কয়েকবছর আগেই যৌথপ্রযোজনার সিনেমার বিরূদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিলেন যে শাকিব খান, চলতি বছরে তাকেই দেখা গেছে এই ধারার ছবিতে রাজত্ব করতে। জাজ মাল্টিমিডিয়া আর এককে মুভিজের প্রযোজনায় ‘শিকারী’ ছবির মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। টালিগঞ্জের নায়িকা শ্রাবন্তীর সঙ্গে অভিনয় আর এই সম্পূর্ণ নতুন লুকে হাজির হওয়া- সবমিলিয়ে এই সিনেমার মাধ্যমেই নিজেকে আমূল পাল্টে ফেলেন শাকিব।
বছরজুড়ে মুক্তি পেয়েছে শাকিব অভিনীত ছয়টি ছবি। এর মধ্যে ‘শিকারী’ ও ‘বসগিরি’ বক্স অফিস মাতিয়েছে পুরোদমে। অন্যদিকে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি টু’, ‘সম্রাট’-এর মতো সিনেমাগুলি করেছে হতাশ। বছরশেষে হাজির হয়েছেন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামের নতুন সিনেমার ট্রেইলার নিয়েও। সেখানেও তাকে দেখা গেছে কয়েকটি নতুন লুকে। সবমিলিয়ে ২০১৬ ছিল শাকিবের বদলে যাওয়ার বছর- এ কথা বলবেন সবাই।
বছরের শুরুতেই হুমায়ূন আহমেদ-এর উপন্যাস অবলম্বনে মেহের আফরোজ শাওন নির্মিত ‘কৃষ্ণপক্ষ’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসেন মূলধারার সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহি। কিন্তু ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় হঠাৎ বিয়ে ও পরবর্তীতে এক বাল্রবন্ধুর করা এক বিতর্কীত মামলা নিয়ে বছরজুড়েই তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে।
গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’ দিয়ে বড়পর্দা মাত করেছিলেন মঞ্চ ও ছোটপর্দার চেনামুখ চঞ্চল চৌধুরী। কিন্তু পরের বছরগুলিতে রূপালি জগৎ থেকে যেন হারিয়েই গিয়েছিলেন তিনি। চলতি বছরে আবারও তিনি এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘আয়নাবাজি’ দিয়ে সৃষ্টি করলেন ঢাকাই সিনেমার বক্সঅফিসে এক নতুন ইতিহাস।
‘আয়নাবাজি’ সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়্যারের শুরুতেই ঢালিউডের সকল শ্রেণির দর্শকের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন মাসুমা রহমান নাবিলা। এর আগে বিজ্ঞাপনের মডেলিং, নিয়মিত টেলিভিশনে উপস্থাপনা ও বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করলেও আগের সকল পরিচয়কে ছাপিয়ে ঢাকাই সিনেমার নায়িকা হিসেবে পাদপ্রদীপের আলোয় ঠাঁই করে নেন তিনি।
অভিষেকেই শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ! তাও আবার দুটি সিনেমায়! সাবেক সংবাদপাঠিকা শবনম বুবলির এমন মখমলে মোড়ানো চলচ্চিত্র যাত্রা স্বাভাবিকভাবেই নজরে কেড়েছে সবার। শাকিবের বিপরীতে ‘বসগিরি’ ও ‘শুটার’ সিনেমায় অভিনয় রাতারাতি তাকে তারকা বানিয়ে দেয়।
আরিফিন শুভর চলতি বছরে মুক্তি পেয়েছে মাত্র তিনটি সিনেমা। আশিকুর রহমানের ‘মুসাফির’, অনন্য মামুনের ‘অস্তিত্ব’ ও জাকির হোসেন রাজুর ‘নিয়তি’। ব্যবসায়িকভাবে এই তিনটি সিনেমা বক্সঅফিসে নিজেদের দাপুটে অবস্থান তৈরি করতে না পারলেও নিজের অভিনয় আর প্রচারকৌশল দিয়ে ঠিকই বছরজুড়ে দর্শকমহলে আলোচনায় ছিলেন শুভ।
চলতি বছরের শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন পরীমণি। পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ঘরানার নায়িকা হওয়া সত্ত্বেও ‘মনপুরা’খ্যাত নির্মাতা গিয়াসউদ্দীন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়া, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার বাগদানের ছবি ভাইরাল হওয়া এবং ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘রক্ত’ সিনেমায় অ্যাকশন অবতারে হাজির হওয়া- সবমিলিয়ে সারা বছর নিজেকে স্পটলাইটে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
গল্প নির্ভর সিনেমার গণ্ডি পেরিয়ে ঢালিউডের পুরোদস্তর বাণিজ্যিক ঘরানার ‘অস্তিত্ব’ ও ‘রানা পাগলা: দ্য মেন্টাল’ সিনেমা দুটিতে অভিনয় করে আলোচনায় উঠে আসেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। এছাড়াও পরবর্তীতে বছরের মাঝামাঝি সময়ে ‘ডুব’ সিনেমায় ইরফান খানের বিপরীতে অভিনয় করার মাধ্যমে আবারও আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।
চলতি বছরে বাপ্পী চৌধুরীর বৃহস্পতি তুঙ্গে ছিলো না মোটেই। বছরের শুরুতে ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘সুইটহার্ট’ সিনেমা দিয়ে ছবিমুক্তির খাতা খুললেও পরের সময়টাতে তেমন সাড়া ফেলতে পারেননি তিনি। চলতি বছরে তার মুক্তিপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘অনেক দামে কেনা’, ‘বাজে ছেলে’, ‘আমি তোমার হতে চাই’ ইত্যাদি। তবে বছরের শেষে অনন্য মামুনের ‘আমি তোমার হতে চাই’ সিনেমাকে ঘিরে ডাবিং বির্তকের কারণে আবারও আলোচনায় উঠে আসে তার নাম।
চলতি বছরের শুরুতে নুসরাত ফারিয়া অভিনীত বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘হিরো ৪২০’ সিনেমা মুক্তি পেলেও ‘বাদশা’ সিনেমার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সকলের নজর কাড়েন তিনি। ‘বাদশা’ সিনেমায় টালিগঞ্জের সুপারস্টার জিতের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তিনি।
চলতি বছরে ‘পোড়ামন’ খ্যাত নায়ক সাইমন সাদিকের চারটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ব্যবসায়িকভাবে বক্সঅফিসে সিনেমাগুলো লাভের মুখ না দেখেলেও মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোতে অভিনয়ের মাধ্যমে নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এই বছর তার মুক্তিপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘মাটির পরী’, ‘পুড়ে যায় মন’, ‘অজান্তে ভালোবাসা’, ‘চোখের দেখা’।
যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘রক্ত’ সিনেমায় পরীমণির বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢালিউডের নবাগত অভিনেতা হিসেবে গণমাধ্যমের নজরে চলে আসে নবাগত রোশান। ঈদুল আযহায় মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি প্রত্যাশা অনুযায়ী বক্সঅফিসে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে না আলোচনায় আসতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
চলতি বছরের শেষের দিকে মুক্তি পায় এস এ হক অলিকের ‘এক পৃথিবী প্রেম’। দেশীয় প্রযোজনায় নির্মিত এই সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষিক্ত হন নবাগত আসিফ নূর। পারিবারিক আবহের গল্প নির্ভর সিনেমার কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমার সম্ভাবনাময় নায়কের তালিকায় নিজের ঠাঁই করে নিয়েছেন তিনি।