আসছে তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট

নতুন বাজেটের আকার তিন লাখ কোটি টাকা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2015, 05:46 PM
Updated : 5 April 2015, 06:00 AM

৪ জুন জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত এই বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। পাস হবে ৩০ জুন।

শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মুহিত বলেন, “এখনও কোন কিছুই ঠিক হয়নি। রোববার থেকে বাজেট আলোচনা শুরু করছি। সেসব আলোচনা থেকে যে সব মতামত-পরামর্শ আসবে সেগুলোই প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হবে।”

এ নিয়ে নবম বারের মতো বাজেট দিতে যাচ্ছেন তিনি।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করবেন রোববার।

মুহিত বলেন, “প্রতিবারের মতো এবারও আমার বাজেটের একটি দর্শন (ফিলোসোফি) থাকবে। আর সেটি হচ্ছে- দারিদ্র্য বিমোচন, সমাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর (সোস্যাল সেফটি নেট) আওতা বাড়িয়ে অসহায়-গরিব মানুষকে সহায়তার মাধ্যমে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসা, কৃষি খাতকে আরও সরক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার- এ সবই হবে নতুন বাজেটের দর্শন।”

বাজেটের মোট আকার কতো হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “বললাম তো কোন কিছুই ঠিক হয়নি। তবে চলতি বাজাটের চেয়ে ১৩/১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি (বেশি) ধরে নতুন বাজেটের রূপরেখা ঠিক করে নতুন বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়।

সে হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার দুই লাখ ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে আভাস দেন মন্ত্রী।

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটের দর্শন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল, মগবাজার-মৌচাক (সমন্বিত) ফ্লাইওভারসহ যে সব মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের সিঁড়িও হবে এবারের বাজেট।

‘আমাদের এই সরকারের মেয়াদের আগেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে’ জানিয়ে মুহিত বলেন, “ইতোমধ্যে এর কাজ ২০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। মেট্রোরেলের ভূতান্ত্রিক জরিপের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ করতে চাই আমরা।”

অন্য সব মেগা প্রকল্পের কাজও বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মুহিত।

‘দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের অর্জনের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

“আমরা সেটা ২০১৩ সালেই অর্জন করে ফেলেছি। আমাদের দারিদ্যের হার এখন ২০ শতাংশের নিচে। আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো যে খানা-ব্যয় জরিপের কাজ করছে তা প্রকাশিত হলে দারিদ্র্যের হার আরও নিচে নেমে আসবে।”

“সে কারণেই বলছি আমার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট হবে ‘স্বপ্ন’ পূরণেরও বাজেট।”

বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থা নির্ধারিত সময়ের আগেই দারিদ্র বিমোচনে এমডিজি লক্ষ্য পূরণের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বলে জানান মুহিত।

ফাইল ছবি

২০১৪ সালের জুলাই মাসে বিবিএস যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, দেশে দারিদ্র্যের হার এখন ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এই হিসাব গত জুন মাস পর্যন্ত। গত এক বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে দশমিক ৮ শতাংশ।

২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের ফলাফল ধরে এই প্রাক্কলন করা হয়েছে। সেই খানা জরিপ অনুযায়ী ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ৩১ শতাংশ।

সর্বশেষ খানা জরিপটি হয়েছে ২০১০ সালে। তবে খানা ব্যয় জরিপের ফলাফল ধরে দুই বছর ধরে প্রতিবছরই দারিদ্র্যের হার প্রাক্কলনও শুরু করেছে বিবিএস। ২০১৫ সালের খানা-ব্যয় জরিপের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে বিবিএস।

প্রতি পাঁচ বছর পর পর খানা জরিপ করে বিবিএস।

প্রাক-বাজেট আলোচনা রোববার শুরু

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ৪ জুন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেস করবেন। এটি হবে বাংলাদেশের ৪৫তম বাজেট। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট এটি।

আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুহিতের এটি সপ্তম বাজেট। তবে এর আগে এরশাদ সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।

এ হিসাবে এবার নবম বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট দিয়েছেন প্রয়াত এম সাইফুর রহমান।

নতুন বাজেটকে সামনে রেখে অর্থমন্ত্রীর প্রাক-বাজেট আলোচনা রোববার থেকে শুরু হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি’র সম্মেলন কক্ষ ও রাষ্ট্রায়ত্ত অতিথি ভবন পদ্মায় এসব আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রাক-বাজেট আলোচনার ১১টি বৈঠকের একটি সময়সূচি ও স্থান চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সে সূচি অনুযায়ী, রোববার দুপুর ১টায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রাক-বাজেট আলোচনা হবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (পিআরআই), ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি), বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এবং এবং সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠঅন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষকদের সঙ্গে।

এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হবে ৭ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টায় একই স্থানে।

খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে সভা হবে ৮ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়।

চ্যানেল আইয়ের উদ্যোগে ‘কৃষি বাজেট, কৃষকের বাজেট’ নিয়ে আলোচনা হবে ৯ এপ্রিল অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে।

১৩ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র যাবেন অর্থমন্ত্রী। ২৪ এপ্রিল তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

দেশে ফিরে ২৭ ও ২৮ এপ্রিল দুইদিন মন্ত্রী বৈঠক করবেন সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবদের সঙ্গে।

অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হবে ২৯ এপ্রিল।

জাতীয় সংসদের চারটি স্থায়ী কমিটির (অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি) সভাপতি ও সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা হবে ১০ মে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর প্রাক-বাজেট আলেঅচনা হবে ১১ ও ১২ মে।

১৪ মে  প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে অর্থমন্ত্রীর ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রাক-বাজেট আলোচনা।