২০১৬তে টালিগঞ্জের প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলো

২০১৬ সালে টালিগঞ্জের এমন কিছু সিনেমা মুক্তি পেতে যাচ্ছে, যেগুলো নিয়ে দর্শকের প্রত্যাশা ক্রমশ বাড়ছে। এগুলোর মধ্যে দুটি প্রাক্তন জুটিগুলোকে ফেরাবে এবং দুটি উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ধ্রুপদী রচনাকে পর্দায় ফেরাবে। আশা করা হচ্ছে ১৫০টির মতো সিনেমা মুক্তি পাবে এ বছর। এগুলোর মধ্যে সাড়া জাগাতে পারে এমন কয়েকটি সিনেমার বৃত্তান্ত তুলে ধরা হলো।

চিন্তামন তুষারচিন্তামন তুষারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2016, 09:23 AM
Updated : 8 Jan 2016, 09:23 AM

ধুমকেতু

পরিচালক: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনয়: দেব, শুভশ্রী ও রুদ্রনীল ঘোষ।

শুটিংয়ের আগেই প্রত্যাশার পারদ চড়িয়েছে এমন সিনেমার মধ্যে অবশ্যই এটি প্রথমদিকে থাকবে। কৌশিকের এই সিনেমার জন্য সাবেক প্রেমিক যুগল দেব ও শুভশ্রী এক হয়েছেন দীর্ঘ প্রায় চার বছর পর। নৈসর্গিক নৈনিতালে চলছে শুটিং, সিনেমাটিতে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দেব ও শুভশ্রী। দেব এই সিনেমার মাধ্যমে প্রযোজনায় নাম লিখিয়েছেন।

 

প্রাক্তন

পরিচালক: নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অভিনয়: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপরাজিতা আঢ্য, সাবিত্রি চট্টোপাধ্যায়।

নন্দিতা ও শিবপ্রসাদ এবারের চমক দিয়েছেন অভিনেতা নির্বাচনে। দীর্ঘ ১৪ বছরের নীরবতা ভেঙ্গে আবার একসঙ্গে কাজ করায় মত দিয়েছেন প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা। সিনেমার নাম ‘প্রাক্তন’। এই সিনেমাতে ‘বেলাশেষে’ জুটি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কেও দেখা যাবে, যারা একই পরিচালক জুটির মাধ্যমে এক ফ্রেমে মুখ দেখিয়েছেন ৩০ বছর পর।

 

জুলফিকার

পরিচালক: সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অভিনয়: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, অঙ্কুশ, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত।

এই বছরের সবচেয়ে বড় সিনেমা হতে যাচ্ছে এটি। সৃজিত তার নতুন সিনেমার জন্য ‘রাজকাহিনী’র মতোই বহু তারকার সমাবেশ ঘটিয়েছেন। ব্রিটিশ নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়রের দুটি বিয়োগাত্মক রচনা ‘জুলিয়া সিজার’ ও ‘অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা’কে এক করেছেন ‘জুলফিকার’-এর চিত্রনাট্য রচনায় এবং চরিত্রায়ন। প্রসেনজিৎ, দেব, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অঙ্কুশ, যিশু সেনগুপ্ত, পাওলি দাম, নুসরাতরা সিনেমায় অভিনয় করছেন বলে শোনা গেছে।

 

সিনেমাওয়ালা

পরিচালক: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনয়: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সোহিনী সরকার, পরান বন্দোপাধ্যায়।

কৌশিকের ‘সিনেমাওয়ালা’ মুক্তির আগেই জিতে নিয়েছে ইউনেস্কো ফেলিনি মেডেল- ৪৬তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া। সিনেমাটির গল্পে সাবেকী প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ডিজিটালাইজেশনের যুগে এর বিরুদ্ধে দাড়িয়ে এক প্রেক্ষাগৃহ কর্ণধারের বেঁচে থাকার সংগ্রাম তুলে ধরেছে।

 

শঙ্খচিল

পরিচালক: গৌতম ঘোষ, অভিনয়: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কুসুম শিকদার, প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল।

‘মনের মানুষ’-এর পর প্রসেনজিৎ-এর সঙ্গে গৌতম আবারও হাত মিলিয়েছেন। সেই সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার মাধ্যমে আবারও দুই বাংলার চলচ্চিত্র জগতের মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের কুসুম শিকদারকে এ সিনেমায় দেখা যাবে প্রসেনজিৎ-এর বিপরীতে। ‘শঙ্খচিল’ পর্দায় তুলে ধরবে দেশভাগ কিভাবে দুদেশের সীমান্তবর্তী মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে চিরে দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে সিনেমার শুটিং হবে। সিনেমাটি প্রযোজনা করছেন প্রসেনজিৎ।

পিস হ্যাভেন

পরিচালক: সুমন ঘোষ, অভিনয়: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুণ মুখোপাধ্যায়।

সিনেমাটি তিন প্রবীণ বন্ধুর অভিযাত্রার গল্প বলে, যারা পরপারে চলে যাওয়ার দিন গুণছেন। তিন শক্তিমান শিল্পী - সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অরুণ মুখোপাধ্যায় ও পরান বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ সিনেমার মাধ্যমে এক ফ্রেমে ধরেছেন সুমন। সেই সঙ্গে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন বয়স্কদের সামাজিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা।

 

