গত অর্থবছরের জুন শেষে সর্বশেষ ত্রৈমাসিকে এসে খেলাপি ঋণ আগের ত্রৈমাসিকের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে বিশেষায়িত ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অবস্থান।
খেলাপি ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের মার্চ ত্রৈমাসিকে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪৮ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। জুন ত্রৈমাসিক শেষে এর সঙ্গে আরো যোগ হয়েছে ৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকা।
গত অর্থছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল চার লাখ ৭৭ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব বিবেচনায় নিয়ে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কৃষি ও শিল্প খাতের ঋণ পুনঃতফসিলের শর্ত শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ঋণ পুনঃতফসিলের শর্তেও শিথিলতা আনে সংস্থাটি।
ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত ১৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের (এককালীন নগদ জমা) পরিবর্তে ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ ডাউন্ট পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ নবায়ন করার সুযোগ পান, যা গত ৩০ জুন থেকে প্রত্যাহার করে নেয় হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা কমে ৪০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকায় নেমে আসে। চলতি বছরের মার্চ শেষে তা আবারো বেড়ে ৪৮ হাজার ১৭২ কোটি টাকায় উঠে। সর্বশেষ জুন ত্রৈমাসিকে তা আরো বেড়ে ৫১ হাজার কোটি টাকা হয়।
এই ৫১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের রয়েছে ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা, যা এই ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ২৩.২৩ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের স্থিতি ১১ হাজার ৫১ কোটি টাকা, যা এখাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৩৩.১২ শতাংশ।
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা এখাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৫.৭০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৪২২ কোটি টাকা, যা এখাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৬.১৯ শতাংশ।
খেলাপি বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে সঠিক লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাছাড়া এ ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও অনেক বেশি। যে কারণে ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না।”
গত বছরের শেষদিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ ছিলো ঋণ পুনঃতফসিল সংক্রান্ত নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা। ব্যাংক খাতে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণের কথা বলে ২০১২ সালের জুন মাসে ঋণ শ্রেণিকরণ ও পুনঃতফসিল এবং প্রভিশনের নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর ফলে ঋণ শ্রেণিকরণে যেমন কড়াকড়ি আরোপ করা হয় তেমনি পুনঃতফসিলের সুযোগ কমে যায়। এর পাশাপাশি খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের প্রভিশন রাখার হারও বেড়ে যায়।