‘বহু সাংস্কৃতিক সমন্বয় আজ বড় বিপন্ন’

আফগানিস্তানে তালিবান শাসনামলের পর সংগীতের নবজাগরণ নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স : মিউজিক অফ আফগানিস্তান’ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র। এছাড়াও সুফি মিউজিক-এর উপর তৈরি করেছেন ‘সুফি সৌল : দ্য মিস্টিক মিউজিক অফ ইসলাম’।

সেঁজুতি শোণিমা নদীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2017, 02:03 PM
Updated : 13 Feb 2017, 02:03 PM

বিবিসির সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা সাইমন ব্রাউটনের মূল আগ্রহ সংগীত ও সংস্কৃতির সঙ্গে রাজনীতির মিলেমিশে যাওয়ার সূক্ষ্ রেখাটিতে। সুফি সংগীতের ভক্ত এই নির্মাতার দাবি, ইসলামোফোবিয়ার এই কালে বহু সাংস্কৃতিক সমন্বয় এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

২০১৬র ঢাকা লিট ফেস্টিভালে অংশ নিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। সেখানেই গ্লিটজ-এর সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপ হয় তার। সেই সাক্ষাৎকারের কিয়দংশ এখানে তুলে ধরা হলো।

গ্লিটজ: ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ নিয়ে যখন কাজ করছিলেন, তখন কোনো অসুবিধায় পড়তে হয়নি? আফগান সংগীতের প্রতি আগ্রহ কি তখন থেকেই?

সাইমন: ফিল্মটি তৈরির আগে আমি আসলে আফগান সংগীত নিয়ে খুব বেশি কিছু জানতাম না। সুতরাং আমার জন্য এটি ছিল একটি আবিষ্কারের প্রক্রিয়া। আমি অবশ্য ভারতীয় সংগীত এবং সংগীতের আরও বৃহত্তর পরিসর সম্পর্কে কিছুটা জানতাম। কিন্তু এই প্রথম আমি আফগান সংগীতে মনোনিবেশ শুরু করলাম।

গ্লিটজ: আফগান সংগীত সম্পর্কে সত্যি সত্যিই খুব কম মানুষ জানে...

সাইমন: আর আমার জন্য সত্যিই এটা বেশ মজার উপায় ছিল আফগানিস্তানের ইতিহাস সম্পর্কে জানার। কারণ ১৯৭৯ সালের রুশ আক্রমণের পর থেকেই প্রতিটি শাসনামলে সংগীতের উপর ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম জারি করা হয়েছিল। সত্যি বলতে, রুশরা সংগীতের ব্যাপারে বেশ সহনশীলই ছিল। অবশ্য তারা অনেক সুফি মিউজিক নিষিদ্ধ করেছিল, কারণ তারা অনেকটাই নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাস করতো। তবে তারপরেই এলো তালেবানরা।

গ্লিটজ: তারাই তো সংগীত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে?

সাইমন: তারা প্রথমেই এটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি; তারা কিছু রক্ষণশীল নিয়ম-কানুন জারি করেছিল। পরবর্তীতে তারা নারীদের সংগীতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে। আর ধীরে ধীরে গোটা দেশেই সংগীতচর্চা নিষিদ্ধ করে দেয়।

সুতরাং সংগীতের পথ ধরে দেশটির ইতিহাসকে জানা যায় সহজেই; প্রতিটি শাসনামলেই সংগীত হয়েছে বলির পাঁঠা। আর তালেবানরা এসে এটিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দিল!

কিন্তু আমাকে যেটা বিষ্মিত করেছে, তা হলো, গানের প্রতি তাদের অচিন্ত্যনীয় ক্ষুধা। আমি ওখানে যাই তালেবানদের পতনের মাত্র দুই মাস পরে; সেখানে যা দেখেছি, তা এককথায় অবিশ্বাস্য! পাকিস্তান থেকে ট্রাক বোঝাই করে সিডি-ক্যাসেট আসছে আফগান সীমান্তে। বাজারে গেটো ব্লাস্টারের (এক ধরণের বড় ক্যাসেট ও সিডি প্লেয়ার) ব্যাপক বিকিকিনি!

আমি ওখানে যাওয়ার আগে সবাই বলাবলি করছিল, গান নিয়ে আফগানিস্তানে কাজ করতে যাওয়ার জন্য সময়টা একটু বেশি আগে হয়ে যায়। কিন্ত ওখানে গিয়ে বুঝলাম, আমি একদম সঠিক সময়েই উপস্থিত হয়েছি!

গ্লিটজ: আসলেই, গান ছাড়া বাঁচা যায় কীভাবে?

