে একুশের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করা উচিত বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া।

 

গ্লিটজকে তিনি বলেন, “পৃথিবীর অনেক দেশ বাংলাদেশকে চেনে না। কিন্তু তারাও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করছেন, যা আমাদের জন্য অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। যাদের ত্যাগের কারণে আমরা আজ মাতৃভাষা পেয়েছি তাদেরকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন এটি।”

তিনি আরও বলেন,“ আমি মনে করি এই দিবসটি শুধুমাত্র বছরের একটি মাত্র দিনে পালন না করে ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বছরের প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্তে হৃদয়ে ধারণ করা উচিত। শুধুমাত্র একদিন পালন করার বদলে বছরজুড়ে সম্মানের সঙ্গে দিনটি পালন করা উচিত।”

 

অনেকটা একই সুরে কথা বললেন চিত্রনায়িকা শবনম ইয়াসমিন বুবলি। বিশেষ দিবসকে ঘিরেই সকল কার্যক্রমসংঘটিত না করার পক্ষেই তার অভিমত।

গ্লিটজকে বুবলি বলেন,“ আমার কাছে মনে হয় আমাদের ভাগ্য মোটেই ভালো না। আমরা এখনকার প্রজন্মরা বছরের একটি দিন, এই দিনটাকে (একুশে ফেব্রুয়ারি) স্মরণ করি। আর বছরের অন্যান্য দিনে এইদিবসটাকে কেউ মনেও রাখে না। যারা বছরের অন্যান্য সময়েও এই দিবসটাকে হৃদয়ে ধারণ করেন তারা খুব ভালোভাবেই ধারণ করেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, মা দিবস,ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি বিশেষ দিনগুলো খুব ঘটা করে পালন করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি শুধুমাত্র দিবসগুলো ঘিরেই যেন সকল কার্যক্রম না হয়।”

তিনি আরও বলেন,“ ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। আমাদের কথা বলার সময় অনেক ইংরেজি শব্দ চলে আসে। আমাদের কথা বলার সময় ইংরেজি বলতে পারবো না এমন কোনো বারণ কিন্তু নেই। তবে লক্ষ্য রাখা উচিত আমাদের বাংলা উচ্চারণটা সঠিক রেখে ইংরেজি উচ্চারণটাও যেন সঠিকভাবে করি। আমাদের বাংলাটাকে কেন ইংরেজির মত করে বলতে হবে? আমাদের তরুণ প্রজন্মের এই বিষয়গুলো খুবই ভালোভাবে চিন্তা করা উচিত।”

ইংরেজির দাপট থাকলেও মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই-এই চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন মডেল ও টেলিভিশন অভিনয় শিল্পী মনোজ কুমার।

 

গ্লিটজকে তিনি বলেন,“মায়ের কাছে সন্তান যেমন শান্তি পায় তেমনি মাতৃভাষায় কথা বলেও সেই পরম শান্তি পাওয়া যায়। জীবনে মায়ের যেমনি কোনো তুলনা হয় না তেমনি মাতৃভাষার সঙ্গেও পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষার তুলনা হয় না। পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় যতই দক্ষতা অর্জিত হোক না কেন, মায়ের ভাষার (মাতৃভাষা) কোনো বিকল্প কখনও তৈরি হবে না। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর সকল ভাষাভাষী মানুষের এই চেতনা তাদের হৃদয়ে থাকা উচিত।”

তিনি আরো বলেন, “১৯৫২ সালে অন্য একটি দেশের ভাষা দিয়ে আমাদেরকে অবদমিত করার চেষ্টা হচ্ছিলো। সেই সময় আমাদের ভাষা সৈনিকরা নিজেদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছিলেন।মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্যএমন কোনো ঘটনা পৃথিবীর আর কোথাও যেন না ঘটে। আর আমি বিশ্বাস করি, মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই। এই বিশ্বাস, চেতনা ও আশাকে হৃদয়ে ধারণ করেই আমি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমার জীবনে স্মরণ করি।”

অন্যদিকে একুশে ফেব্রুয়ারি দিবসকে ঘিরে স্মৃতিচারণ করার পাশাপাশি হতাশার কথাও শোনালেন মডেল ও টেলিভিশন অভিনেত্রী আইরিন আফরোজ।

 

গ্লিটজকে তিনি বলেন,“ আজ থেকে পাঁচ-ছয় বছর আগে আমাদের এলাকায় ভাইবোন ও মহল্লার বন্ধুদের নিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করতাম। সারারাত জেগে সবাই মিলে শহীদ মিনার তৈরি করে সকালে সবাই মিলে সেখানে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দিতাম। সেইদিন আমরা মেয়েরা সবাই মা-খালা-আপুদের কাছ থেকে নিয়ে সাদা-কালো রঙের শাড়ি পড়তাম। বলতে গেলে সেই দিন আমাদের জন্য ছিলো অনেকটা পিকনিকের মত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।”

তিনি কিছুটা হতাশার সুরে আরও বলেন, “এখনকার সময়ে একুশে ফেব্রুয়ারি হোক কিংবা বিজয় দিবস হোক-বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলা গান ও দেশাত্মবোধক বাংলা গান বাজানোর বদলে হিন্দি গান বাজানো হয়। বলতে গেলে, এখনকার সময়ে প্রতিটি দিবসকে মানুষ একটি উৎসব বানিয়ে ফেলে। শুধু তাই নয় আমরা ঠিক মত বাংলা ভাষাও বলতে পারছি না। আবার ঠিক মত ইংরেজিও বলতে পারছি না। আমরা কেমন যেন একটি ভাষায় কথা বলছি। তাই আমি মনে করি একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবার একটা প্রতিজ্ঞা করা উচিত তারা যেন সঠিকভাবে মাতৃভাষার চর্চা শুরু করেন। আমাদের ভাষাটা যেন বাংলিশ না হয়ে যায়। যাদের আত্মত্যাগের কারনে আমরা আজকের এই মহান দিবসটি পেয়েছি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের এমন কোনো কিছু করা উচিত না যার পরিপ্রেক্ষিতে এই মহান দিনের তাৎপর্য নষ্ট হয়ে যায়।”

 

কিন্তু একুশ ছাড়া নিজের কোনো অস্তিত্ব নেই বলেই বিশ্বাস করেন সংগীতশিল্পী কারিশমা সানু সভ্যতা।

গ্লিটজকে তিনি বলেন, “একুশ আমার ভাষা, একুশ আমার বক্তব্য, একুশ ছাড়া আমি কোনো কিছুই না। আমি আমার মনের ভাষা বাংলা ভাষা ছাড়া প্রকাশ করতে পারি না। আমি অন্য কোনো বিদেশী ভাষা জানিনা। সত্যি বলতে আমি ইংরেজিই খুব ভালো বলতে পারি না। আমার কাছে বাংলা ভাষার মূল্য অনেক বেশি। আমার মনের ভাব প্রকাশের উৎস হচ্ছে আমার বাংলা ভাষা।”