হরতাল-অবরোধে ক্ষতি ১১ হাজার কোটি টাকা: বিশ্ব ব্যাংক

গেল বছরের শেষভাগে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতির একটি হিসাব কষে এই অঙ্ক ১১ হাজার কোটি টাকা দেখিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2014, 05:58 AM
Updated : 9 April 2014, 12:49 PM

এই ক্ষতির কারণে চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে বলেও আভাস সংস্থাটির। তবে তারা মনে করছে, এত ক্ষতির পরও তা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি।

বুধবার ঢাকায় ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদন প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতির চালচিত্র বিশ্লেষণ করে বিশ্ব ব্যাংক সার্বিক বিষয় ইতিবাচক বললেও বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “চলতি অর্থবছরে সবমিলিয়ে ৪৫ দিন হরতাল-অবরোধ হয়েছে।

“এই ৪৫ দিনে যে আয় কম হয়েছে- সে হিসাব করেই আমরা দেখেছি, ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।”

ডলারের এই অঙ্ককে বর্তমান বাজারে টাকায় রূপান্তর করলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ হাজার কোটি টাকা।

“এটা মূলত উৎপাদনের ক্ষতি। সব খাতের উৎপাদনের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটাই এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে,” বলেন জাহিদ।

তাদের হিসাবে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেবাখাতে ৮৬ শতাংশ। শিল্প খাতে ক্ষতির হার ১১ শতাংশ, কৃষিতে ৩ শতাংশ।

বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি গত ডিসেম্বরে বলেছিল, সংঘাতের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ভোটের আগে রাজনৈতিক মতবিরোধকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের শেষ কয়েকমাসে হরতাল-অবরোধের কারণে প্রবৃদ্ধি যা ধরা হয়েছিল, তা অর্জিত হবে না বলে স্বীকার করে নেয় সরকারও।

চলতি বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছিল, যা এখন ৬ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

তবে তা-ও অর্জিত হবে না বলে ধারণা করছে বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা। এডিবি বলছে, প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। আইএমএফ  বলছে, এই অঙ্ক ৬ এর নিচে নেমে আসবে।

গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ব ব্যাংক ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আভাস দিলেও এখন তা থেকে আরো কমিয়ে ধরেছে। 

জাহিদ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতির কারণেই প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে।

রেমিটেন্স প্রবাহ হ্রাস এবং রপ্তানি আয়ের সম্ভাব্য ধীরগতিকে প্রবৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।

“তবে এই ৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রলয়ঙ্করী হ্রাস নয়; আকাশ ভেঙেও পড়ছে না। এত কিছুর পরও এই প্রবৃদ্ধি যদি অর্জিত হয়, তাহলে আমি সেটাকে সন্তোষজনকই বলব।”

বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে প্রতিবেশীদের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ছাড়া অন্য দেশগুলোর তুলনায় এই প্রবৃদ্ধির হার বেশি।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

জাহিদ বলেন, “বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে যেহেতু ৬ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়ে আসছে, সে কারণে এটা কম মনে হতে পারে। কিন্তু পাশের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এটি সন্তোষজনক বলে বিশ্ব ব্যাংক মনে করে।”

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ভারতে ৪ দশমিক ৮, নেপালে ৩ দশমিক ৮, পাকিস্তানে ৩ দশমিক ৪, শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৪০ অর্জিত হওয়ার আভাস রয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের।

এডিবির মতো বিশ্ব ব্যাংকও মনে করে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবার কমলেও আগামীতে বাড়বে।

তবে তার পূর্বশর্ত হিসেবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের কথা বলেছে তারা।

ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না বাড়ায় হতাশার কথা জানান জাহিদ হোসেন। তবে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের প্রশংসা করেন তিনি।

“বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন করতে হবে। এ কথা ঠিক যে ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। তবে এখন সে পথ থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।”

বিতর্কিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বদলে বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরামর্শ দেন বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ।  

সরকারকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “গ্যাসের সঙ্কট আছে। সাশ্রয়ী ব্যবহার করতে হবে। মূল্য বৃদ্ধি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক অঙ্কের ঘরে অবস্থান করা এই হার পাশের দেশগুলোর তুলনায় এখনো বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।