ঢাকাই ছবির সেরা জুটিরা

প্রেম সবদেশের সর্বকালের চলচ্চিত্রে বিষয় হিসেবে সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে। আর প্রেম মানেই নায়ক-নায়িকার জমজমাট পর্দা-রসায়ন। সেই রসায়ন দিয়ে পর্দাজয় করেই ষাটের দশক থেকে ঢাকাই ছবিতে এসেছেন একের পর এক জনপ্রিয় জুটি। সেই সব পর্দাকাঁপানো রোমান্টিক জুটিকেই এবার দেখে নেওয়া যাক একঝলকে।

সেঁজুতি শোণিমা নদীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2017, 03:58 PM
Updated : 15 Feb 2017, 11:46 AM

রাজ্জাক-কবরী

 

শুরুটা হয়েছিল প্রয়াত নির্মাতা সুভাষ দত্তের হাত ধরে। রাজ্জাক ও কবরীকে জুটি করে সুভাষ দত্ত ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করেন ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রটি।  সেখান থেকেই জুটি হিসেবে রাজ্জাক-কবরীকে দর্শক দারুণভাবে গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই এই জুটির ‘ময়নামতি’,‘নীল আকাশের নীচে’,‘দর্পচূর্ণ’,‘দীপ নেভে নাই’,‘অধিকার’, ‘রংবাজ’-এর মতো সিনেমাগুলোতে রাজ্জাক-কবরী জুটির প্রেমের অনবদ্য উপস্থাপন দর্শকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এই জুটি অভিনীত জনপ্রিয় গান ‘তুমি যে আমার কবিতা’ এখন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ধ্রুপদী গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। 

 

ফারুক-ববিতা

 

অভিনেতা জাফর ইকবালের সঙ্গে ববিতার রোমান্টিক জুটি দর্শক প্রিয়তা পেলেও দর্শক এবং সমালোচক- উভয় মহলের প্রিয় ছিলেন ফারুক-ববিতা জুটি। ১৯৭৩ সালের সিনেমা ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবার একসঙ্গে অভিনয় করেন তারা। এরপর এক ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমনি’, ‌‘সূর‌্য সংগ্রাম’, ‘প্রিয় বান্ধবী’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ‘মিয়া ভাই’ এবং ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ সিনেমায় অভিনয় করেন তারা।

বুলবুল আহমেদ- জয়শ্রী

 

মাত্র তিনটি সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন বুলবুল আহমেদ জয়শ্রী কবির জুটি। বাংলাদেশের অন্যতম মেধাবী নির্মাতা আলমগীর কবীর তার জীবদ্দশায যে ক’টি সিনেমা তৈরি করে যেতে পেরেছিলেন, তার অধিকাংশরই নায়ক ছিলেন বুলবুল আহমেদ। এর মধ্যে ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘রূপালি সৈকতে’ এবং ‘সূর‌্য কণ্যা’য় তার সঙ্গে জুটি বাঁধেন আলমগীর কবীরের স্ত্রী জয়শ্রী কবীর।

বুলবুল-জয়শ্রীর ‘সীমানা পেরিয়ে’কে বলা হয় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ছবি। ভূপেন হাজারিকা ও আবিদা সুলতানার গাওয়া এই সিনেমার গান ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার’ এবং ‘মেঘ থমথম করে’ দারুণ জনপ্রিয় হয়। এছাড়াও ‘সূর‌্যকণ্যা’র গান ‘আমি যে আঁধারে বন্দিনী’ গানটিও তুমূল আলোচিত হয়।

 

শাবানা-আলমগীর

 

পারিবারিক আটপৌরে গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিতে উজ্জ্বল হয়ে আছেন আলমগীর-শাবানা জুটি। দেশীয় চলচ্চিত্রের জুটি প্রথার ইতিহাসে ‘আলমগীর-শাবানা’ সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাদের অভিনীত ছবি ১২৬টি, যার বেশির ভাগই ব্যবসাসফল। তাদের অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল, ‘ভাত দে’, ‘অপেক্ষা’, ‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘রাঙা ভাবি’, ‘মরণের পরে’ এবং ‘অচেনা’। শাবানার অর্জিত ১১ টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ৬ টিই এসেছে আলমগীরের সঙ্গে অভিনীত ‍সিনেমা থেকে।

 

ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি

 

