চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে গত অর্থবছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২ শতাংশের বেশি।
অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুতে বহির্বিশ্বে সমালোচনার মধ্যেও গত বছর রপ্তানি আয় তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি ছিল।
রপ্তানি আয়ের নেতিবাচক ধারায় দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম হতাশা প্রকাশ করলেও অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত এক মাসের তথ্যে বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২৯৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার আয় করেছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩২০ কোটি (৩৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার।এর মধ্যে জুলাই মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।
“আমরা আমাদের কারখানায় ৫/৬ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দেই। তারপরও ধর্মঘট ডাকা হয়, কারখানা ভাংচুর করা হয়, আগুন দেয়া হয়।”
এই ‘ষড়যন্ত্রের’ কারণে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ক্রেতাদের আস্থা কমে যাওয়ায় রপ্তানি আয়ে হোঁচট খেয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, জুলাইয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে ২৫১ কোটি ৭৯ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ১৩০ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি।
তবে উভেন পোশাক রপ্তানি ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ কমে এবার জুলাইয়ে আয় হয়েছে ১২১ কোটি ডলার।
বিজিএমইএ সভাপতি মনে করেন, জুলাইয়ের পর অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে মাসেও রপ্তানি আয় কমবে।
“এর আগে কখনোই জুলাই মাসে রপ্তানি আয় কমেনি। বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণেই এবার নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি দিয়ে অর্থবছর শুরু হল। আমরা হতাশ।”
‘ষড়যন্ত্রের’ বিষয়ে জানতে চাইলে তোবা গ্রুপের সাম্প্রতিক ঘটনার কথা তুলে ধরে আতিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা যখন তোবার শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিচ্ছি, তখন শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু অনশনের নামে বিদেশিদের কাছে আমাদের শিল্প নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। এতেই প্রমাণ হয়, আমাদের শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।”
জুলাই মাসে তৈরি পোশাকের মতো পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ২৪ শতাংশ। কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ৩০ শতাংশ। সিরামিক রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশ।
তবে এই মাসে হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ৭ শতাংশ। এছাড়া ওষুধ রপ্তানি ৩১ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য ১৩ শতাংশ এবং সিরামিক রপ্তানি ১২ শতাংশ বেড়েছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক মাসের তথ্য দিয়ে সার্বিক বিষয় বিচার করলে চলবে না। যে কোনো কারণে এক মাসে বা দুই মাসে রপ্তানি আয়ে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হতেই পারে, পরের মাসগুলোতে হয়ত বাড়বে।”
‘ষড়যন্ত্রের কারণে রপ্তানি কমেছে’- বিজিএমইএ সভাপতির এ বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে অর্থনীতির এই গবেষক বলেন, “গত অর্থবছরে নানা ঝামেলা সত্ত্বেও কিন্তু ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।”
গত অর্থবছরে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ মোট ৩ হাজার ১৮ কোটি (৩০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করে।