ভর্তুকি কমবে না, বিশ্ব ব্যাংককে মুহিত

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ নাকচ করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি ওয়াশিংটন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2015, 07:26 AM
Updated : 18 April 2015, 08:07 AM

বরং আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা আর্থিক খাতের বিশ্ব মোড়ল বিশ্ব ব্যাংকের কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শুক্রবার বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের বসন্তকালীন (স্প্রিং) বৈঠক শুরু হয়েছে।

সকালে বিশ্ব ব্যাংকের সদরদপ্তরে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এনেট ডিক্সনের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী।

তাদের বৈঠকে  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকির বিষয়টি আলোচনায় আসে।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে নিতে বলেছেন। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, ‘আমাদের মতো গরীব দেশে সেটা সম্ভব নয়’।

“আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে সরকার বরং বিনিয়োগ বাড়াবে। আর এজন্য আরও বেশি ভর্তুকির প্রয়োজন হলে সেটাও দেবে সরকার।দেশের মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে এ খাতে ভর্তুকি কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই আমাদের সরকারের।”

বাংলাদেশে কয়েকটি মূল্যস্তরে বিদ্যুৎ বিল নেওয়ার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি তাকে আরও বলেছি, আমাদের ওখানে বিদ্যুতের দামে কয়েক ধরনের ধাপ আছে। ধনীদের জন্য একটু বেশি দাম। মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গরীবদের জন্য বিদ্যুতের বিল কম আদায় করা হয়।

“দেশের সব মানুষকে যতদিন পর্যন্ত আমরা বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে না পারব ততদিন এ খাতে বিনিয়োগ করেই যাব আমরা। সেজন্য ভর্তুকিও অব্যাহত রাখতে হবে।”

তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমায় গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ খাতে আর বাংলাদেশ সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।

ডিজেল-অকটেন-পেট্টোল-কেরোসিনসহ সব ধরনের জ্বালানিতেই এখন মুনাফা করছে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি।

বিপিসি চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় গত ডিসেম্বর থেকে আমাদের আর কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।”

গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছিল। এবার ওই ব্যয় ১৭ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে বলে মনে করছেন বিপিসি চেয়ারম্যান।

বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর মুহিত বৈঠক করেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলির সঙ্গে।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ভারতের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ভারত সরকারের  ১০০ কোটি ( ১ বিলিয়ন)  ডলার ঋণের ১৬টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৬টির মধ্যে চার-পাঁচটির কাজ এখনও চলছে। নতুন ১০০ কোটি ডলারের ঋণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মে মাসে সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফর নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মুহিত।

আগামী ১৭-১৮ মে ঢাকায় ‘সাউথ-সাউথ কনফারেন্সে’ যোগ দিতে ভারতের অর্থমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী।

ভারতের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশে গম রপ্তানির আগ্রহ প্রকাশ করেন জানিয়ে মুহিত বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দরে গম দিলে বাংলাদেশ ভারত থেকে তা আমদানি করবে বলে তিনি তাকে বলেছেন।

ইবোলা মোকাবেলায় বিশ্ব নেতাদের ভূমিকার  ইতিবাচক মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে শুক্রবার বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের তিন দিনের এই বৈঠক শুরু হয়।

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন ল্যাগার্ডসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের সরকার প্রধান ছিলেন বৈঠকে।

ইবোলা বিষয়ক সামিটের সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বান কি মুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ ও সংস্থা ইবোলা মোকাবেলায় অর্থসহ নানা সহায়তা দিয়েছে।

ভবিষ্যতেও ইবোলা মোকাবিলায় এ ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ প্রধান।

এই সামিটে বিশ্ব ব্যাংক ইবোলা মোকাবেলায় আরও ৬৫ কোটি (৬৫০ মিলিয়ন) ডলার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল  তিন দিনের এ বসন্তকালীন বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের নির্ধারিত অনুষ্ঠানের ফাঁকে নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা জোরিগিতার সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর  আতিউর রহমান।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রানী ঢাকা সফর করবেন বলে জানান গভর্নর।

এছাড়া গভর্নর, অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন, বিশ্ব ব্যাংকে বাংলাদেশের বিকল্প পরিচালক মোহাম্মদ তারেক বিভিন্ন পার্শ্ব বৈঠকে অংশ নেন।

আগামী ১৯ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকের তিনদিনের এ বৈঠক শেষ হবে।