এ নিয়ে তিন বার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ালো। প্রতি মাসে ৩ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ছাড়ায় চলতি বছরের ৭ অগাস্ট। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে যায়।
৮ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর বিল পরিশোধের আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করে।
৫ নভেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ আবার ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
সোমবার দিন শেষে রিজার্ভ ২২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে টাকার বিপরীতে ডলার কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। সে কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে।”
চলতি ডিসেম্বর মাসের ১২ দিনে (১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত) প্রবাসীরা ৫৬ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি।
নভেম্বর মাসে ১১৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ১১ শতাংশ।
ইপিবির (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো) তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। জুলাই-নভেম্বর সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ শতাংশ।
অন্যদিকে অক্টোবর পর্যন্ত হিসাবে অর্থ্যাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৫ শতাংশ। নভেম্বরের আমদানি ব্যয়ের তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দুই মাস পর পর আকুর বিল পরিশোধ করা হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের আকুর বিল জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করা হবে।
তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তা ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সে কারণে টাকার বিপরীতে ডলার খানিকটা শক্তিশালী হয়েছে।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত দেড় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ২২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে।
সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৭ টাকা ৮৮ পয়সা।
এক মাসে আগে এই বিনিময় হার ছিল ৭৭ টাকা ৪০ পয়সা।
গত দুই দিন ডলারের দর একই ছিল জানিয়ে ছাইদুর রহমান বলেন, আমদানি বাড়ার পরও রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরে রয়েছে। রেমিটেন্স ও রপ্তানি বাড়ছে।
‘সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই’ জানিয়ে তিনি বলেন, “ডলারের চাহিদা বাড়ায় গত নভেম্বর মাসে আমরা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) বাজারে ৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছি। চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রি করেছি ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
তবে গত কয়েকদিন চাহিদা না থাকায় বাজারে ডলার ছাড়া হয়নি বলে জানান তিনি।