সাইমন: সত্যিই এটা একটা প্রশ্ন বটে! কিন্তু তারপরও মানুষকে বাঁচতে হয়েছিল গান ছাড়া! এটা আসলে মানবাধিকারের উপর চরম নিগ্রহের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে দুঃখের বিষয় হলো, ফিল্মটি শেষ হয়েছিল আফগান সংগীতের নবজাগরণ নিয়ে অনেক আশার কথা বলে; কিন্তু অবস্থা আগের চেয়ে খারাপই হয়েছে।

গান এখন হয়তো আর আগের মতো নিষিদ্ধ নেই, কিন্তু আমার অন্যতম প্রিয় আফগান গায়ক, গুলাম আলিকে সম্প্রতি পরিবারসহ সেখান থেকে পালাতে হয়েছে। তিনি একটি সংগীত স্কুলে রুবাব বাজানো শেখাতেন; সেসবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাকে পালাতে হয়েছে কারণ তিনি প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন।

গ্লিটজ: আপনি এরপর সিরিয়াতে গিয়ে ‘সুফি সৌল’ তৈরি করলেন...

সাইমন: হ্যাঁ, আসলে ‘সুফি সৌল’ ছিল ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’-এর পর আমার প্রথম ফিল্ম। আফগান সংগীতের ফিল্মটিতেও কাবুলের নকশাবন্দী সুফি গানের কিছু চমৎকার ফুটেজ ছিল। তাদের মধ্যে সত্যিই যিনি গান গাইতে গাইতে সমাধীস্থ হয়ে যেতেন- দারুণ লেগেছিল গোটা বিষয়টা!

সুফি গান আসলে আমার অনেকদিনের ভালবাসা। বাংলাদেশে এই ঘরানার সঙ্গে আপনারা খুব ভালভাবে পরিচিত। আর এই ধরণের গান যখন গোড়া মোল্লাদের রোষের মুখে পড়ে, পাকিস্তানের সুফিদের যেভাবে হরহামেশাই জঙ্গীরা শাসায়- এই ধরণের পরিস্থিতির সঙ্গেও নিশ্চয়ই আপনারা পরিচিত।

আসলে নাইন ইলেভেনের পর থেকে, পশ্চিমে ইসলামকে একটি ‘দানবীয় রূপদানে’র চেষ্টা চলে আসছে। আমার মনে হয়েছে, ইসলাম যে সত্যিকার অর্থে শান্তির বার্তা বহন করে, এটা সবাইকে দেখানোটা খুব জরুরী। এবং সুফি গানের মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে দেখাতে পারি, সংগীত, কবিতা এবং শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমের কী দারুণ এক ঐতিহ্য মুসলিমদের রয়েছে! এবং ইসলামিক দেশগুলোতে এখনও সেগুলো বেঁচে আছে।

সেই উদ্দেশ্যেই আমরা সিরিয়াতে গিয়েছিলাম; কারণ আমরা দেখাতে চেয়েছিলাম সুফিবাদের জন্মস্থানকে। সিরিয়ার মরুভূমি থেকেই সুফিবাদের জন্ম। এরপর আমরা রুমির শেকড়ের খোঁজে তুরস্ক যাই; রুমিই হলেন আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত সুফিবাদের কবি।

তারপরে আমরা চলে আসি ভারত আর পাকিস্তানে, যেখানে নুসরাত ফতেহ আলি খান, আবিদা পারভিনদের মতো প্রখ্যাত সব সংগীতশিল্পীদের জন্ম।

সবশেষে আমরা যাই মরক্কোতে, ছোট্ট একটা দেশ কিন্তু সুফি গানের জন্য কী অসাধারণ ভালোবাসা তাদের বুকে! ওদের কোনো বড় তারকা নেই; মরক্কোর কোনো নুসরাত নেই। একজন গায়ক অবশ্য আছেন, আমার খুব পছন্দের; মাওয়ান হাজ তার নাম। কিন্তু মরক্কোর মজার ব্যাপারটা হলো, এখানে নানা ধরণের তরিকা এবং গানের দল আছে যাদের প্রত্যেকের গানেরই নিজস্বতা আছে। কেউ কেউ স্থানীয়, কারও গানে আবার ভিন্নধর্মী যন্ত্রের ব্যবহার।

তাছাড়া, আরও একটা কারণে আমরা মরক্কোতে শুটিং করি। সেটা হলো, তাদের এই পবিত্র সংগীত নিয়ে আলাদা একটা উৎসবই আছে! আমরা অন্য যেসব জায়গায় শুটিং করেছি, সেসব স্থানে সুফি গান গাওয়া হতো কেবল মাজার বা দরগায়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবেই। মরক্কোতে এসব গান মঞ্চে গাওয়া হয়।

