প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা এই উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মিলনায়তনে। বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ী নির্মাতাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি আলী হায়দার সাগর।
অন্যান্য আসরের তুলনায় এবারের আসরের পরিসর হয়ে উঠেছিল আরও বড়। বাংলাদেশসহ এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকার ৬৭টি দেশের ৫৬২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ৭৬৮টি চলচ্চিত্র জমা পড়েছিল এবার। যার মধ্য থেকে বাছাই করা ৮৫টি চলচ্চিত্র এবারের আসরে প্রদর্শিত হয়। অন্যান্যবারের মতো শুধু রাজধানী ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি উৎসবের পরিসর, চট্টগ্রামের আঁলিয়াস ফ্রঁসেজে ১৭ এবং ১৮ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় এবারের আসরের প্রথম পর্বটুকু।
পুরো আসরের ঘটনাবলী নিয়ে নিজ অভিজ্ঞতা গ্লিটজকে জানালেন সংগঠনটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হাসনাইন মাহমুদ। চট্টগ্রামে এই উৎসবের আয়োজন হয়েছে প্রথমবারের মতো। জানালেন সেখানকার অবস্থা, “চট্টগ্রামে দর্শক উপস্থিতি ছিল একেবারে কল্পনাতীত! আঁলিয়াস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে মানুষ জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়নি, অনেককেই দাঁড়িয়ে দেখতে হয়েছে আসরের সবগুলো সিনেমা।”
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি উৎসব এই প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রামে, বিষয়টি সেখানকার চলচ্চিত্র উৎসুক তরুণদের অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেই মনে করছেন হাসনাইন, “উৎসবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক তরুণই এসেছিলেন, যারা সিনেমা নির্মাণে আগ্রহী কিন্তু তাদের মধ্যে কাজ করে জড়তা। এরকম আসর তাদের সিনেমা নির্মাণের উৎসাহ বাড়িয়েছে বলেই আমি মনে করি।”
উৎসবের সিনেমাগুলোর মধ্যে ভালোভাবেই ধরা পড়েছে বৈচিত্র্য, তবে প্রতিটি চলচ্চিত্রে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি একটি বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে ব্যক্ত করেন তিনি, “পুরো পৃথিবীটাকেই তরুণরা এক দৃষ্টিতে দেখে। শুধু দেশের সীমানা আর সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা ভেদে প্রকাশভঙ্গিটা বদলে যায়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে যেমন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র এবার উৎসবে ছিল, তেমনি ছিল আগ্রাসন বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তা। যুদ্ধ, ভালোবাসা, স্বপ্ন- মানুষকে ঘিরে এই ঘটনাচক্রগুলো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রকাশ পেয়েছে প্রতিটি চলচ্চিত্রে।”
উৎসবের সমাপনী দিনে এবারের ‘জহির রায়হান বেস্ট শর্ট’ পুরস্কারটি জিতে নেয় শিন গিউ ক্যাং নির্মিত দক্ষিণ কোরিয়ান সিনেমা ‘আপোরিয়া’। সেরা অ্যানিমেটেড সিনেমার পুরস্কার বগলদাবা করেছে মার্কিন নির্মাতা ডসান শিনের ‘ফক্স টেল’।
বাংলাদেশি সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পুরস্কারটি জিতে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাম কৃষ্ণ সাহা নির্মিত ‘নো গড’ চলচ্চিত্রটি। সেরা অ্যানিমেটেড পুরস্কার জিতে নেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর শিক্ষার্থী শরীফুল অনিকের ‘রিদমস অফ রাইমস’।
সারা বাংলাদেশ থেকে জমা পড়া স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে সেরার খেতাব জিতেছেন, তবে নিজের অনুভূতি প্রকাশে আনন্দের অভিব্যক্তির চাইতে চলচ্চিত্রের জন্য নিজের উৎসাহটাই দেখালেন রাম, “প্রথম অভিজ্ঞতা, এবং খুবই দারুণ। কেউ এটাকে আমার কাজের প্রাপ্য সম্মাননা বলবেন, কিন্তু এটি আমার কাছে সিনেমার জন্য ভালোবাসা। দীর্ঘ চার বছরের পরিশ্রমের পর এটাই আমার প্রথম চলচ্চিত্র। পুরষ্কার পাবো, কখনই চিন্তা করিনি, তবে এই অভিজ্ঞতা আমার কাছে অসাধারণ।”
প্রথম চলচ্চিত্র দিয়েই সেরার স্বীকৃতি জিতে নিয়েছেন, ‘নো গোড’ বানানোর প্রেক্ষাপট নিয়েও সংক্ষিপ্তভাবে জানালেন রাম, “স্বল্প সময়ে বেশ কিছু গল্পের অন্তর্ভূক্তি দেখিয়েছি চলচ্চিত্রে। প্রত্যেক মানুষের কাছেই কোনোকিছু দেখা বা শোনার পরিপ্রেক্ষিতটা ভিন্ন। এই বিষয়টিই আমার সিনেমায় প্রত্যক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিনেমার ভাষায় সামাজিক কন্ট্রাস্টটাকে সরাসরি বোঝাতে চেয়েছি।”
এবারের আসরের সাফল্য পরবর্তী বছরে আরও বড় পরিসরে যাবে, এমন প্রত্যাশায় সমাপ্ত হয় এবারের আন্তর্জাতিক আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব।