প্রবৃদ্ধি অর্জনে সংশয় রেখে নতুন মুদ্রানীতি

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে প্রক্ষেপিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে সংশয় রেখেই দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2015, 02:39 PM
Updated : 29 Jan 2015, 02:56 PM

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনায় অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে।

বৃহস্পতিবার ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে এই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন গভর্নর আতিউর রহমান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমদানি প্রবৃদ্ধি গত দুবছরের মন্থরতা কাটিয়ে উঠেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও উৎপাদন উপকরণের আমদানি বাড়ায় লেনদেনের ভারসাম্যের চলতি খাত উদ্বৃত্ত থেকে ঘাটতিতে ফিরেছে।

“বিনিয়োগ ও উৎপাদন কর্মকাণ্ডে গতি আসায় চলতি অর্থবছরের জন্যে প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল তা অতিক্রম করার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত বিঘ্নের পুনরাবির্ভাব এই প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনায় অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে।”

জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজেটে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

গভর্নর বলেন, “নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, ইতিবাচক রিজার্ভ, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীল বিনিময় হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। অবকাঠামো ও জ্বালানিতে প্রয়োজনীয় নজর দেওয়া সম্ভব হলে এবং দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করলে সরকারের নেওয়া প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

“বিপর্যয় মোকাবেলা করে আমাদের অর্থনীতির ঘুরে দাড়ানোর ক্ষমতা বা রিজিলিয়েন্স সুবিদিত হলেও প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের ধারা সুরক্ষার স্বার্থে বিরাজমান সংকট অবস্থা থেকে ত্বরিত উত্তরণ অতীব জরুরি। আশা করছি, দেশে শান্তি ও সুস্থিতি ফিরে আসবে এবং আমরা মুদ্রানীতির প্রথমার্ধে প্রক্ষেপিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবো।”

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি পরিমিতির জন্যে প্রয়োজনীয় সংযত ও সতর্ক মুদ্রানীতি ভঙ্গির শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের উন্নয়ন কৌশলের সমর্থনে দেশের আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন যোগানে সচেষ্ট রয়েছে।

“বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি এখনো ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকা, গড় মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় থাকা এবং চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত বৈরি প্রভাবের প্রেক্ষাপটে অর্থবছরের দ্বিতীয়য়ার্ধে মুদ্রানীতিতে নতুন কোনো শিথিলতা বা কঠোরতা না এনে আগেকার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হচ্ছে।”

নতুন মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ডিসেম্বর শেষে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ।  

আগামী ছয় মাসে ব্যাপক মুদ্রা যোগানে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রিজার্ভ মুদ্রা যোগান নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হলেও আগামী ছয় মাসে ব্যাংকিং খাতের ঋণপ্রবাহ বাড়বে বলেই ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি  ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে, যা আগের ছয় মাসে ধরা ছিল ১৪ শতাংশ।

এবারের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রবৃদ্ধি উল্লেখ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

গভর্নর তার বক্তব্যে বলেছেন, বেসরকারি খাতের উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক অর্থায়ন ব্যবহারের সুযোগও উন্মুক্ত থাকছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, নভেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ।

নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমানো ও স্প্রেড কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখে ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াতে চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বড় ঋণ খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালার অনুমোদন দিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, সারা পৃথিবীতে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এ উদ্যোগ নেয়নি। এ ব্যবস্থা সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।

“পাশাপাশি যারা ভালো ঋণগ্রহীতা তাদের জন্যও আমরা একটি নীতিমালা করছি। ইতিমধ্যে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে এজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা ভালো করছে, নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে তাদেরকে কিভাবে ‘রিবেট’ দেওয়া যায় সেই নীতিমালা করা হচ্ছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার‌্যালয়ে জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম, এস কে সুর চৌধূরী, নাজনীন সুলতানা, চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট এডভাইজার আল্লাহ মালিক কাজেমী ও প্রধান অর্থনীতিবিদ রিরূপাক্ষ পালসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।