পাকিস্তানে বাবা ফরিদের দরগায় কাওয়ালি গানের শুটিং করেছিলাম আমরা। নুসরাত ফতেহ আলি খানের গাওয়া গানের আর্কাইভ ফুটেজও ব্যবহার করেছি আমরা। আর তাই মরক্কোতে খোলা মঞ্চে সুফি গানের পরিবেশন আমাদের দারুণ মুগ্ধ করে।

আসলে ছোট্ট একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে আমরা অনেক বড় একটি বার্তা প্রকাশ করতে চেয়েছি। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষকেও দেখানো হয়েছে, যাদের আওয়াজ বিশ্বের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন।

গ্লিটজ: আপনার কি মনে হয়না, যেভাবে বিশ্বের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে, তাতে করে গোটা বিশ্বের সংগীত এবং সংস্কৃতির যে বৈচিত্র এবং তার যে বিবর্তন, সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?

সায়মন: হ্যাঁ, সত্যিই এটা খুব ভয়ঙ্কর! এসবের তো ভয়ঙ্কর সব উদাহরণ ছড়িয়ে আছে আশপাশে। বিশেষ করে সিরিয়া এবং আরাকের বিস্তীর্ণ ঐতিহাসিক অঞ্চলে আইসিস যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, সেটা তো মেনেই নেওয়া যায়না। ওইসব স্থানের ঐতিহ্য গোটা মানবসভ্যতারই সম্পদ ছিল, এবং তারা সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেছে। এর আগে এই ইতিহাস হাজার হাজার বছর ধরে টিকে ছিল। এটা এক ভয়ঙ্কর অপরাধ!

আমি সিরিয়ার আলেপ্পোতে শুটিং করেছি। কী সুন্দর একটা জায়গা, স্বপ্নের মতো একটা শহর ছিল সেটা! কেবল সুফি গানের বিভিন্ন ধারা নয়, কিন্তু খৃষ্টান এবং অন্য সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা, যেমন ইয়াজীদি কিং বা শিয়ারা- সবার সংস্কৃতিই সেখানে পাশাপাশি অবস্থান করতো। সেই শহর ধ্বংস হয়ে গেল! আর সে ভয়াবহ যুদ্ধ সেখানে চলছে, তাতে করে ভবিষ্যতে কি আমরা আলেপ্পোকে আবার জনপ্রিয় একটি সাংস্কৃতিক মিলনমেলা হিসেবে দেখতে পাবো? আমি জানি না…

গ্লিটজ: আপনি কি আশঙ্কা করছেন, এসবের জন্য প্রাচ্যের দারুণ এই সুফি গানের ধারা হারিয়ে যাবে?

সায়মন: আমি মনে করি সুফি গানের এই সংস্কৃতি অনেক স্থিতিশীল। সিরীয় সংগীত হারিয়ে যাবে, এটা আপনি বলতে পারেন না। তবে যারা এতকাল ধরে এই সংস্কৃতিকে লালন ও ধারণ করে আসছে, সেই সমাজটি আমার ধারণা এখন বিপদের মুখে। সেই উদার, বহুমুখী সাংস্কৃতিক সমন্বয় এখন বড় বিপন্ন।

গান ছাড়া আসলে কেউই বাঁচতে পারে না (তালেবানরা ছাড়া)! তাই সংগীত অবশ্যই টিকে থাকবে, নানান মাধ্যমে, নানান আকৃতিতে।

এই যে দেখুন, আপনাদের এখানে বটগাছের নিচে বাউল গানের উৎসব চলছে। এটা দেখে আমি সংগীতের অসাধারণ শক্তি নিজের ভেতরে অনুভব করি। লালনের গান হয়তো মাত্র দেড়শ বছর আগেকার কথা, কিন্তু বাউল গান আরও অনেক পুরানো। অথচ এখনও টিকে আছে!

রাজনীতি তো স্বাভাবিকভাবেই সংগীতকে বদলাতে চাইবে; আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ধরণের পরিস্থিতি (যেখানে রাজনীতি এবং সংস্কৃতির সংঘর্ষ ঘটে) আগ্রহ নিয়ে পর‌্য‌্যবেক্ষণ করি। তবে অধিকাংশ সময়ই এর থেকে কোনো ভাল ফলাফল আসে না।

গ্লিটজ: ইউরোপে কি প্রাচ্যের এই সুফি মিউজিক শোনে?

