অবশেষে বিমানবন্দর পাচ্ছে খুলনাবাসী

অবশেষে বৃহত্তর খুলনার মানুষের বহুপ্রতীক্ষিত বিমানবন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2015, 01:47 PM
Updated : 5 May 2015, 01:47 PM

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয়ে বাগেরহাটের রামপালে এই বিমানবন্দর হবে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৯০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। বাকি ৫৪ কোটি টাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এই বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ করবে।

বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মংলা বন্দর, ইপিজেড, চিংড়ি শিল্প ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে বাগেরহাটে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের দ্রুত যোগাযোগ নেটওয়ার্কের দরকার হবে। খান জাহান আলী বিমানবন্দর থেকে খুলনা শহর ও মংলা সমুদ্রবন্দর উভয়েরই দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার।

“ওই এলাকায় বিমানবন্দর হলে সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও খান জাহান আলীর মাজারকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প প্রসারিত হবে। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলে দ্রুত ত্রাণকার্যও এ বিমান বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যাবে।”

১৯৯৬ সালে বাগেরহাট জেলায় খানজাহান আলী বিমানবন্দরটি একটি ‘শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং বন্দর’ হিসেবে চালু করার জন্য ৪১ দশমিক ৩০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের পর কাজ বন্ধ করা হয়। ২০১১ সালের ৫ মার্চ খুলনা জেলা সফরকালে খানজাহান আলী বিমানবন্দরটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৯ বছর পর বিমানবন্দর প্রকল্পটি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

মঙ্গলবারের একনেক সভায় এই প্রকল্পসহ ১ হাজার ৯১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা যোগান দেওয়া হবে।

সভায় গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার রাস্তা, নর্দমা এবং ফুটপাত নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের জন্য ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

‘কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট অব রোডস, ড্রেইনস অ্যান্ড ফুটপাথস অব গুলশান, বনানী অ্যান্ড বারিধারা ডিপ্লোমেটিক এরিয়াস’ শীর্ষক প্রকল্পটির কার্যক্রম ব্যখ্যা করতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনিসুল হককে এ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী উপহার দিয়েছেন।

“ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে ও প্রকল্প উপহার দেবেন প্রধানমন্ত্রী।”

সভায় সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে দুটো প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়, যার একটি হলো ‘মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণ’।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনী জেলার মহিপালে ৬ লেন বিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, মহিপাল চট্টগ্রামে, নেয়াখালী ও লক্ষীপুরসহ বেশ কয়েক জেলার যোগাযোগের মোহনা হওয়ায় প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে। যানজট নিরসন করে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

সড়ক অবকাঠামো খাতের দ্বিতীয় প্রকল্প হলো সোনাগাজী-ওলামাবাজার-চরদরবেশপুর-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে ৬ষ্ঠ কিলোমিটারে ছোট ফেনী নদীর উপর ৪৭৮ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ।

একই সময়ের মধ্যে ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

সভায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ‘পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮০ কোটি টাকা।

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির পল্লী অবকাঠামোর প্রকল্পটির ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।

সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৬১টি জেলার ৩৫০টি উপজেলার ৩০০০টি ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৫০০টি প্রদর্শনী পুকুরে উন্নত মৎস্যচাষ প্রযুক্তি প্রয়োগে মাছের উৎপাদন বাড়ানো হবে। ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত অপর দুটো প্রকল্প হলো- টিকা উৎপাদন প্রযুক্তি আধুনিকায়ন ও গবেষণাগার সম্প্রসারণ (২য় সংশোধিত) এবং মহিষ উন্নয়ন (কম্পোনেন্ট এ + বি) (২য় সংশোধিত)।

ছয়টি জেলা পাবলিক লাইব্রেরি উন্নয়নে সভায় আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

১৫টি জেলার শিল্পকলা একাডেমির নবায়ন, সংস্কার ও মেরামতে ৪০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।