সংসদে বাজেট পাস

জাতীয় সংসদে প্রায় ৬০ ঘণ্টা আলোচনার পর নতুন অর্থবছরের জন্য প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2015, 08:04 AM
Updated : 30 June 2015, 02:49 PM

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় বাজেট এটি। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা সপ্তম বাজেট।

মঙ্গলবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে আগামী অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়।

তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা যোগ করলে এই বাজেটের আকার দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। বুধবার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে এই বাজেট কার্যকর হবে।

গত ৪ জুন অর্থমন্ত্রী মুহিত সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে তা পাস হয়।  

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই সাতটি মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন।

এবারের বাজেটে বিশাল ব্যয়ের পরিকল্পনায় আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এই হিসেবে বাজেট ঘাটতি দাঁড়ায় ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। আর বিদেশি অনুদান হিসাবে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পাওয়ার আশায় আছেন মুহিত।

রাজস্ব আয়ের বড় অংশের জোগান আসবে আয়কর, শুল্ক ও মূসক থেকে। এনবিআর আয় করবে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আসবে ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা।

নির্দিষ্টকরণ বিল পাস

আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট চার লাখ ১৫ হাজার ৩০৮ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে।

এর মধ্যে সাংসদদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমাণ দুই লাখ ৭১ হাজার ১৩১ কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় এক লাখ ৪৪ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাই কোর্টের বিচারপতি ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতনও অন্তর্ভুক্ত।

মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব

আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সাংসদরা ৫২৩টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন।

ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো ছিল জনপ্রশাসন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প ও মুক্তিযুদ্ধ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সাংসদদের আলোচনার পর সবগুলো প্রস্তাবই কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।

ইফতার ও নৈশভোজ

বরাবরের মতো এবারও বাজেট পাসের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়। রোজা হওয়ায় এবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নৈশভোজের আগে ইফতার অনুষ্ঠানও ছিল।

ইফতারের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে টেবিল ঘুরে ঘুরে অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, সংসদ সদস্য, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠানে ছিলেন।

সম্পাদক, ব্যবসায়ী নেতাসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরাও এই ইফতার ও নৈশভোজে আমন্ত্রিত ছিলেন।