৮৮ ভাগ ঋণ ৪ শতাংশের পকেটে

সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা সিংহভাগ ঋণই ঘুরেফিরে গুটিকয়েক ঋণ গ্রহীতার দখলে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2015, 04:25 PM
Updated : 5 April 2015, 05:19 PM

রোববার অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই তথ্য দেন তিনি।   

আশরাফ উদ্দিন বলেন, “আমি একটি গবেষণা করে দেখেছি, আমাদের ব্যাংকিং খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের ২ শতাংশের কিছু বেশি পায় ৭০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা। ৮৮ শতাংশই পায় মাত্র ৪ শতাংশ গ্রহীতা। অর্থ্যাৎ ৯৬ শতাংশ ঋণগ্রহীতা পায় ১২ শতাংশের মতো ঋণ।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই তথ্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হলেও অসহায়ত্বই ঝরলো তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, “আমি জানি না কীভাবে আমরা এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।”

এটাকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা বলেও মন্তব্য করেন মুহিত।

আলোচনার পর এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে।

টেলিফোনে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমরা যদি বের হয়ে আসতে না পারি তাহলে আমাদের ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে।”

তিনি বলেন, “মাত্র ৪ শতাংশ লোক ব্যাংকিং খাতের ৮৮ শতাংশ ঋণ নিয়ে বসে থাকবে এটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া উচিৎ নয়।”

সে কারণেই এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলে জানান আশরাফ।

তিনি জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের একটি জার্নাল বের করতে গিয়ে তিনি গবেষণাটি করেছিলন। সেখানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থমন্ত্রী তার গবেষণার তথ্যের সঙ্গে একমত পোষণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই অধ্যাপক। তবে ‘শুধু একমত না হয়ে এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে’ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

আশরাফ উদ্দিন বলেন, “যে চার শতাংশ লোকের কাছে ৮৮ শতাংশ ঋণ আটকে আছে তাদের অনেকেই আবার প্রভাবশালী। তাদের অনেক ঋণ বছরের পর বছর খেলাপি হয়ে পড়ে আছে। অদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অদৌ আদায় হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় আছে।”

অলোচনার সূচনা বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিন মাসের সহিংসতা চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিয়েছে।

মুহিত বলেন, “ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা যে হিসাব করেছিলাম তাতে নিশ্চিত ছিলাম যে, এবার আমাদের ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। কিন্তু বিএনপি জোটের তিনি মাসের হরতাল-অবরোধ সহিংসতায় অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা সন্দিহান যে, ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবো কিনা?”

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

জিডিপি হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন অর্থ্যাৎ দেশের অভ্যন্তরে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবার উৎপাদন হয়, তার যোগফল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জিডিপির আকার ছিল চলতি মূল্যে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এটা থেকে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে।

নতুন বাজেট কেমন হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “এই যে আলোচনা শুরু করলাম। সবার কাছ থেকে পরামর্শ-মতামত নিচ্ছি। সে পরামর্শের আলোকেই নতুন বাজেট প্রণয়ন করা হবে। তবে এটা বলতে পারি নতুন বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকা হতে পারে।”

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার।

আগামী ৪ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।

বাজেট আলোচনা  শুরু

সরকারি-বেসরকারি গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে রোববার প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সভায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই), ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি), বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এবং এবং সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় অংশ নেন বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কাজী সাহাবউদ্দিন, নতুন মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ, গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন, নাজনিন আহমেদ, পিআরআইর চেয়ারমস্যান জাহেদী সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ, সহ-সভাপতি আহমদ মুজতাহিদ, ইআরজির নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর  আতিউর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা সচিব শফিকুল আজম, আইএম‌ইডি সচিব শহিদউল্লা খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসলাম আলম প্রমুখ।