অনেক কিছু মুখে না বললেও বোঝা যায়: শাওন

মুক্তির আগেই মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ‘ডুব’ আটকে দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে চলচ্চিত্রটিতে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ-এর জীবনের একটি অংশের ‘বিভ্রান্তিমূলক কাহিনি’র উপস্থিতি রয়েছে আশঙ্কা করে সেন্সরবোর্ডে চিঠি পাঠান মেহের আফরোজ শাওন।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2017, 12:45 PM
Updated : 18 Feb 2017, 12:45 PM

শাওন নিজ মুখেই গ্লিটজকে জানালেন তার যতো আশঙ্কার কথা।

গ্লিটজ: সেন্সর বোর্ডে চিঠি দিয়েছেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আটকে দেয়া হয়েছে ‘ডুব’। আপনার আশঙ্কার জায়গাটা কোথায় ছিলো?

মেহের আফরোজ শাওন: ভারত এবং বাংলাদেশের কিছু লিডিং নিউজপেপারের রিপোর্ট থেকে আমি প্রথম জানতে পারি, যে ছবিটি বানানো হচ্ছে ‘ডুব’, এটির মূল প্রতিপাদ্য হলো হুমায়ূন আহমেদের জীবনের একটি অংশ, স্পর্শকাতর একটি অংশ। রিপোর্টে কাহিনির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে জীবনের একটি অংশ বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এটা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে। বিভ্রান্তিমূলক কিছু তথ্য দিয়ে উপস্থাপিত কিছু অংশ, কিছু রিউমারকে ঘিরে এ ছবিটি। পরবর্তিতে যখন আমি এ ছবির একজন অভিনেত্রী, তার ইন্টারভিউ থেকে নিশ্চিত হই যে, এ ছবিটি হুমায়ূন আহমেদের জীবন কাহিনি নিয়ে নির্মিত। কারণ তিনি ইন্টারভিউতে এ ব্যাপারে স্টেটমেন্ট দেন। আমার আশঙ্কাটা তখন আরও প্রবল হয়।

সেই আশঙ্কা থেকেই আমি ১৩ তারিখে একটা চিঠি সেন্সরবোর্ডে দেই, চিঠিতে এটাই বলা হয়, আমি আশঙ্কাগুলো করছি এবং যাচাই বাছাই করে যেন তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। হুমায়ূন আহমেদ একজন লিজেন্ডারি লেখক। তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার মানে এমন নয় যে তাকে নিয়ে একটি মনগড়া কাহিনি বানিয়ে ফেলা যাবে-তার জীবনের ছায়া অবলম্বনে। সেটা নাম বদলে দেয়া হোক আর যাই হোক। তার জীবনকাহিনিগুলো সবাই জানে। এখন সেই সত্য কাহিনিগুলোর সঙ্গে কিছু বিভ্রান্তিমূলক তথ্য জুড়ে দিয়ে যদি সিনেমাটা বানানো হয়, যেখানে অসম্ভব রিপোর্ট হয়েছে এটা নিয়ে এবং ছবিটির অভিনেত্রী দাবি করছেন এটা হুমায়ূন আহমেদ-এর জীবনকাহিনি নিয়ে নির্মিত ছবি। চলচ্চিত্র যেহেতু একটি শক্তিশালী মাধ্যম এখানে দর্শকদের মধ্যে অনেকেই হুমায়ূন ভক্ত আছেন এবং ভক্ত নন এমনও অনেকে আছেন। দর্শকদের মধ্যে ভবিষ্যত প্রজন্মের এমনও অনেকে আছেন যারা হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তখন তারা একটি ভুল তথ্য পাবেন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কিছু অংশ আমি নিলাম, কিছু অংশ আমি বানিয়ে ফেললাম তখন এই ভুল কাহিনিটাই জীবনী হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার একটা প্রচেষ্টা হয়ে দাড়াবে। ফলে, হুমায়ূন আহমেদ-এর জীবন নিয়ে নির্মিত সিনেমা নিয়ে আমার আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে। আমার দুটো ছোট সন্তান আছে। তাদেরও ভবিষ্যত আছে। বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের মধ্যে তারা কেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে। সে কারনেই আমি আমার আশঙ্কার কথা জানিয়েছি, এ ছবিতে যদি কোনো অবজেকশেনেবল পয়েন্ট যদি থাকে, তবে সেটা যাচাই বাছাই করেই যেন তারা সিদ্ধান্ত নেয়।

গ্লিটজ: কিন্তু নির্মাতা তো বরাবরই বলছেন, চলচ্চিত্রটির কোনো চরিত্রের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের কোনো যোগ নেই। কারো নাম উল্লেখও করা হয়নি। সেক্ষেত্রে আপনার যুক্তিটা কোথায়?

শাওন: দেখুন আমরা তো মানুষ, অনেক কিছু মুখে না বললেও আমরা বুঝতে পারি। হয়তো আমরা নাম দিলাম না, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নাম দিলাম না, কিন্তু তার কাহিনিটাই আমরা তুলে ধরলাম, তার নাম আবুল হোসেন দেই আর যাই দেই মানুষতো বুঝতে পারবে এটা বঙ্গবন্ধু! লিজেন্ডারি পারসোনালিটি যারা, তাদের গল্পতো সবাই জানে। নাম যাই দেই না কেন, যখন আমরা দেখবো তার জীবনের সঙ্গে সবকিছু মিলে যাবে, মানুষ বুঝতে পারবে এ ছবিটা কাকে নিয়ে। এটা হল আমার প্রথম আশঙ্কা। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, তিনি কিন্তু অস্বীকার করেও কোনো স্টেটমেন্ট দেননি। তিনি একবারও বলেন নি যে আমার ছবির সঙ্গে হুমায়ূনের জীবনের কোনো মিল নেই। এই স্টেটমেন্টটা দিলেও আমি বিশ্বাস করার চেষ্টা করতাম।

গ্লিটজ: যখন জানলেন চলচ্চিত্রটির সঙ্গে হুমায়ূন সংশ্লিষ্টতার কথা, আপনি কি এ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছিলেন নির্মাতার সঙ্গে?

শাওন: আমার কি ব্যাক্তিগতভাবে যোগাযোগ করার কথা? যদি কেউ হুমায়ূন আহমেদের জীবন থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়ে সিনেমা বানাতে আসে তাহলে তারই তো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা।

গ্লিটজ: হুমায়ূন পরিবারের অন্যরাও কি আপনার সঙ্গে একমত?

শাওন: পরিবার নিয়ে এখানে কোনো কথা হচ্ছে না, এটা পরিবারের যে কেউ আশঙ্কা করতে পারে। এটা একজন পাঠকও আশঙ্কা করতে পারে। আমি একজন হুমায়ূন আহমেদের পাঠক হিসেবেও প্রতিবাদ জানাতে পারি যে হুমায়ূন আহমেদের জীবন নিয়ে যে কোনো কিছু হতে পারে না। এখানে পরিবারের সদস্য হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।