সায়মন: অবশ্যই! কাওয়ালি তো খুবই জনপ্রিয়। আপনি যদি লন্ডনের একটি কাওয়ালি কনসার্টে যান, তাহলে দেখবেন, দর্শকদের অর্ধেক হলো দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীরা, বাকি অর্ধেক ব্রিটিশ এবং অন্য ইউরোপিয় নাগরিকেরা। এটা একটা মিশ্র সংস্কৃতি, এক কথায় অসাধারণ! ওখানে মানুষ সবধরণের সংগীতকেই খোলা মন নিয়ে গ্রহণ করে।

গ্লিটজ: এখানেই আমি কিছুটা বিভ্রান্ত। আমি আপনাকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে এসব বলছি না, কিন্তু যখন ব্রেক্সিট-এর প্রসঙ্গ আসে, তখন ব্রিটেন কিন্তু অভিবাসী এবং শরণার্থীদের জন্য এর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং তিনিও ‘নো ইমিগ্র্যান্ট, প্লিজ’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বসে আছেন! তো আপনার কি মনে হয়, এই সংস্কৃতির এই আদান-প্রদানের অভাব কি যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ভবিষ্যতে বোধ করবে না?

সায়মন: অবশ্যই! তবে আমি আগেই বলে নিই, আমি নিজে কিন্তু ব্রেক্সিট-এর পক্ষে ভোট দেইনি। লন্ডনও ব্রেক্সিট-এর পক্ষে ছিল না। ব্রিটেনের বড় বড় শহরের বেশিরভাগই এটার বিপক্ষে ছিল। মূলত গ্রামঞ্চলের মানুষরাই ব্রেক্সিট চেয়েছে। দুঃখজনকভাবে সেসব মানুষের সূক্ষ্ সংখ্যাধিক্যই বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।

আমি খুবই চিন্তিত, কী হতে চলেছে সেটা নিয়ে। কেউই আসলে জানে না, অভিবাসন নীতির আসলে কী হবে! তবে মানুষেরা আশা করি একইরকম থাকবে।

যতদূর জানি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষদের চিন্তার কিছু নেই। ব্রিটেনের ভিসা ভারতীয় বা পাকিস্তানি বা বাংলাদেশিদের জন্য আগেও যে খুব সহজ ছিল, তা তো নয়। যদিও ভারতীয় উপমহাদেশের লোকেদের একটা বিরাট গোষ্ঠি এখন আমাদের সমাজেরই অংশ।

আমি চিন্তিত যারা সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোর আয়োজন করে, তাদের নিয়ে। ভিসার জটিলতা পেরিয়ে এতগুলো জাতিসত্ত্বার মানুষের উপযুক্ত সংগীতের আয়োজন তারা কীভাবে করবে, সেটা ভাববার মতো বিষয়। আর আমাদের সবার জন্যই সেটা খারাপ খবর।

গ্লিটজ: আপনার প্রসঙ্গে ফেরত আসি আবার। এই নিয়ে তৃতীয়বার আপনি বাংলাদেশে এলেন। ভারত বা পাকিস্তানি সংগীতের সঙ্গে বাংলাদেশের সংগীতের তুলনাটা আপনার কাছে কেমন?

সায়মন: এখানে আমার যেটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে, সেটা হলো বাউল গান। আমি মনে করি, এটা অনন্য। একদিক দিয়ে অন্য দেশগুলোর সুফি গানের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সংযোগ আছে। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রটা একই। কিন্তু আওয়াজটা ভিন্ন, যন্ত্র আয়োজনও ভিন্নরকম এবং ভাষা তো ভিন্ন বটেই। এই প্রসঙ্গে আমার একটি প্রিয় উক্তি আমি উদ্ধৃত করতে চাই, ‘সুফিবাদ হলো নদীর মতো; এটি যে দেশ দিয়ে বয়, সে দেশের মাটির রং ধারণ করে’! আমার মতে, এর চেয়ে খাঁটি কথা আর হয় না। আফগানিস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক, মরক্কো, পাকিস্তান কিংবা ভারত- সব জায়গাতেই সুফি গান স্থানীয় চরিত্র ধারণ করেছে। একই কথা এই দেশের বাউল গানের ক্ষেত্রেও খাটে।

আর দোতারা আমার খুবই ভাল লেগেছে। বিশেষ করে এর ময়ূরশীর্ষটি। এর মধ্যে যে শৈল্পিকতার ছোঁয়া রয়েছে, তা অতুলনীয়। সেইসঙ্গে বাউল গানের যে মর্মার্থ, আমার মতে গোটা বিশ্বকে দেওয়ার মতো অনেক বার্তা এখানে রয়েছে।

গ্লিটজ: আপনি কি আমাদের এই বাউল গান নিয়ে কোনো ফিল্ম তৈরি করবেন?

সায়মন: আমি তো সবসময়ই চাই এইধরণের গানের বার্তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে, কিন্তু কাউকে তো এর পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে! এই ধরণের কাজের জন্য অর্থসংস্থান দিনকে দিন কমেই যাচ্ছে।

তবে সুযোগ পেলে অবশ্যই একদিন আমি বাউল গানের কথা সারা বিশ্বকে জানাতে চাই!