শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দুদিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন দেশের বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের অগ্রজ নির্মাতারা।
পরে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এক স্মৃতিচারণ পর্বে অংশ নেন তারা।
স্মৃতিচারণ পর্বে চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল বলেন, “নতুন যুগ, নতুন প্রযুক্তি-নতুন সব কিছু। এই সময়ে এসেও বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম তাদের প্রতিবাদী অবস্থানটি ধরে রেখেছে।
“এই ফোরাম শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণ বা উৎসবের প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একইসঙ্গে বাঙালির একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনও বটে। মুক্ত চলচ্চিত্র মানেই মুক্ত প্রকাশ।”
বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র উৎসবের নামে ‘হঠাৎ নেতা বনে যাওয়া’ কতিপয় চলচ্চিত্রকারদের সমালোচনা করেন তানভীর মোকাম্মেল।
“উৎসব আয়োজনের নামে আমরা যেন কোনোভাবেই কর্পোরেট পুঁজির দাস না হয়ে পড়ি, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের মধ্যেই কাউকে দেখি, পাঞ্জাবি-পাজামা পড়ে মন্ত্রণালয়ে ঘোরাফেরা করেন, উৎসব আয়োজনকে ইস্যু করে নেতা বনে যেতে চান। চলচ্চিত্র সংগঠনকে পরে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলেন। এদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি।”
চলচ্চিত্রকার-শিক্ষক ও শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জাকির হোসেন রাজু বলেন, “ফোরামের মাধ্যমে আমরা স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির আন্দোলনটি ছড়িয়ে দিয়েছি দেশ-বিদেশে। অসম্ভব কঠিন জেনেও পুঁজি আর প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে নিজের মতো করে ছবি নির্মাণ করছি আমরা।”
আলোচনাপর্বে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রকার ও শিক্ষক মানজারে হাসীন মুরাদ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী মোরশেদুল ইসলাম ও জাহিদুর রহিম অঞ্জন, নির্মাতা দেওয়ান শামসুর রাকিবসহ চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্বরা।
মানজারে হাসীন মুরাদ বলেন, “দেশীয় চলচ্চিত্রের দুরাবস্থায় শক্তিশালী ও শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র উপহারের অঙ্গীকার নিয়ে তখন আবির্ভূত হয় শর্ট ফিল্ম ফোরাম। সে সময়ে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আন্দোলনও গড়ে তুলেছিল তারা।”
মোরশেদুল ইসলাম বলেন, “আজকে যারা বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন, তাদের অনেকেই কিন্তু শর্ট ফিল্ম ফোরামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে তারা কিন্তু কোনো না কোনোভাবে এই আন্দোলনটি দ্বারা প্রভাবিত।”
আলোচনাপর্বে বক্তারা বলছেন, স্বল্পদৈর্ঘ্য আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ হচ্ছে হচ্ছে ‘সৎ-সুস্থ ও প্রগতিশীল চলচ্চিত্র ধারাকে সমুন্নত রেখে কুরুচিপূর্ণ বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা’।
মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে ‘বিরক্ত’ দর্শককে ‘সুষ্ঠু ও শিল্পবোধসম্পন্ন’ সিনেমার স্বাদ এনে দিতে ১৯৮৬ সালে বিকল্পধারার চলচ্চিত্র নির্মাতারা গঠন করেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম।
চলতি বিশ্বের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নানামুখী সমস্যা, সমাধানের অন্তরায়, আর উদ্যমী তারুণ্যর গল্প উঠে এসেছে ফোরামের সদস্য এবং বিকল্পধারার নির্মাতাদের স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে।
তখন থেকেই ‘বাণিজ্য-সর্বস্ব’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাঁড়িয়ে ফোরামের সদস্যরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অভিন্ন সমস্যাগুলো নিরসনের জন্য ‘সক্রিয় ভূমিকা’ পালন করছেন।
একইসঙ্গে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের বিকল্প প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, গণতান্ত্রিক উপায়ে অধিকার আদায় আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি ইস্যুতেও কাজ করছ শর্ট ফিল্ম ফোরাম।
ত্রিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে শুক্রবার বিকালে ‘স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্রের তিন দশক: সাফল্য, ব্যর্থতা’ শিরোনামে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আশির দশকে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে উৎসব ভেন্যু জাতীয় চিত্রশালার সেমিনার হলে। পরে বিভিন্ন দশকের নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।