সহরা ব্রিজ

পরিচালক: বাপ্পাদিত্য বন্দোপাধ্যায়, অভিনয়: নিহারীকা সিং, বরুণা চন্দ, প্রতীক

পরিচালক বাপ্পাদিত্যর শেষ সিনেমা ‘সহরা ব্রিজ’। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও সিনেমাটির শুটিং করেছেন। শেষ করে কলকাতা ফিরতেই আকস্মিক মৃত্যু ডেকে নেয় তাকে। সিনেমাটি দেখার জন্য দর্শক নিশ্চিত অপেক্ষায় থাকবেন। কারণ, চেরাপুঞ্জির নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি, আর বাপ্পার গল্প বলার ধরন-ধারন, চলচ্চিত্রায়ন। সিনেমায় দেখা যাবে, নিহারীকা সহরায় (চেরাপুঞ্জি) এসেছেন সত্যের খোঁজে।

 

ক্ষত

পরিচালক: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অভিনয়: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন, পাওলি দাম।

তিন বছরের মধ্যে প্রথম রোমান্টিক ধাঁচের ছবি মুক্তি দিতে চলেছেন কমলেশ্বর। দুই বছর আগে মুক্তি পায় তার শেষ সিনেমা ‘চাঁদের পাহাড়’ (২০১৩)। তিন তারকার এই সিনেমাটিও সাড়া জাগাতে পারে। 

লুডো

পরিচালক: কিউ ও নাইকন, অভিনয়: রি, জয়রাজ ভট্টাচারর‌্য, তিলোত্তমা সোম, কমলিকা।

অদ্ভূত কর্ম-কাণ্ডের জন্য পরিচিত পরিচালক কিউ এবারই প্রথম ভৌতিক সিনেমায় যৌথভাবে হাত দিলেন কানাডাভিত্তিক এক পরিচালক ও সম্পাদক নাইকোর সঙ্গে। সিনেমার শুরুটা হয়, চার কিশোর-কিশোরীর এক শপিংমলে আটকে পড়া নিয়ে। এরপর তারা এক দম্পতির দেখা পান, যারা তাদের লুডো খেলার প্রস্তাব দেয়।

সাহেব বিবি গোলাম

পরিচালক: প্রতিম ডি গুপ্তা, অভিনয়: অঞ্জন দত্ত, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, পার্নো মিত্র, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

‘সাহেব বিবি গোলাম’র চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক নিজেই। অঞ্জন দত্তের মতো অভিনেতাসমৃদ্ধ থ্রিলার ধাঁচের সিনেমাটি মুক্তি পেতে পারে বছরের প্রথমার্ধেই।

সিন্দুর খেলা

পরিচালক: রবি কিনাগি, অভিনয়: অঙ্কুশ, মিমি চক্রবর্তী।

‘জামাই ৪২০’-এর পর মিমি ও অঙ্কুশ আরো একবার রোমান্টিক ধাঁচের সিনেমার জন্য এক হলেন। সিনেমাটিতে এই জুটি আবার স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।

হেমন্ত

পরিচালক: অঞ্জন দত্ত, অভিনয়: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, পায়েল সরকার।

ভিশাল ভারাদওয়াজের ‘হ্যামলেট’-এর রূপান্তর ‘হায়দার’ পছন্দ হয়নি অঞ্জন দত্তের। তাই নিজেই উদ্যোগ নিলেন আরেকটা হ্যামলেট বানানোর। নাম দিয়েছেন ‘হেমন্ত’। কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা যাবে পরমব্রতকে। 

চলচ্চিত্র সার্কাস

পরিচালক: মৈনাক ভৌমিক, অভিনয়: ঋত্বিক চক্রবর্তী, কনিনিকা বন্দোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, পাওলি দাম, তনুশ্রী।

অদ্ভুত হলেও মৈনাক ভৌমিকের সিনেমাগুলো সবসময় আগ্রহোদ্দীপক। সিনেমায় ঋত্বিক অভিনয় করেছেন এক চলচ্চিত্র নির্মাতার চরিত্রে, পায়েলের চরিত্রটি বোকাটে এক নায়িকার।

 

টোপ

পরিচালক: বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত, অভিনয়: পাওলি দাম, চন্দন রায় স্যানাল, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়।

বুদ্ধদেবের সিনেমাটি নির্মাণ ও নামকরণ করা হয়েছে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘টোপ’ অবলম্বনে। শঙ্কর ঘোষ নামের ব্যক্তি এ এক শিশুকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেন, যার মায়ের চরিত্রে রয়েছেন পাওলি দাম।

ডার্ক চকলেট

পরিচালক: অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়, অভিনয়: মাহিমা চৌধুরী, রিয়া সেন, মমতাজ সরকার, ইন্দ্রাশীষ রায়।

গত বছর ভারতের আলোচিত শিনা বোরা হত্যাকাণ্ডকে রূপালী পর্দায় রূপ দিতে চলেছেন পরিচালক অগ্নিদেব। এখন দেখার বিষয় সাড়া জাগানো ঐ ঘটনাটিকে কিভাবে তিনি তুলে ধরেন দর্শকের কাছে।

এ বছরটা বেশ কয়েকটি সিকুয়েলও দেখার অপেক্ষায় আছে। যার মধ্যে উল্লেখ করতেই হয়ে, কমলেশ্বরের ‘চাঁদের পাহাড় টু’, অরিন্দম শীলের 'শবর' সিরিজের দ্বিতীয়টি। ‘রংবাজ টু’, ‘বস টু’, ‘পাগলু থ্রি’, ‘প্রেম আমার টু’ সিনেমাগুলোও স্থান পাবে এই তালিকায়। ‘আমার প্রেম তুমি’, ‘লাভ এক্সপ্রেস’, ‘একটা গল্প’, ‘অঙ্গার’ এবং সন্দীপ রায়ের জোড়া ফেলুদার কথাও না বললেই নয়।