আশি ও নব্বইয়ের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও দিতি। ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘দয়ামায়া’, ‘আত্মবিশ্বাস’, ‘ভাইবন্ধু’, ‘বাঁচার লড়াই’, ‘আম্মা’, ‘অচল পয়সা’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘প্রেমের প্রতিদান’, ‘চরম আঘাত’, ‘এই নিয়ে সংসার’, ‘ভাই কেন আসামী’, ‘আসামী গ্রেফতার’সহ প্রায় পঞ্চাশটি ছবিতে অভিনয় করেছেন দিতি। ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রথম স্ত্রী এবং দিতির প্রথম স্বামীর মৃত্যু হলে বিয়েও করেন তারা। কিন্তু সেই সংসারের স্থায়িত্ব খুব বেশি দিন হয়নি।

 

সালমান শাহ-শাবনূর

 

১৯৯৪ সালে ‘তুমি আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সালমান শাহ-এর সঙ্গে জুটি বাঁধেন শাবনূর। প্রথম ছবিতেই ব্যাপক সফলতা পায় এ জুটি। যার ফলে পরিচালক-প্রযোজকরা একের পর এক ছবিতে নিতে থাকেন তাদের। সালমান শাহ তার স্বল্প আয়ূর জীবনে অভিনয় করেছিলেন ২৭টি ছবিতে। এর মধ্যে ১৪টি ছবিতেই তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন শাবনূর। সালমানের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমেই চিত্রজগতের অন্যতম তারকায় পরিণত হন তিনি।

যে ক’টি সিনেমায় একসঙ্গে তারা ছিলেন, তার মধ্যে ‘তোমাকে চাই’,‘জীবন সংসার’,‘স্বপ্নের ঠিকানা’,‘আনন্দঅশ্রু’, ‘স্বপ্নের নায়ক’সহ প্রায় প্রত্যেকটিই এখনও দর্শক দারুণভাবে মনে রেখেছেন।

 

শাবনাজ-নাঈম

 

১৯৯০ সালে প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম তার নতুন চলচ্চিত্র ‘চাঁদনী’র জন্য দুজন নতুন মুখ খুঁজছিলেন। অবশেষে তাদেরকে পেয়েও যান তিনি। সেই দুজনই হলেন নাঈম আর শাবনাজ। প্রথম ছবিতেই জুটি হিসেবে ব্যাপক সাড়া ফেলেন তারা। এরপর একে একে অভিনয় করেন ‘লাভ’, ‘চোখে চোখে’, ‘দিল’, ‘টাকার অহঙ্কার’, ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’, ‘সোনিয়া’ ও ‘অনুতপ্ত’সহ আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে। প্রতিটি ছবিই ব্যবসায়িক সফলতা পায়।

চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই ঘনিষ্ঠ হন নাঈম-শাবনাজ। প্রথমে প্রেমের কথা অস্বীকার করলেও অবশেষে ১৯৯৬ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এ জুটি। তবে ২০০০ পরবর্তী সময়ে এ জগত থেকে আড়ালে চলে যান তারা।

 

রিয়াজ-পূর্নিমা

 

নব্বইয়ের শেষ দিকে প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করলেও রিয়াজ-পূর্নিমা জুটির প্রথম ও সবচেয়ে ব্যবসা সফল সিনেমা ‘মনের মাঝে তুমি’ মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। এই সিনেমার পর থেকেই জুটি হিসেবে জনপ্রিয়তা পান রিয়াজ ও পূর্নিমা। ‘হৃদয়ের কথা’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ এবং ‘এক পৃথিবী প্রেম’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেন তারা। ‘হৃদয়ের কথা’ সিনেমায় তাদের অভিনীত ‘ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু’ এবং ‘যায় দিন’ গান দুটি ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়।

 

শাকিব খান- অপু বিশ্বাস

 

নব্বইয়ের দশকের শেষভাগ থেকেই চিত্র জগতে সক্রিয় থাকলেও শাকিব খান প্রথমবারের মতো বড়ধরনের সাফল্য পান ২০০৬ সালের সিনেমা ‘কোটি টাকার কাবিন’ দিয়ে। এফ আই মানিক নির্মীত এই সিনেমায় অভিষেক ঘটে অপু বিশ্বাসের। তার পর থেকিই জুটি বেধে তার অভিনয় করেছেন ৮০ টিরও বেশি সিনেমায়। শাকিব-অপু জুটির শেষ সিনেমা ছিল ২০১৬ সালের ‘সম্রাট’।